কুমিল্লা সিটি ভোট: প্রচারের সঙ্গে তুঙ্গে বাগযুদ্ধ

'কৌশলে' একে অন্যের বিরুদ্ধে করছেন বিভিন্ন অভিযোগ।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2024, 04:20 PM
Updated : 28 Feb 2024, 04:20 PM

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও `বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত’ দুইজন প্রার্থী হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুজনের কথার লড়াই জমে উঠেছে; `কৌশলে’ একে অন্যের বিরুদ্ধে করছেন বিভিন্ন অভিযোগ।

বর্তমানে মেয়র পদের চার প্রার্থী দিনরাত এক করে চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে। নিজেদের পক্ষে ভোট টানতে দিচ্ছেন হরেক প্রতিশ্রুতি। সব মিলিয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ।

বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীর মধ্যে ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীকের প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও কুমিল্লা সিটির দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বুধবার দিনভর নগরীর শাসনগাছা ডাকবাংলো এলাকা ও স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করছেন।

সাক্কু নিজের কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, “আমি মেয়র থাকাকালে অনেক কাজ করেছি। পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা, বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করে অর্থ বরাদ্দ করেছিলাম। গেল নির্বাচনে আমাকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছে। এবার মেয়র নির্বাচন হলে আমার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চাই।

“টানা দুইবার নির্বাচিত হয়ে আমি নতুন সিটি কপোরেশনকে সাজিয়েছি। আমি আধুনিক শহর গড়তে গত মেয়াদের শেষ সময়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সহযোগিতায় বড় বাজেট এনেছিলাম। এগুলো তারা কি করেছেন, আমি জানি না।”

বিএনপিপন্থি আরেক প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারও এদিন নগরীর চকবাজার বাস টার্মিনাল ও শাসনগাছাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।

‘ঘোড়া’ প্রতীকের এ প্রার্থী বলেন, “সরকার যে ডামি নির্বাচন করেছে জনগণ তা বর্জন করেছে। কিন্তু এখন বিএনপি আবার ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। তাই এই নির্বাচনে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে মাঠে রয়েছে। তারা আবার ভোটের মাঠে আসতে শুরু করেছে।

“জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন আরও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। কিন্তু কী হচ্ছে? জনগণ মাঠে নামলে আমাকে শোকজ করে। এতে জনগণকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন কমিশন আবার আস্থা হারাবে।”

এ প্রার্থীর অভিযোগ, “বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে এক প্রার্থীর লিফলেট ও পোস্টার লাগানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারা জনগণের আস্থা পাবে না।”

আওয়ামী লীগের দুইজনের মধ্যে বাস প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা প্রচার চালিয়েছেন কোটবাড়ি চাঙ্গিনী, উত্তর চাঙ্গিনী, ময়নামতি হাউজিং, গঙ্গামতি এলাকায়। সেখানে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেছেন।

সূচনা কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা।

প্রচরে সূচনা বলেন, “আমার মেধা ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কুমিল্লার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। তরুণদের জন্য আমার বার্তা হচ্ছে, তাদের প্রথম ভোটটা অবশ্যই যেন উন্নয়নের পক্ষে বাস মার্কায় হয়। যেখানে যাচ্ছি, নারী ভোটাররা অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।

“আমি একজন চিকিৎসক। আমি নির্বাচিত হলে নারীদের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দেব। নারীদের কথা শোনার জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করবো।”

কুমিল্লার উন্নয়নের নতুন অধ্যায় সূচনা করতে চান জানিয়ে সূচনা বলেন, “বিগত সময়ে আমার বাবার পাশে থেকে জেলার মানুষের জন্য কাজ করেছি। এছাড়া সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমেও আমার সারা কুমিল্লায় বিচরণ রয়েছে। বিগত সিটি নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি কাজ করেছি।

“ফলে কুমিল্লা মানুষের সমস্যাগুলি আমার জানা আছে। নির্বাচিত হলে একটা পরিকল্পিক সুন্দর নগরী গড়ে তুলব। অবশ্যই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম নগরীর চকবাজার ফয়সাল হসপিটালের মোড় থেকে, ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, পুলিশ লাইনস, শাসনগাছা স্টেশন রোড হয়ে অশোকতলা, রানীর বীজার ও কান্দিরপাড় পূবালীচত্বর পর্যন্ত প্রচার চালান।

ভোটারদের কাছে তার ‘হাতি’ প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এছাড়া নগরীর শ্রীবল্লভপুর, দৈয়ারা, বিশ্বরোডসহ ২২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় ৪০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একটিবারের মতো সুযোগ চেয়ে হাতি প্রতীকের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন তানিম।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে ঘিরে একটি লুটেরাজ শ্রেণি তৈরি হয়েছে অভিযোগ করে তানিম বলেন, “তারা সিটির উন্নয়ন না করে লুটপাট করেছেন। পরিকল্পিত নগরী গড়ার কথা বলে অনেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েও নগরবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি কথায় নয়, মেয়র নির্বাচিত হলে পরিকল্পিতভাবে নগরকে সাজাবো।”

কর্মীদের মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তানিম।

তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত দুইবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেছি। ২৭ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আমার বেশ কয়েকজন কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। আমার পোস্টার লাগানোর আধা ঘণ্টার মধ্যে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।”

“পোস্টার ছেঁড়ার রাজনীতি করতেছে অনেকে, তারা ভোট খোঁজে না। ভোট না খুঁজে, কারচুপি করে নির্বাচনে বিজয়ী হতে চায়। তারা জানে না ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি করার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও কোন অনিয়ম হলে কুমিল্লার মানুষ তাদেরকে প্রতিহত করবে।”

২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটির যাত্রার পর ২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খানকে হারিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করেন তিনি।

২০২২ সালের ১৫ জুন তৃতীয় নির্বাচনে আরফানুল হক রিফাত মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।

আগামী ৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে কুমিল্লা সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন:

Also Read: কুমিল্লা সিটি ভোট: সম্পদে এগিয়ে সাক্কু, মামলা বেশি কায়সারের

‘স্মার্ট কুমিল্লা’ উপহার দিতে চান সূচনা, ইভিএমে ‘বিশ্বাস নেই’ সাক্কুর

কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: চার 'শক্তিশালী' প্রার্থীতে ভোট জমার ইঙ্গিত

কুমিল্লা উপনির্বাচন: মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন বাহারকন্যা সূচনা

কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: সাক্কু-কায়সার ভোটের মাঠে

ময়মনসিংহ-কুমিল্লা সিটি ভোট: মনোনয়ন জমা ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত

ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটিতে ভোট ৯ মার্চ

কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: চার 'শক্তিশালী' প্রার্থীতে ভোট জমার ইঙ্গিত

কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: সাক্কু-কায়সার ভোটের মাঠে