Published : 14 May 2024, 11:18 PM
ডায়ানার শবব্যবচ্ছেদ
বন্ধ হচ্ছে না থ্যাঁৎলানো মাথা থেকে কালো রক্তের নিঃসরণ
যদিও মর্গে ডোমরা কাটছে কুকুরে খাওয়া পাংশু লাশ।
বীণার ঝংকারে অক্ষিকোটরে জাগছে স্বপ্নের স্ফুরণ :
হয়তো এখনো ওর জরায়ুতে বিকশিত হচ্ছে ফুলের রাশ।
নক্ষত্রেরা জ্বলে কাচের গ্লাশের শূন্যতায়!
শামাদান নড়ে মৃত জরায়ুর সৌম্যতায়!
সকল গন্ধ শেষ সন্ধ্যার বিস্মৃত ছায়ার নরকে যায়!
এ-মৃত্যুপুরীর প্রতিটি রাত্রির শব্দহীন
নারকী আঁধারে প্রসুপ্ত হ্রদের দীপ্তিহীন
মসৃণ-কালো জলে বিদেহী কফিন লুপ্তি পায়।
ভগ্ন স্ফটিক থেকে ঝরবে রাত্রির রক্তবৃষ্টি।
পূর্ণবিকশিত প্যাগান গোলাপের যন্ত্রণাগ্রস্ত-আর্ত দৃষ্টি
লীন হয়ে যাবে মৃদু আলোকিত, বিষাদগ্রস্ত সামসারায়।
ইয়োবের প্রার্থনা
“সঙ্কীর্ণ করো ইহুদি বস্তির পূতিগন্ধময় আঁধার ঘর।
(খোদা, তোমার মর্জিমতো চালাও নিষ্ঠুর নির্যাতন।)
ধ্বনিত যখন তোমার প্রেরিত ঐশী সারসের কণ্ঠস্বর
উদাসীনভাবে দেখছি আমি ঠাণ্ডা পত্রালির স্খলন।
রাত্রির নীলিমাতে উড়ন্ত পাখিরা সুদূরে যাক,
অতৃপ্ত বাসনা মর্ত্যলোককে রক্তে ভাসাক,
আমি শুধু চাই তোমার প্রেমের ফুল্লদল।
আমার আত্মায় জ্বালো, হে জিহোভা, দিব্য অনল।”
অনাদি রজনী
প্রত্যেক আত্মা গুঞ্জরিত হয়
অনাবৃত-সংকুচিত-সৌগন্ধময় সান্ধ্য নীলিমায়।
মহাসমুদ্রের কলরোলে,
মসৃণতম কালো জলে,
দীর্ঘ রজনীর কফিনে ছায়ারা যাক।
স্ফটিকের ভগ্ন কবরে চিত্রা-স্বাতী জ্বলছে।
মুহূর্তেই গ'লে যাচ্ছে সবগুলো মোম।
বিরতিবিহীন ঘুরপাক খাচ্ছে
ঘনীভূত শনি-রবি-সোম।
ধ্বনি জাগে অতলান্ত হ্রদে।
রাত্রি ভ'রে ঝিঁঝিঁরা ডাকে।
স্টিক্সের দুঃখময় হাওয়ায়
উত্থান ঘটে ধোঁয়ার নৌকোর।
রাশান মেয়ের সাথে কৈশোরিক প্রেম
মসৃণ ত্বকে ছুরিকাঘাতে বেরিয়ে আসা রক্তের মতো
ফুটলো গোলাপ, ঔষধগুলো পাপড়ির উপরে
খেলা করে। জ্বরতপ্ত কালো আর নীলাভ শাখারা
শেষ বিকেলের বিষণ্ণতা আর পৈশাচিক চিৎকার নিয়ে
আঘাত করে কাঠের জানালায়।
ঘুণে ধরা গদ্যগুলো তাই রূপান্তরিত হয় কবিতায়।
ক্রূর ও বিষণ্ণ উদ্যান, যেখানে
স্বর্গীয় বিহঙ্গ দিবারাত্রি ওড়ে
ও পতঙ্গ নড়ে, সেখানে
লাইলাকরাশি পূর্ণ হলো জ্বরে।
কাম্য বাতাস কঠোর হবে, হন্তা বালিশ
যেহেতু ওর মুখের ওপর ঠেসে ধরেছি।
জ্বরে উষ্ণ ক্ষুদ্র দেহ রৌদ্রে ভেজা
জুঁইয়ের মতোন, ঝরলো গন্ধ ত্বক থেকে।
যেহেতু অচেতন, জীবনের জন্যে হলো না ও
সামান্য আতুর এবং যখন ঠাণ্ডা লাশে
রূপান্তরিত হলো, সকল দুঃখ ফুরোলো ওর
প্রাণের, কোনো স্পর্শে আর জাগলো না আবেগে
জলের মতো থরোথরো, তখনই আমার
শীর্ণ বাহু শেকড়ের মতো ছড়িয়ে দিয়ে
ওর ঠাণ্ডা দেহের সঙ্গে আলিঙ্গনাবদ্ধ হলাম।
দিবারাত্রি নাতাশা আমাকে শুনিয়ে যেতো সন্তের প্রলাপ,
কিন্তু এখন থেমে গেছে ওর শিশু আত্মার সকল স্পন্দন।
বিভ্রান্ত বানর
ক্ষুদ্র বালকটিকে হেঁচড়ে নিয়ে যাও
আবলুশ কাষ্ঠে গড়া সংকীর্ণ কক্ষটি চূর্ণ ক'রে।
তার জন্মদাত্রীর যৌনাঙ্গ ফেড়ে
যেই পূতিপুঞ্জ ছিঁড়ে এনেছিলে
গোল্লা পাকিয়ে সেইগুলোই তার মুখগহ্বরে ভ'রে দাও।
তার সংগৃহীত সব পুষ্প বিনষ্ট হয়ে যাক
এবং সমস্ত প্রবেশপথ অবরুদ্ধ হয়ে যাক।
অন্তরীক্ষে, পাতালে অথবা অন্তিম ছায়ায়
শিশু সবুজ মাংস নাচুক অগ্নিশিখায়।
মস্তিষ্কের পদ্মফুলে কালো বৃত্ত জন্ম নেয়।
শুষ্ক হাওয়া রক্ত পায়। বীণা বাজে শূন্যতায়।
অচেতন বগলগুলো কৃষ্ণ ধ্যানে মগ্ন হয়।
ক্ষুদ্র সে-বালকের ক্ষুদ্র শ্বেত বগলে
ফুটে উঠবে এলোমেলো গুপ্ত রক্তিম ফুলের দল।
তার মস্তিষ্কের প্রতিটি কক্ষে নড়বে অপরিচিত
পরম পতনের ভয়।
চেতনার পদ্মফুলে কালো বৃত্ত জন্ম নেয়।
শুষ্ক হাওয়া রক্ত পায়। বীণা বাজে শূন্যতায়।
সবগুলো নক্ষত্র নিরীক্ষায় মগ্ন হয়।
নিরীক্ষা করে জলে ভাসমান সবগুলো চোখ
কীভাবে শামুকের ঠান্ডা খোলস আত্মা ফিরে পায়;
এবং কেন সপ্তর্ষিমণ্ডল জ্বলে সারা রাত।
সপ্তর্ষির পদ্মফুলে কালো বৃত্ত জন্ম নেয়।
শুষ্ক হাওয়া রক্ত পায়। বীণা বাজে শূন্যতায়।
কলগুঞ্জন জাগ্রত হয় আচ্ছন্ন নাসিকায়।
শিশু নাসিকায় উঠে আসুক অপার্থিব বাতাস।
নগ্ন তীরগুলো বিদ্ধ হোক তার মসৃণ তলপেটে।
যার ফলে তার অন্তিম গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়বে, আর
মরুর আকাশে পৌঁছে যাবে এক উল্লম্ব চিৎকার।
পীড়নাগার
ভ্রষ্ট প্রভুর কাষ্ঠের কফিনে বন্দি সাপিনী
প্রত্যুষে তলাবে অনাদি কর্দমের সৌম্যতায়।
মৃত পাতাগুলো ঝরবে ঘুমন্ত মৃত্তিকায়।
মন্থরগতিতে রক্তের সমুদ্রে গলবে মৃণাল।
গ্রাস ক'রে নাও কম্প্র সন্ধ্যার অনন্ত নীল।
বীভৎস পৃথিবীর বিমর্ষ-মলিন-ঠাণ্ডা বাতাস
ভূতগ্রস্ত রাত্রে আত্মাকে করে আরো হতাশ।
ক্লেদাক্ত আঁধারে বাঁশিতে ফুঁ দাও, ইস্রাফিল!
আঁধার কারাগারে নারকীয় দুঃস্বপ্নের ধুপ জ্বলে,
কম্পিত সন্ধ্যা অভিশপ্ত রথে শূন্যে যায়।
তবু মার্বেলের ছাদে স্বর্গীয় পত্রালি স্খলে:
আমরা যোগ দিই বিকৃত যোনির বন্দনায়।
শিল্পী শিশুরা
পৌরাণিক রজনীর মৃত্যু-নিমগ্ন মরূদ্যানে
দ্রুত হানা দেয় নক্ষত্রলোকের কর্কট ও মাছ,
ধীরে বেড়ে ওঠে ঘন কুয়াশায় খেজুরগাছ,
শতদল ফোটে ক্যান্সার ওয়ার্ডে আমার মনে।
শিশুরা সেখানে হতাশাগ্রস্ত ও শীর্ণ, তাই
নিরন্তর বলে, “আমরা তোমাদের রক্ত চাই।”
ওদের চিৎকারে জুঁইয়ের মতো কাঁপে আতুড়ঘর।
অজ্ঞাত ভয়ে রক্ত ঝরায় তেপান্তর।
গ্রীষ্মরাতের নিঃসীম নীল অন্ধকারে
ওই শিশুদের হৃদয় থেকে রক্ত ক্ষরে।
ওদের নখর কিংবা আঙুলের একটু ছোঁয়ায়
সব পুষ্প এক পলকেই প'চে-গ'লে যায়।
আতুড়ঘরেই ওই ভ্যাম্পায়ারদের দাও ফাঁসি।
কিন্তু ওরা তো কূটকৌশলী ও ছদ্মবেশী!
যে-মহিমান্বিত ফেরেশতারা ওড়ে আসমানে
সদ্যোজাত শয়তানকে তারাও কি চেনে?
ওদেরই নির্দেশে মাংশাসী কীটেরা কবরে যায়,
আর্তচিৎকারে পূর্ণ গহ্বরে বিষ ছড়ায়,
বিষাক্ত কফিনে পুনর্জীবিত ভ্লাদের শূল
জন্ম দেয় এক জমাট রক্তের ক্লেদজ ফুল।
গম্ভীর নিরয়ে
ঝরন্ত শেফালিগুলো সপ্তর্ষিমণ্ডল থেকে ধ'রে আনলো
নিঃশব্দ রাত।
শূলবিদ্ধ ভেড়ার মতোন দ্রুতবেগে কুঁকড়ে গেলো
পৌরাণিক ইস্পাত।
শুভ্র কাফন সরিয়ে ফেলতেই আদিনাদের জন্ম দিলো
গলন্ত বিকৃত লাশ।
ফুলে ওঠে গাঢ় ফুল, রক্তময় হাওয়া বয়, এটি গম্ভীর নিরয়।
অপার্থিব বৃক্ষেরা অবিরল শুকনো পাতা ঝরায়।
রক্তপাতেই শুধু মুক্তি, তাই চলি অনাদি নৌকোয়।
ঠাণ্ডা হ্রদের চতুর্দিকে বেণুবনে জ'মে উঠুক ঘন অন্ধকার,
আর বিস্মৃত জাহান্নামের অগ্নি থেকে উঠে আসুক শয়তানের চিৎকার।
সঙ্কীর্ণ ঘর
ভ্যাঁপসা গন্ধের গুমোট ঘরে এক শিম্পাঞ্জি
অস্থির হাতে লিখে চলে তার দিনপঞ্জি,
আবিষ্কার করে সারা জীবনের অন্তঃসার।
বিভ্রান্ত চোখের তারাতে নিরন্তর পেরেক ঢোকায়।
মিশে যেতে চায় সপ্তর্ষির ঝরনাধারায়।
অদ্ভুততম সন্ধ্যার ছায়া নামার আগেই
চিতার আগুনে সে কাষ্ঠের মতো পুড়তে চায়।