ভবিষ্যতে জাহাঙ্গীরের ‘ক্ষমা মিলবে না’, এমন ব্যবস্থার সুপারিশ

“আজকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আমরা মত দিয়েছি কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দেওয়ার জন্য। এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন তাকে আর ক্ষমা করার কোনো সুযোগ না থাকে,” বলেন আওয়ামী লীগ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 11:11 AM
Updated : 14 May 2023, 11:11 AM

শৃঙ্খলা মেনে চলার অঙ্গীকার করে দলে ফেরার চার মাস যেতে না যেতেই বিদ্রোহ করা গাজীপুরের নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে আর সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রকে ‘কঠোর শাস্তির’ আওতায় আনার সুপারিশ করেছে ক্ষমতাসীন দলের সম্পাদকমণ্ডলী। তারা চায়, এমন ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যেন আর ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ না হয়।

রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয় বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, সেটি আগেই জানিয়েছেন দলটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

গত ৪ মে গাজীপুর গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের এক বৈঠকে তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীর আলম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার পরও শেখ হাসিনা তাকে একবার সাধারণ ক্ষমা করেছেন। ক্ষমা চেয়ে আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, বাকি জীবনে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজ করবেন না। সেটির ব্যত্যয় ঘটিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ফের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, এ অপরাধ জাহাঙ্গীর আলমকে শাস্তি পেতেই হবে।”

সে সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ছিলেন বিদেশে। তিনি এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন। এ কারণেই আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে।

বাহাউদ্দিন নাছিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাঙ্গীরকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করা হয়েছে। তিনি আর কোনোদিন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবেন না বলে বলেছেন। কিন্তু এবারও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েছেন।

“আজকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আমরা মত দিয়েছি কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দেওয়ার জন্য। এমন শাস্তি দিতে হবে যেন তাকে আর ক্ষমা করার কোনো সুযোগ না থাকে।”

এই সুপারিশর পর কী হবে, সেটিও জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, “আমরা তো আর সিদ্ধান্ত দিতে পারি না, আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে সুপারিশ করতে পারি, সেটাই করেছি। সভার সবাই এই মত দিয়েছেন।”

ক্ষমা পেয়ে দলে ফিরেই বিদ্রোহী জাহাঙ্গীর

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনেই জাহাঙ্গীর ছিলেন বিদ্রোহী। আওয়ামী লীগ আজমতকে বেছে নিলেও প্রার্থী হন তিনি। অনুরোধেও প্রত্যাহার করেননি তা।

পরে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। আর প্রচারের শেষ দিকে আজমতের জনসভায় অংশ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার প্রতি সমর্থন জানান। তবে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকায় দলের প্রার্থী হেরে যান এক লাখেরও বেশি ভোটে।

সেই নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা শেষ পর্যন্ত আজমতের বিপক্ষে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হয়। আর ভোটের পর জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ছিল।’ 

২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে দলীয় প্রতীক নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে ২ লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি।

সেই নির্বাচনের পর থেকে জনপদে জাহাঙ্গীরের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছিল। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মেয়রের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। তারপর বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও।

ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।

সেই ‘ক্ষমা’র শর্ত ভঙ্গ করে চার মাস যেতে না যেতেই দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বসেন জাহাঙ্গীর। নিজের সঙ্গে মায়ের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, তাকে ‘গুম করাও হতে পারে’।

তবে একটি পোশাক কারখানায় ১০১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। উচ্চ আদালতও তার আবেদন নাকচ করেছে।

জাহাঙ্গীর এখন তার গৃহিনী মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত। তার মায়ের দাবি, জাহাঙ্গীরের প্রতি ‘অবিচার’ হয়েছে। আর সে জন্য জনগণ তাকে ভোট দেবে।

জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সুপারিশ করতে দলের এই সভায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী।

প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তিদাশ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, উপপ্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপদপ্তর বিষয়ক সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত সুপারিশ আকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের জানান ওবায়দুল কাদের। 

আরও পড়ুন

Also Read: ‘বিদ্রোহী’ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ফের ব্যবস্থা: মির্জা আজম

Also Read: ছেলের জন্য লড়ব, জিতবও: জাহাঙ্গীরের মা

Also Read: ‘টেবিল ঘড়ি’ নিয়ে সামনে মা জায়েদা, পেছনে জাহাঙ্গীর