আপনারা তো জানেন এখানকার জীবনযাপন একেবারেই অন্যরকম এবং এই জীবনযাপনের সাথে আমাদেরকে প্রতি মুহূর্তে খাপ খাইয়ে চলতে হয়। কেন বললাম এই কথাটি, কারণ আমরা যেহেতু এইখানে শিক্ষার্থী হিসেবে আছি, সুতরাং আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যায় কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি ম্যানেজ করাটা।
তারপরও আমরা ছুটি ম্যানেজ তো করতে পেরেছি এবং সেই সাথে আরও অন্যান্য জিনিস, যেমন- টিকেট, বাংলাদেশি জার্সি, বাংলাদেশি পতাকা এবং বাংলাদেশি ক্যাপ ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিস আমরা ঠিক সময়ে সংগ্রহ করতে পেরেছি। এতো কষ্ট হয়েছিলো সবকিছু সংগ্রহ করতে!
তারপরও সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি যখন দেখলাম আমাদের চোখের সামনে বাংলার সন্তানরা। মানে আমাদের টাইগারসরা, যাদেরকে আমরা আমাদের আইডল হিসেবে দেখি। সেই সাথে আরও বলতে চাই, আমাদের মতো হাজারও প্রবাসী বাঙালিরও ক্রিকেট নিয়ে গল্প অনেকটাই একই ধাঁচের।
সেদিন আমার সবাই এক সাথে যাত্রা শুরু করেছিলাম ওভাল স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে, যেখানে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে খেলা হয়েছিলো। যখনই টিউব স্টেশন থেকে বের হলাম, খুবই অবাক হয়েছিলাম আশেপাশের বাংলাদেশি সমর্থকদেরকে দেখে।
আমরা সবাই যখন স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকলাম, উফ!কিছুক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিলাম ভেতরের দৃশ্য দেখে! সে এক অন্যরকম অনুভূতি, যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। চোখের সামনে দেখছি শুধু লাল-সবুজ আর লাল-সবুজ।
আমাদের দেশের পতাকা ও জার্সি এবং সেই সাথে আমাদের তামিম, সাকিব, মাশরাফি, রহিম, রুবেল, সাব্বির। বলতে গেলে সব বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা, যাদেরকে আমরা সবসময় টেলিভিশনে দেখেই আসছি কিন্তু যখন সরাসরি দেখছিলাম, তখন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না- ওরা আমাদের এতো কাছে!
খেলা শুরু হওয়ার আগে যখন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হলো, তখন গর্বে বুকটা ভরে গিয়েছিলো। আমরা সব বাঙালিরা এক সাথে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করি। তবে সাথে ব্রিটিশরাও দাঁড়িয়ে শ্রদ্বা জানিয়ে ছিলো।
এরপর শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের খেলা। সত্যি কথা কি, বাংলাদেশ অনেক ভালো খেলেছিলো যা আমাদের প্রত্যাশার বাইরে ছিলো। সেই সাথে ইংল্যান্ডও ভালো খেলেছিলো। হেরেছি তো কী হয়েছে, হার জিত বলে তো একটা কথা আছে, তাই না?
আরেকটি কথা, যেটি অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত। আমাদের ক্রিকেটাররা যখন সেঞ্চুরি ও তিনশ’ রান করেছিলো, তখন আমাদের সাথে ব্রিটিশরাও দাঁড়িয়ে তালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছিলো। ওয়াও! সেই এক বিশাল অনুভূতি! আজকে হয়তো জিততে পারেনি, তো কী হয়েছে? আগামীতে জিতবো।
শেষ পর্যন্ত আনন্দের সাথে খেলাটি উপভোগ করার মাধ্যমে সেদিন বলতে গেলে আমাদের জীবন সার্থক হয়েছে। কারণ এতোদিনের অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত আশা পূরণ হলো।
ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের দুই বন্ধুকে, যাদের অকান্ত পরিশ্রমের ফলে আমাদের খেলা দেখাটি সফল হয়েছে। তাছাড়া যাদের নাম না উল্লেখ করে পারছি না তারা হলেন- আনোয়ার জাহিদ এবং অপরজন হাসিব।
একটি কথা বলতে চাই, আমরা সবাই মাশরাফির অন্ধভক্ত। হওয়াটাই স্বাভাবিক তাই না? আর সেই সাথে আমাদের বন্ধু হাসিবও। কিন্তু তার ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন রকম চিত্র দেখা যায়। তার একটাই ইচ্ছে যদি বিয়ের পর ছেলে সন্তান হয়, তাহলে সে তার সন্তানের নাম রাখবে মাশরাফি। চিন্তা করুন, কী পরিমাণ অন্ধ ভক্ত!
তবে লেখাটি শেষ করার আগে শুধু একটি কথাই বলবো টাইগারসদের উদ্দেশ্যে। আমরা সব প্রবাসী বাঙালিরা তোমাদের সাথেই আছি এবং সবসময় থাকবো। জয় টাইগারসদের জয়!
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
ছবি কৃতজ্ঞতা: আনোয়ার জাহিদ
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |