ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
Published : 06 Dec 2023, 02:49 PM
পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজ হত্যা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের জামিন জজ আদালতেও নাকচ হয়ে গেছে।
এছাড়া পুলিশের পিস্তল ছিনতাই মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সের জামিনও নাকচ করেছে একই আদালত।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের বুধবার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জহির উদ্দিন স্বপনের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল।
শুনানিতে আইনজীবী মেজবাহ বলেন, “আমাদের মামলাটির বিষয়ে কোনো কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ঢালাও অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে।
“মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ছিল কথিত পুলিশ হত্যার ঘটনাস্থল। আসামিরা মঞ্চে ছিলেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকাণ্ড হয়েছে অথবা তাদের কোন বক্তব্যে উসকানি ছিল- ভিডিও ফুটেজে এমন আলামত পেলে আমরা জামিন চাইব না। “
মেজবাহ বলেন, “ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের থেকে অনেক বেটার অবস্থা এই প্রার্থীদের। নিউ মার্কেটের পাশে শাহজাহান ওমরকে বাসে আগুন দেওয়ার নির্দেশদাতা বলা হয়েছিল। তারও জামিন হয়েছে।“
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “এই জামিন প্রার্থীদের উসকানিতে পুলিশ কনস্টেবল হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।“
পুলিশের পিস্তল ছিনতাইয়ের ঘটনার মামলাতেও উভয়পক্ষে শুনানি করেন একই আইনজীবীরা।
মামলা ও গ্রেপ্তার
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ সদস্য আমিরুল হক পারভেজকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনায় ২৯ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুক মিয়া বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীরসহ ১৬৪ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার পল্টন থানার কালভার্ট রোডের পূর্বপ্রান্তে বাদীসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বরত ছিলেন। বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ‘হাজার হাজার’ নেতাকর্মী তাদের উপর হামলা করে। ইটপাটকেলের আঘাতে এডিসি (ডিবি-ওয়ারী জোন) ইলিয়াছ হোসেন, কনস্টেবল আমিরুল হকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হন।
সেসময় আমিরুল হক ‘আত্মরক্ষার্থে’ ডিআর টাওয়ারে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে রাস্তার উপর ফেলে এলোপাতাড়ি ইট, লাঠি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। তাতে আমিরুল গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকেন। তখন পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আমিরুলকে পরে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ মামলায় ২ নভেম্বর স্বপন এবং ৩ নভেম্বর খসরুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের ছয় দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। রিমান্ড শেষে গত ১০ নভেম্বর বিএনপির এই দুই নেতার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠায় হাকিম আদালত।
এদিকে ২৮ অক্টোবর সংঘর্ঘের মধ্যে রাজারবাগে পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ক্যান্টিন ভাংচুর ও পুলিশের পিস্তল ছিনতাইয়ের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয় পল্টন থানায়।
সেই মামলায় ৪ নভেম্বর ঢাকার বাড্ডা এলাকার একটি বাসা থেকে প্রিন্সকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায় হাকিম আদালত।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ হঠাৎ বন্ধ হলে শান্তিনগর মোড় এবং ফকিরাপুল মোড় দিয়ে হাজার হাজার লোক যাওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি কর্মীরা। সে সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস ও আব্দুস সালামসহ অন্যদের ‘নির্দেশনায়’ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৪০০-৫০০ নেতাকর্মী পুলিশ ক্যান্টিনে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর এবং তাণ্ডব চালায়।
পুলিশের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তারা এএসআই এরশাদুল হককে আহত করে এবং তার পিস্তল ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।