“ক্ষমা চেয়ে জাহাঙ্গীর আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, বাকি জীবনে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজ করবেন না।”
Published : 05 May 2023, 03:21 PM
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আবার ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের আমতলী ছুটি রিসোর্টে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ কর্মীসভায় যোগ দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
এবার জাহাঙ্গীরের প্রতি কঠোর হবে আওয়ামী লীগ?
গাজীপুরের জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিল আওয়ামী লীগ
আজম বলেন, “জাহাঙ্গীর আলম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার পরও শেখ হাসিনা তাকে একবার সাধারণ ক্ষমা করেছেন। ক্ষমা চেয়ে আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, বাকি জীবনে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজ করবেন না। সেটির ব্যত্যয় ঘটিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ফের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, এ অপরাধ জাহাঙ্গীর আলমকে শাস্তি পেতেই হবে।”
ব্যবস্থা নিতে সবাই ‘একমত’
মির্জা আজম জানান, জাহাঙ্গীরের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও গাজীপুরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
“সবাই একমত, নেত্রী দেশে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে অথবা প্রধানমন্ত্রী জানাবেন, তিনি কখন কী করবেন।”
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে কারা কাজ করছেন না, সেটিও নজরদারিতে রাখার কথা বলেন দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।
তিনি বলেন, “যেসব কাউন্সিলর শুধু নিজেদের ভোট চাইবে, নৌকার ভোট চাইবে না, তারা ওয়ার্ড, থানা, মহানগর কোথাও কোনো পদ পাবে না।”
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষমা পেয়ে দলে ফিরেই বিদ্রোহী জাহাঙ্গীর
২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে দলীয় প্রতীক নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে ২ লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি।
সেই নির্বাচনের পর থেকে রাজধানী লাগোয়া এই জনপদে জাহাঙ্গীরের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছিল। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মেয়রের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। তারপর বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও।
ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।
সেই ‘ক্ষমা’র শর্ত ভঙ্গ করে চার মাস যেতে না যেতেই দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বসেন জাহাঙ্গীর। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তাকে গুম করাও হতে পারে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘আস্থা থাকলে’ জাহাঙ্গীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলেই তার বিশ্বাস। আর সেজন্য তিনি ৮ মে পর্যন্ত দেখার কথাও বলেছিলেন।
মনোনয়নপত্র জমা দিলেও জাহাঙ্গীরের ভোটে অংশগ্রহণের আপাতত কোনো সুযোগ নেই। একটি পোশাক কারখানায় ১০১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনে আপিলেও টেকেনি সেটি।
ঋণ অন্যের কারখানার, প্রার্থিতা বাতিল ‘জামিনদার’ জাহাঙ্গীরের
জাহাঙ্গীর দমে না গিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আবার তার মা জায়েদা খাতুনের নামেও জমা দিয়েছেন আরও একটি মনোনয়নপত্র। সেটি বৈধও ঘোষণা হয়েছে।
‘গুমের’ সেই বক্তব্য নিয়েও নাখোশ ক্ষমতাসীন দল
আজমত উল্লাহ বলেন, “জাহাঙ্গীর শুধু প্রার্থী হলেও ৯ তারিখ পর্যন্ত তাকে মাফ করতাম। ভাবতাম তিনি প্রার্থী হয়েছেন, পরে প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু তিনি মিডিয়ায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা শুধু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেননি, বিরাট অপরাধ করে ফেলেছেন। এই অপরাধের শাস্তি তাকে অবশ্যই পেতে হবে।”
গত ২৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, “পাঁচ বছরের একটা নির্বাচিত মেয়রকে তিন বছর পর মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগে একটা চিঠি দিয়ে এ রকম করেছে। হয়ত কালকের পরে আমার পায়ে শিকল পড়তে পারে। আমাকে অ্যারেস্ট করতে পারে, আমাকে গুম করতে পারে।
“আমি দেশবাসী এবং নগরবাসীকে বলে যাই, যদি আমার মৃত্যু হয়, আপনারা বিশ্বাস করেন, আমার শহর রক্ষা করতে গিয়ে যা যা ভালো কাজ আছে আমি করেছি।”
ফিরল ২০১৩ সালের ভোটের স্মৃতি
১০ বছর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেনের প্রথম নির্বাচনেও জাহাঙ্গীরের ভূমিকা নিয়ে ছিল প্রশ্ন।
সেই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল আজমতকে। দলের সমর্থনের প্রত্যাশী ছিলেন সে সময়ের তরুণ নেতা জাহাঙ্গীর।
দলের নির্দেশে ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি না হওয়ার পর নিখোঁজ হন জাহাঙ্গীর। ভোটের আগে আগে গাজীপুরে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে আজমতকে সমর্থন জানান তিনি।
তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যালটে তার নাম থেকে যায়।
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও সেই নির্বাচনে আজমত হারেন এক লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে।
সেই নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের সমর্থক নেতা-কর্মীদের আজমত উল্লাহর পক্ষে নামতে দেখা যায়নি। এটা তখন নৌকার পরাজয়ে ‘ভূমিকা’ রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।