আমার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে কেউ সঠিক তথ্য দেয়নি: জাহাঙ্গীর

“প্রশাসন দিয়ে, পেশি শক্তি দিয়ে কর্মীদের বাসায় দিন-রাতে যাচ্ছে, থ্রেট দিচ্ছে, মোবাইল করছে; এটাকে ভোটের পরিবেশ বলে না।”

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2023, 02:55 PM
Updated : 16 May 2023, 02:55 PM

আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করলেও ‘সত্য তথ্যটি’ দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছাতে পারেননি বলে আক্ষেপ করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে দলের কাছে শুধু নালিশ করা হয়েছে।

দল থেকে বহিষ্কারের একদিন পর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দীর্ঘ তিন বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে গাজীপুরের মানুষ আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। কিন্তু একজন মানুষ আমার বিরুদ্ধে বলেছে। দলের নেতারা আমাকে বলেছেন, তুমি কোনো অন্যায় করনি। তোমার জিনিসটা সমাধান হয়ে যাবে, আমরা বলব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেউ সঠিক খবরটি পৌঁছায়নি এবং উপস্থাপন করেননি।

অবিচার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দল ও মেয়র পদ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের কারও আমার কথা শুনার দুই মিনিট সময় হয়নি; বা তাদের কাছে আমাকে পৌঁছানোর কোনো পথ তৈরি করে রাখা হয়নি। শুধু আমার বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছে।“

‘বিপদে’ পড়ার পর আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আলোচনা করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের অফিসে, ঘরের দরজায় গিয়েছেন কিন্তু কেউ সুযোগ দেয়নি বলেও আক্ষেপ করেন জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেন, “আমাকে সত্য তথ্যটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। পার্টির কর্মীরা যদি কেউ বিপদে পড়েন তবে স্থানীয়, জাতীয় বা কেন্দ্রীয় নেতারা তা নিয়ে আলোচনা করেন, সমাধান করেন। কিন্তু তা তারা করেননি।”

প্রধানমন্ত্রী ‘সত্যটা’ জানুক- কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি এই আহ্বান রাখেন জাহাঙ্গীর। তিনি দলে একজন সাধারণ সমর্থক হিসেবে থাকতে চান বলেও জানান।

মেয়র থাকাকালে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগে জাহাঙ্গীরের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও। এক বছরের বেশি সময় পর ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।

এরপর জাহাঙ্গীর মেয়র পদে ফের দলের মনোনয়ন চান। কিন্তু আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় আজমত উল্লা খানকে। কিন্তু জাহাঙ্গীর নিজে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। শুধু তাই নয়, মায়ের নামেও মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। ঋণখেলাপীর অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।

এরপর সোমবার তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কথা জানায় দল।

মঙ্গলবার জাহাঙ্গীর যখন গাজীপুর মহানগরের ছয়দানা (মালেকের বাড়ি) এলাকার বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন তার পাশে মেয়র পদপ্রার্থী মা জায়েদা খাতুনও (টেবিল ঘড়ি প্রতীক) উপস্থিত ছিলেন।

মায়ের নির্বাচনী প্রচারের জন্য কাজ করা জাহাঙ্গীর নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বলেন, “আজকে গাজীপুরে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দলে আমার কোনো পদ নেই। তারপরও লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছে। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “প্রশাসন দিয়ে, পেশি শক্তি দিয়ে কর্মীদের বাসায় দিন-রাতে যাচ্ছে, থ্রেট দিচ্ছে, মোবাইল করছে। এটাকে ভোটের পরিবেশ বলে না।”

বরখাস্ত মেয়র বলেন, “দীর্ঘ ১৮ মাস চোখের পানি ফেলেছি, আজ থেকে আর চোখের পানি ফেলব না। ক্ষমতার জন্য না, পদের জন্য না। আমার বিরুদ্ধে যে অবিচার করা হয়েছে সেই সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমি আমার মায়ের সঙ্গে রয়েছি।“

“আমার মা আমাকে বলেছেন, তোমার ওপরে অবিচার করা হয়েছে, গাজীপুরে ১২ লাখ ভোটার এবং ৪০ লাখ মানুষের ওপর অবিচার করা হয়েছে।”

এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে তার কোনো শঙ্কা আছে কিনা?

জবাবে জাহাঙ্গীর বলেন, “ইভিএম ভালো না খারাপ সেটা আগামী ২৫ মে নির্বাচনের দিন দেখতে পারবেন। তখন আপানারই বলবেন ভালো না খারাপ।”

Also Read: গাজীপুরের জাহাঙ্গীর ফের আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত

Also Read: গাজীপুরের জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিল আওয়ামী লীগ

Also Read: মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ‘গুমের শঙ্কায়’ জাহাঙ্গীর

Also Read: এবার জাহাঙ্গীরের প্রতি কঠোর হবে আওয়ামী লীগ?

Also Read: গাজীপুরে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে ‘মাথা ঘামাচ্ছে না’ আওয়ামী লীগ: মায়া

Also Read: ভবিষ্যতে জাহাঙ্গীরের ‘ক্ষমা মিলবে না’, এমন ব্যবস্থার সুপারিশ