‘টেবিল ঘড়ি’ নিয়ে সামনে মা জায়েদা, পেছনে জাহাঙ্গীর

প্রতীক নিয়ে প্রচারে মায়ের সঙ্গেই থাকছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2023, 05:13 PM
Updated : 9 May 2023, 05:13 PM

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজে প্রার্থী হতে না পেরে মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছেন গতবারের বিজয়ী মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

মঙ্গলবার মাকে নিয়ে তিনি প্রথমে যান প্রতীক আনতে। এরপর যান বাবার কবরে। জিয়ারত শেষে নামেন জনসংযোগে। গাজীপুর সদর ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের নিজের এলাকা টঙ্গীতেও ভোট চান তিনি।

জনসংযোগ ও ভোটের যে প্রচারে জায়েদাকে আগে কখনও দেখা যায়নি। দৃশ্যত মায়ের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর।

নিজের ঘর এবং পরিচিতদের বাইরে এতদিন মাথা ঘামাতে না দেখা জায়েদা বলছেন, মেয়র হতে পারলে ছেলের ‘অসমাপ্ত’ কাজ শেষ করবেন তিনি।

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে যে চিত্র তার পুনরাবৃত্তি এবার। তখনও আওয়ামী লীগ বেছে নিয়েছিল আজমত উল্লা খানকে, বিদ্রোহ করেন জাহাঙ্গীর, এবারও তাই।

তবে এবার যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়ে গেছেন ২০১৮ সালে নৌকা পেয়ে মেয়র হওয়া নেতা। ২০১৩ সালে তার নাম রয়ে গিয়েছিল ব্যালট পেপারে। সেই নির্বাচনে আজমতের পরাজয়ের পর জাহাঙ্গীরের ভূমিকা নিয়ে উঠে প্রশ্ন।

এবার তার প্রার্থিতা নিয়ে শঙ্কা ছিল শুরু থেকেই। যে কারণে নিজের পাশাপাশি মায়ের নামেও জমা দেন মনোনয়নপত্র।

যাচাইবাছাইয়ে দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর আগে ২০১৯ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মধ্যে কোনাবাড়িতে কোরিয়ান মালিকানাধীন নিউটাউন নিটওয়্যার কম্পোজিট কারখানা ডে ৮৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়, তার জামিনদার ছিলেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু কোম্পানি টাকা ফেরত দেয়নি। সুদে আসলে তা ছাড়িয়েছে শত কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ নেতা দলের মনোনয়ন না পেয়ে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কিছুদিন আগে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেয় নিটওয়্যার কম্পোজিট। তবে ঋণ পুনঃতফসিল আর হয়নি।

রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও লাভ হয়নি। হাইকোর্টও বাতিল করে দেয় তার রিট আবেদন। ফলে আর সময় নষ্ট না করে মায়ের পক্ষে নেমে গেছেন তিনি।

মঙ্গলবার প্রার্থীদের মধ্য প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বেলা ১১টার দিকের প্রতীক বরাদ্দ নিতে ছেলেকে নিয়ে বঙ্গতাজ মিলনায়তনে যান জায়েদা খাতুন। প্রতীক পান টেবিল ঘড়ি।

এরপর দুপুরে তিনি ছেলেকে নিয়ে যান তার স্বামীর কবরে। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পর স্বামীর পূর্ব নিবাস কানাইয়া এলাকা থেকেই শুরু করেন প্রচার।

সাংবাদিকদের জায়েদা বলেন, “আমার সঙ্গে জনগণ রয়েছে। আমি আমার এবং ভোটের নিরাপত্তা চাই, সুষ্ঠু ভোট চাই।”

তিনি বলেন, “এই শহরের বড় সমস্যা হলো রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা। আমি জয়লাভ করলে আগে এই রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করব।”

বিকেলে মাকে নিয়ে টঙ্গী এলাকায় আসেন জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, “আমি গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তর করতে চেয়েছিলাম। সেই কাজে হাতও দিয়েছিলাম।

“আমার মায়ের নির্দেশেই এই ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা করেছিলাম। এখন মা যখন দেখেছেন কাজগুলো থেমে গেছে, তখন মা বলেছে, ‘বাবা আমি কাজগুলো করতে চাই’। এজন্য মায়ের কথাই এই শহরকে সুন্দর রাখতে মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছি।”

কেমন কাটল অন্য প্রার্থীদের প্রথম দিন

আওয়ামীলীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান প্রতীক বরাদ্দের পর জনসংযোগ করে গাজীপুর সদরের বাসন এলাকায়।

এর আগে দলের জেলা কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। পরে তেলিপাড়া এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে যুবলীগের জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

আজমত বলেন, “গাজীপুর সিটির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বৃহৎ পরিকল্পনা মোতাবেক নাগরিক সুবিধা সম্বলিত একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ সিটি করপোরেশন হিসেবে গড়ে তুলতে নৌকা প্রতীক ভোট চাই।”

নেতাকর্মীদের নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করার কথাও জানান তিনি।

এই নির্বাচনে আলোচিত আরেক চরিত্র সরকার শাহ নুর রনি হাতি প্রতীক পাওয়ার পর ৪৩ নং ওয়ার্ডের শাহ সাব মাজার জিয়ারত করেন। এরপর নিজের এলাকা টঙ্গী বাজার, মিলগেইট, ও দেওড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন।

রনি সরকার গতবার বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। বিএনপি এই নির্বাচন আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জন করলেও এই প্রার্থীর ভরসা বিএনপির কর্মী ও সমর্থকরা।

রনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই বলেছেন, তৃণমূল বিএনপি তার সঙ্গে আছে। তার চাচা হাসান সরকারের দোয়াও তার প্রতি। তিনি দলীয় নির্দেশের কারণে প্রচারে নামতে না পারলেও তার কোনো আক্ষেপ নেই।

গণসংযোগকালে এলাকায় বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলেও দাবি করলেন ‘বিএনপি পরিবার’ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া রনি। তিনি নির্বাচিত হলে নগরীকে দূষণ ও ধূলামুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

বলন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে প্রাধান্য দেব। পরে পর্যায়ক্রমে ড্রেনেজ, রাস্তা, পয়ঃনিষ্কাশন কার্যক্রম জোরদার করব।”

গত কয়েক বছর ধরে সংসদীয় আসনের বিভিন্ন উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আলোচিত হয়ে উঠা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান প্রথম দিন ভোট চান মেট্টো থানা, বাসন থানা ও কোনাবাড়ি এলাকায়।

হাতপাখা মার্কার প্রার্থী বলেন, “ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। তারা আমাকে ভোট দেয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন।”

নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। ওপরের চার প্রার্থী ছাড়া অন্যরা হলেন লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, গোলাপ ফুল নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজু আহম্মেদ এবং ঘোড়া প্রতীকে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ।

আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন।

৫৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন, সংরক্ষিত ১৯টি নারী কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন লড়াই করছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে মাঠে ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।