তারপর একদিন বের হলাম সৌন্দর্যের রহস্য উন্মোচন করার জন্য। এই সৌন্দর্যের মধ্যে যে জিনিসটি সবার প্রথমে নজর কাড়বে, তা হলো দেয়াল চিত্র বা গ্রাফিটি। এর আশেপাশে রয়েছে অন্যরকম ডিজাইনের শপিং মল, স্ট্রিট ফুড রেন্টুরেন্ট, পাব, ক্লাব, সিনেমা হল, গ্যালারি, ট্যাটু শপ এবং লাভলক ফেন্স বা বেড়া।
যে সড়ক নিয়ে এতো কাহিনী, সেই সড়কের নাম ‘সর্ডিচ হাই স্ট্রিট’। এই সর্ডিচ স্ট্রিটের দেয়াল পেইন্টিং বা গ্রাফিটি উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন শত শত পর্যটক এসে ভিড় করে। এই দেয়াল চিত্রের কারণে সর্ডিচ স্ট্রিটকে ‘কালারফুল স্ট্রিট’ও বলা হয়। সেই সাথে মনে করিয়ে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাকে।
এমনকি এই সড়কের অলি-গলিগুলোর শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত প্রতিটি দেয়ালে এমনভাবে পেইন্টিং করা, যা থেকে আপনি আপনার চোখ সরাতে পারবেন না। তবে প্রতি রোববারে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় শুধুমাত্র সানডে মার্কেটের জন্য। প্রতি রোববারে ‘সানডে মার্কেট’ নামে যে মেলাটি বসে, সেটি মুলত ব্রিকলেন থেকে শুরু করে সর্ডিচ স্ট্রিটে এসে শেষ হয়।
এই সড়কের প্রত্যেকটি দোকান হচ্ছে বাক্স আকৃতির, যার কারণে এর নাম ‘বক্স পার্ক’। নামটি শুনতে একটু অবাক লাগছে, তাই না!কিন্তু এর পেছনে রয়েছে এক সৃষ্টিশীল চিন্তা। এই ‘বক্স পার্ক’ হচ্ছে একটি পপ-আপ শপিংমল, যা কিনা জাহাজের কনটেইনার দিয়ে তৈরি। দেখলে মনে হবে কনটেইনারগুলো ধাপে ধাপে সাজানো। তবে এই সর্ডিচ হাই স্ট্রিট ‘বক্স পার্ক সর্ডিচ’ নামেও পরিচিত।
এই বক্স পার্কের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে বিশ্বের প্রথম ‘পপ আপ মল’ হিসেবে। কি নেই এই বক্স পার্কে, ব্রান্ড পণ্য থেকে শুরু করে ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট এবং গ্যালারিও রয়েছে। এইখানে প্রায় ৪০টির বেশি দেশি ও বিদেশি ব্রান্ডে পণ্য পাওয়া যায় এবং এক এক পণ্যের মূল্য একেক রকম। কই অদ্ভুত, তাই না! এ যেন বাক্সের ভেতরে দোকান!
এই বক্স পার্কের ভেতরে কিন্তু দু’টো সাইড রয়েছে, একটি হচ্ছে ফ্যাশন সাইড এবং অপরটি হচ্ছে ফুড ও ড্রিংক সাইড। দুটো সাইড আলাদা হওয়াতে সময়সূচিও ভিন্ন রকম। ফ্যাশন সাইড মূলত সোমবার থেকে শনিবারে সকাল ১১টা থেকে ৭টা, বৃহস্পতিবারে সকাল ১১টা থেকে ৮টা এবং রোববারে সকাল ১২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই বার আসুন, জেনে নেই ফুড এবং ড্রিংকের সময়সূচি, সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং রোববারে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
বক্স পার্ক থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ নজরে পড়লো একটি তারের বেড়ার সামনে অনেক মানুষের ভিড়। দেখলাম, অনেকেই ক্যামেরায় বন্দি করছে তাদের মুহূর্তগুলো। তারপর খুব আগ্রহের সাথে সামনে গিয়ে জানতে পারলাম আসল রহস্যটা। যদি সহজ বাংলায় বলি, তাহলে বলা যায়- এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার কাপল টুরিস্টরা আসে শুধুমাত্র তাদের ভালবাসা দীর্ঘস্থায়ী ও প্রকাশ করার জন্য তালা লক করে যায় এই তারের বেড়ার সাথে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ এবং দীর্ঘস্থায়ী কামনা।
আমাদের দেশে একটু ভিন্ন চিত্র দেখা যায় এক্ষেত্রে, মূলত যেকেনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়ত করে সুতা বাঁধা হয় মনের আশা পূর্ণ করার জন্য। তবে জীবনে এই প্রথম দেখলাম তালা লক করার মাধ্যমে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
এক কথায় এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো এই সড়কে গিয়ে। কারণ বুঝতে পারলাম যে, টুরিস্ট এলাকা বা জায়গা তৈরি করার জন্য খুব যে বেশি টাকা খরচ করতে হয়, তা নয়। অনেকটুকু নির্ভর করে আইডিয়ার উপরে।
ইচ্ছে করলে আমরাও পারি আমাদের দেশে নতুন ধারণা প্রয়োগ করে এ ধরনের টুরিস্ট জায়গা তৈরি করতে। বুঝলাম, টাকার থেকে বড় জিনিস হলো সৃষ্টিশীল ধারণা।
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |