গাজীপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই বহাল রইল আপিলে।
Published : 04 May 2023, 06:26 PM
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেও লাভ হল না গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে ভোট করতে ইচ্ছুক জাহাঙ্গীর আলমের।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম বিপ্লব প্রার্থী জাহাঙ্গীরের আপিল আবেদন খারিজ করে দেন।
তবে জাহাঙ্গীরের সামনে এখন আদালতে যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে। তিনি সেই পথেই যাবেন বলে জানিয়েছেন।
আদালতে যদি পক্ষে আদেশ পান, তাহলে ২৫ অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরকে।
গাজীপুরে জাহাঙ্গীর তার দল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।
গত ৩০ এপ্রিল মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা বাতিল করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।
তিনি বলেছিলেন, “উনি (জাহাঙ্গীর) একজন ঋণখেলাপি হিসেবে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। উনি একজন জামিনদাতা হিসেবে ঋণখেলাপি।”
যে ঋণের জামিনদাতা হিসেবে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা বাতিল হয়, সেই ঋণ পরিশোধের দাবি সেদিনই করেছিলেন জাহাঙ্গীর। এর পক্ষে ব্যাংকের নথিপত্র দেখিয়েছিলেন তিনি।
এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল আবেদন করেন, যে কর্তৃপক্ষের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন: জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল, মায়েরটি বৈধ
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সেই আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব রাহুল চন্দ (জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “(জাহাঙ্গীর আলমের) আপিল আবেদন না মঞ্জুর। আপিল কর্তৃপক্ষ তা জানিয়ে দিয়েছেন।”
জাহাঙ্গীরের উপস্থিতিতে এই রায় দেওয়া হয় বলে জানান রাহুল।
রিটার্নিং কর্মকর্তা যে যুক্তিতে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন, একই কারণ দেখিয়েছে আপিল কর্তৃপক্ষও। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া সিআইবি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আদেশে বলা হয়, আপিলকারী যে খেলাপি ঋণের জামিনদার, তা গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পুনঃতফসিল হয়নি এবং রিপোর্টে তার নাম থাকায় মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়েছিল। শুনানিকালে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি জানান, আপিল আবেদনকারী সিআইবির হালনাগাদকৃত তালিকা অনুযায়ী অদ্যাবধি ঋণের জামিনদাতা হিসেবে ঋণ খেলাপি মর্মে চিহ্নিত রয়েছেন। (জাহাঙ্গীরের) দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনায় বর্ণিত ঋণটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক নিয়মিতকরণের কোনো প্রমাণক পাওয়া যায়নি। সেই বিবেচনায় রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশ বৈধ মর্মেই প্রতীয়মান হয়।
আপিলে হারার পর জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি উচ্চ আদালতে যাব।”
রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাতিল করার পর পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিলেন জাহাঙ্গীর। তার মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র টিকে আছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি।
দুই বছর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা এক কটূ মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পরে মেয়র পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করে সরকার।
আমি উচ্চ আদালতে যাব।জাহাঙ্গীর আলম
গত জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীরকে ক্ষমা করে দলে ফিরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। এর পাঁচ মাসের মধ্যে দলে সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেন তিনি।
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। সেবার নানা নাটকীয়তার পর তিনি ভোটের মাঠ ছেড়েছিলেন।
সেবার আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন টঙ্গী পৌরসভার সা্বেক চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খান। প্রবীণ এই নেতা এবারও দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।