এমনকি এই লন্ডনেও প্রবাসী বাঙালিরা অনেক আনন্দের সঙ্গেই দিনটি পালন করেছে। কিন্তু আপসোস যে, শরীর খারাপ থাকার কারণে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানটিতে যেতে পারি নাই।
বাসায় থাকতে ভালো না লাগায় পরদিন কিছুক্ষণের জন্য বেড়াতে বের হয়েছিলাম। অনেকদিন পর আবহাওয়াটাও ভালো ছিলো। আমার গন্তব্যে বাসে করে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা লাগার কথা। বাসে ওঠার পর পরই শুনলাম, পেছন থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে!
পুরো ব্রিটেন জুড়েই রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য, যেগুলো সেখানকার ঐতিহ্য এবং ইতিহাস বহন করে। কেউ একটু মনোযোগ দিয়ে শহরগুলোর ভাস্কর্য দেখলেই পুরো জাতির ইতিহাসটা জানা হয়ে যাবে। ফ্রান্স ও ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য দর্শনার্থী যান কেবল তাদের ভাস্কর্য দেখার জন্য।
: কী বলো সাফী, ভালোই তো হলো সরকার যদি হেফাজতের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করে তাহলে তো দেশের মঙ্গল হবে, তাই না! কীসব মূর্তি রাখার জন্য মানুষ যে কেন লাফায়, বুঝি না।
: কে বললো আপনাকে এগুলো মূর্তি। আপনার কী মনে হয় না, হেফাজত অতিরিক্ত করছে?
আমি যখন তার কাছ থেকে এইসব প্রশ্নের উত্তর পেলাম, বুঝতে পারছিলাম না কী বলবো তাকে!
তিনি বোঝানো শুরু করলেন যে একটা মুসলিম দেশে মূর্তি থাকতে পারে না। আমার পয়েন্টেই তিনি এলেন না! ভাস্কর্য আর মূর্তি যে এক নয় আলোচনা থেকে সে ব্যাপারটা বেমালুম গায়েব হয়ে গেল।
আলোচনার এক পর্যায়ে এসে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পহেলা বৈশাখ পালনের বিপক্ষেও তিনি অবস্থান নিলেন! এ সবকিছু হারাম!
তবে অসহ্য হতে কতোক্ষণ! তো আমি আবারও তাকে বিনয়ের সঙ্গে মনে করিয়ে দিলাম- আপা, আমরা কিন্তু মূর্তি আর ভাস্কর্যের পার্থক্য নিয়ে আলাপ করছিলাম!
আবারও ভাঙা রেকর্ড বাজলো কিছুক্ষণ। তার কথা হচ্ছে- আমাদের দেশে কোনও ভাস্কর্য নেই, যা আছে সব মূর্তি। এগুলো দেশে থাকলে কোনোভাবেই নামাজ হওয়ার কথা না।
কিছুক্ষণ পর আমি তাকে বললাম, “আপা, আপনি তো ইংল্যান্ডে অনেক বছর ধরে আছেন, তাই না! আমাকে বলুল তো এই যে ইংল্যান্ডে এতো মূর্তি দেখছেন প্রতিদিন, তখন খারাপ লাগছে না!”
এরপর বাস থেকে নামার কিছুক্ষণ আগে তিনি শেষ কথাটি বললেন- “দেখ সাফী, বাদ দাও ইংল্যান্ড বা বাংলাদেশের কথা। শুধু একটি জিনিস মনে রাখবে যে, আমরা সবাই মুসলিম।”
আগেও দেখেছি, এবারও দেখলাম- ‘ধর্মান্ধ’ মানুষ যখন যুক্তিতে হেরে যান, তখন তর্কে নিজের ব্যক্তি অবস্থান সুদৃঢ় করতে ধর্মকেই টেনে আনে।
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |