ঢাকায় হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে দাবি জানিয়েছে পাহাড়ের সংগঠনগুলো।
Published : 15 Jan 2025, 08:10 PM
ঢাকায় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচিতে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
বুধবার বিকালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক থুইলাপ্রু মারমা স্বাক্ষরিত এই প্রেস বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে তারা বলেন, “ঢাকায় এনসিটিবির সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে পাহাড়িসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার শিক্ষার্থী-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করতে পারে? আমরা মনে করি এই ঘটনায় ‘উগ্রসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী’ গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমরা এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করছি।”
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ঢাকার মত জায়গায় এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত হামলা। মঙ্গলবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা হুমকি দিয়ে আসছে এবং বুধবার সকাল থেকে তারা ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেঁধে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিল।
‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে মিছিলটি এনসিটিবি ভবনের সমানে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করা হয়; এতে ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান পিসিপির নেতারা।
রাঙামাটিতে পাহাড়ের ৩ ছাত্র-নারী সংগঠনের প্রতিবাদ
পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ ও পুনর্বহালের দাবিতে ‘সংক্ষুব্দ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র কর্মসূচিতে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ সংগঠনের সদস্যদের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পাহাড়ের তিনটি ছাত্র ও নারী সংগঠন।
বুধবার বিকালে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো আলাদা বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
বিবৃতি দেওয়া তিন সংগঠন হল- সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সহযোগী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) এবং প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সহযোগী সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “১২ জানুয়ারি নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ দাবির মুখে বাছ-বিচার ছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কতৃর্পক্ষ ‘আদিবাসী’ শব্দসম্বলিত গ্রাফিতি বাতিল করে।
“কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ বুধবার এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সমানে থেকে মিছিল নিয়ে এনসিটিবি কার্যালয়ে অভিমুখে রাওনা হয় তারা।
“মিছিলটি এসসিটিবি কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা ‘উগ্র-মৌলবাদী ও সাম্পদায়িক গোষ্ঠী’ পুলিশের উপস্থিতিতে ক্রিকেট স্ট্যাম্প, চাপাতি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ১৭ জন আহত হন।
“এদের মধ্যে আদিবাসী নেতা অনন্ত বিকাশ ধামাই, আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি চিরান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি রেং ইয়ং ম্রো, সাংবাদিক জুয়েল মারাক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা, বাগাছাসের ছাত্রনেতা ডন যেত্রা গুরুত্বর আহত হন। হামলায় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল।”
হামলাকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশক কোনও ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
আদিবাসীদের ওপর এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
অবিলম্বে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি পুনর্বহাল, ‘আদিবাসীদের’ সঠিক ইতিহাস ও পরিচিতি তুলে ধরাসহ সাংবিধানিকভাবে ‘আদিবাসীদের’ স্বীকৃতি দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনের নেতারা।
অন্যদিকে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, “ঢাকায় এনসিটিবির সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে একটি উগ্রসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন সংগঠন কীভাবে পাহাড়িসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার শিক্ষার্থী-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করতে পারে?
“আমরা মনে করি এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সেটলারদের’ কিছু শিক্ষার্থী ও তাদের পেছনে উগ্রসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমরা এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করছি।”
হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে দাবি জানিয়েছেন ইউপিডিএফের পিসিপি নেতারা।
আরও পড়ুন
বইয়ে 'আদিবাসী চিত্রকর্ম': পক্ষের লোকজনকে পেটাল বিরোধীরা
‘আদিবাসী চিত্রকর্ম’: একইদিনে এনসিটিবি ঘেরাওয়ের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের
পাঠ্যবই থেকে 'আদিবাসী চিত্রকর্ম' বাতিলের প্রতিবাদ চিত্রকর্মেই