এই দেশে আসার পর একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম এখানকার চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও জীবনযাত্রা নিয়ে। বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে নিজেকে মানিয়ে চলবো।
Published : 08 Jun 2017, 09:34 AM
প্রথমে আমার কয়েকটি জিনিসে খুব সমস্যা হচ্ছিলো, তার মধ্যে পোশাক ছিলো অন্যতম। যেহেতু আমরা আমাদের দেশিয় পোশাক পরে অভ্যস্ত, সেজন্য কিছুটা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম কীভাবে দেশিয় পোশাক থেকে দূরে থাকবো?
যেহেতু এইখানে সবাই জিন্স ও টপস পরে, সেহেতু প্রথমেই আমার খুব সমস্যা হচ্ছিলো এবং সেই সাথে দেশিয় পোশাককেও মিস করছিলাম, বিশেষ করে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজকে।
ঈদের মৌসুম হওয়াতে টেনশন আরো দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিলো। তাছাড়া এদেশে তো আসলে ঈদের শপিং সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিলো না। ওই সময়ে বুঝতে পারছিলাম না, কীভাবে স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ থেকে ঈদের পোশাক আনাবো।
তারপর ঠিক চাঁদ রাতের দিন সে আমাকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল্ যেখানে নামার পর বুঝতে আর দেরি হলো না, ওই মুহূর্তে আমি ‘গাউছিয়া বা নিউ মার্কেটে’ আছি!
বাস থেকে নামার পর একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম, কোথা থেকে শুরু করবো হাঁটা? কারণ চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ, এবং সেই সাথে দেখতে পাচ্ছিলাম বাহারি পোশাকের সমাহার।
এই আপটন পার্ক মূলত পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত এবং এ জায়গাটি বেশি পরিচিত এশিয়ান এলাকা হিসেবে। এখানে বেশিরভাগ বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের বসবাস। ১০ পাউন্ড থেকে শুরু করে ২০০ পাউন্ডের মধ্যে সালোয়ার কামিজ, শাড়ি, লেহেঙ্গা, গাউন, সারারা, আনারকলি, জুতো এমনকি জুয়েলারি পর্যন্ত পাওয়া যায়।
শুধু তাই নয়, এমনকি বিভিন্ন কাপড়ের, যেমন-সুতি, লিলেন, জর্জেট, শিফন ও কাতানের সালওয়ার কামিজ বা শাড়ি পাওয়া যায়। দৃষ্টি কাড়ার মতো কারুকাজ করা তৈরি পোশাক ও এখানে পাওয়া যায়। যেমন- জরি, চুমকি, অ্যামব্রয়ডারি, পুঁতি, মিরর, স্টোনও পার্ল মেটেরিয়ালের কারুকাজ। এমনকি অ্যাপ্লিকের কারুকাজ করা পোশাক পাওয়া যায়।
ওহ আরেকটি কথা, সেটি হলো এদেশে প্রত্যেকটি উৎসবে সব পণ্যের উপর সেল বা ডিসকাউন্ট নির্ধারণ করা হয়, যাতে করে প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ তাদের উৎসবগুলো পালন করতে পারে আনন্দ নিয়ে। বাহ, কতো সুন্দর সিস্টেম! এ দেশে আর আমাদের দেশের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র দেখা যায়।
এবার আসুন খাবার প্রসঙ্গে। ফুসকা-চটপটি থেকে শুরু করে যত মুখরোচক খাবার আছে, যেমন-বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুরি ও কাবাব ইত্যাদি সবকিছুই এখানে পাওয়া যায়। এমনকি সাথে মিষ্টিজাতীয় খাবারও। সুতরাং সোজা বাংলা ভাষায় বলতে পারি এটি লন্ডনের গাউছিয়া।
হাতের উপর নির্ভর করে মেহেদির মূল্য। যেমন- আপনি যদি হাতের উপরে আর তালুতে কনুই পর্যন্ত করতে চান তাহলে মূল্য হবে ১০ থেকে ২০পাউন্ড। অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, এ মেহেদি স্টলগুলো নাকি প্রতি চাঁদরাতে দুপুর ২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত আয়োজন করা হয়। আমার যতদূর মনে আছে সেদিন আমি আর আমার বান্ধবী রাত ১১টা পর্যন্ত আনন্দ ও আগ্রহের সাথে পালন করলাম ঈদের আগের দিন মানে চাঁদরাতের দিন।
মজার কথা কি, এদেশে বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের সব এশিয়ানরা এ চাঁদরাতের জন্য অপেক্ষা করে। বাংলাদেশে থাকতে আমরা আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবরা মিলে আতশবাজি ফুটাতাম ও আনন্দ-উল্লাস করতাম,এমনকি হাতে মেহেদিও লাগাতাম। যাক, শেষ পর্যন্ত সেই আশাটুকুও পূরণ করতে পারলাম এ আপটন পার্কে এসে।
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: [email protected]
ছবি কৃতজ্ঞতা:
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |