শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়ার যে খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সেটি ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেছেন জয়।
Published : 07 Aug 2024, 02:05 PM
গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভারত থেকে এই মুহূর্তে অন্য কোথাও যাওয়ার ‘পরিকল্পনা নেই’ বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়৷
শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়ার যে খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সেটি ‘গুজব’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
জার্মানির সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় আওয়ামী লীগের বর্তমান-ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনা এখন কোথায় আছেন এবং কেমন আছেন জানতে চাইলে জয় বলেন, “তিনি ভালো আছেন, এখন দিল্লিতে আছেন৷ আমার বোন (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) উনার কাছে আছেন৷ আমার বোনতো দিল্লিতে থাকেন৷ তিনি ভালো আছেন, তবে তার খুবই মন খারাপ৷
“তিনি খুবই দুঃখিত যে দেশের জন্য উনার বাবা জান দিয়েছেন, আমার পুরো পরিবার জান দিয়েছে, যেই দেশের জন্য তিনি জেল খেটেছেন, এত পরিশ্রম করেছেন, এত উন্নয়ন করেছেন, সেই দেশের মানুষ তাকে এভাবে অপমান করে বের করে দেবে, তার ওপর আক্রমণ করতে যাবে, এটা আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি।”
আওয়ামী লীগ সভাপতির মার্কিন ভিসা বাতিলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে জয় বলেন, “এটা গুজব। এমন কিছুই হয়নি।”
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ কেন করতে হল, তা জানতে চেয়েছিল ডয়চে ভেলে।
উত্তরে জয় বলেন, “আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, বাংলাদেশে এখন যে সব সংঘর্ষ চলছে, জ্বালাও পোড়াও চলছে, তখনও এটা শুরু হয়েছিল, এবং আন্দোলনকারীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা গণভবনকে হামলা করবে। তখনও তিনি কিন্তু দেশ ছাড়তে চাননি। আমরা পরিবার থেকে তখন উনাকে কনভিন্স করলাম যে না এরা শুধু আন্দোলনকারী না, বললাম যে এরা তোমাকে হত্যা করে ফেলবে। তোমার দেশ ছেড়ে যেতেই হবে।”
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সামরিক বিমানে চড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা।
এর মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন শেখ হাসিনা। অনুমতি মিললে সেখানেই তিনি যেতে চান।
পত্রপত্রিকায় খবর আসছে, সিনিয়র নেতারা জানতেন না যে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ছেন। এমন পরিস্থিতি কেন হল জানতে চাইলে জয় বলেন, “এটা আসলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল একদিন আগে। সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন। আমরা কয়েকজন শুধু জানতাম যে তিনি ঘোষণা দেবেন তিনি পদত্যাগ করছেন।
“সংবিধান অনুযায়ী যাতে একটি ট্রানজিশন অব পাওয়ার হয় সেটাই ছিল উনার প্ল্যান৷ তবে যখন তারা (আন্দোলনকারী) ওই গণভবনের দিকে মার্চ করা শুরু করল, তখন আমরা ভয়ে বললাম যে, আর সময় নেই৷ তোমার এখনই বেরিয়ে যেতে হবে৷”
ওই সিদ্ধান্ত তখনই কেন ঘোষণা করা হয়নি, সেই ব্যাখ্যায় জয় বলেন, “একদিন সময় নেওয়ার কারণ হল প্রস্তুতি নিয়ে ট্রানজিশন অব পাওয়ার কী হবে সংবিধান অনুযায়ী সেটা করা। এটা তো হুট করে করা যায় না।”
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিয়ে জয় বলেন, বর্তমানে তার নিজের বা শেখ পরিবারের কোনো ব্যক্তির রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
“রাজনীতিতে আমি বা আমরা আসছি না। দেখেন, আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে তিনবার ক্যু হল, সব কিছু হারিয়ে বিদেশে থাকতে হল। আাদের মা বাদে আমরা সবাই তো অনেকদিন ধরে বিদেশে আছি। এখানে আমরা সেটেলড, অভ্যস্ত। আমাদের এখাকার জীবনে কোনো অসুবিধা নাই। আমরা এখানে থাকতে অভ্যস্ত।
“দেশের জন্য এত করেছি, গত বছরে ১৫ বছরে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ বানিয়েছি, এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আমি সরকার থেকে কোনো বেতন নিইনি। বিনামূল্যে এই কাজটি করেছি, প্রচুর পরিশ্রম করেছি বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড করতে, গ্রাম পর্যন্ত এর বেনিফিট পৌঁছানোর জন্য। এই যে উন্নয়ন করেছি আমরা , এর পরেও যদি বাংলাদেশের মানুষ আমাদের পরিবারের সঙ্গে এমন করে, তাহলে আমাদের আর কিছু বলার নেই।”
সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার সন্তানরা দেশে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন কি না, সেই প্রশ্নে জয় স্পষ্টভাবে বলেন, “তাদেরও রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।”
দেশে বসবাসরত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে জয় বলেন, “তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। আমাদের সকল মন্ত্রীদের বাসা জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়, সেটাকে পর্যন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
“আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী, এমপিকে হত্যা করা হয়েছে। শুনতে পাচ্ছি হিন্দু ধর্মের কিছু মানুষের ওপরে হামলা হয়েছে, মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। তো সংঘর্ষতো শুরু আগেই। আর এখন আমাদের সরকার নাই। এখনকার সংঘর্ষের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো দায় নেই। আমরা তাদের বাঁচাতে চেষ্টা করছি বিভিন্নভাবে। আওয়ামী লীগ মরে যায়নি। সবচেয়ে পুরাতন দল।”
তবে আগামীতে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগকে ভোটের মাঠের বাইরে রাখা হবে বলে আশঙ্কা করছেন জয়।
তিনি বলেন, “এখন তো তারা আওয়ামী লীগকে শেষ করার চেষ্টা করছে। এবং যদি নির্বাচন হয়ও, তাহলে আওয়ামী লীগকে তারা নির্বাচন করতে দেবে কি না, নেতা-কর্মীদের মাঠে নামতে দেবে কি না কিছুই জানা নেই। এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে আমি আমার নেতা-কর্মীদের বের হতে, বা একত্র হতে বলতে পারি না। তাদের ওপর নির্যাতন চলছে, তাদের জান বাঁচানো প্রথম দায়িত্ব।
“আমি মনে করি দেশে যদি এখন নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতে আসবে। হ্যাঁ, ১০০ ভাগ ভোট কোনোদিন কোনো দেশে কোনো দল পায় না। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করলে দেশের বাকি অর্ধেক মানুষ কি মানবে? দেশের অর্ধেক মানুষ আওয়ামী লীগের সমর্থক, তারা মানবে না।”
এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনে শেখ পরিবারের ভূমিকা নেওয়া উচিত কি না– সেই প্রশ্নে জয় বলেন, “এটা আর উচিতের বিষয় নয়। প্রশ্ন হল যে, আমাদের কি তারা নির্বাচন করতে দেবে? নির্বাচন যদি নাই করতে দেয়, মারধর করতে থাকে, তাহলে তো সেই চেষ্টা করে লাভ নেই। শুধু শুধু মানুষ মরে যাবে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেও জানান জয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে জয়ের কথা হল, “আমার কোনো মতামত নেই এ বিষয়ে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজতো অনেকদিন ধরেই চাইছেন তিনি যেন দেশ চালানোর সুযোগ পান। এখন তিনি সেই সুযোগ পাচ্ছেন। কীভাবে দেশ চালাবেন আমি দেখতে চাই, দেখার অপেক্ষায় আছি। একটা দেশ চালানো তো অত সহজ কথা না, তো দেখি। ”
শেখ হাসিনার সরকার না থাকায় শিগগিরই দেশের মানুষ ‘আফসোস’ করবে মন্তব্য করে জয় বলেন, শিগগিরই তিনি ভারতে যাবেন তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। তবে সেই দিনতারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
পুরনো খবর
দিল্লিতে বাংলাদেশ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক, শেখ হাসিনা কোথায়?
যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছেন শেখ হাসিনা
ভারতে শেখ হাসিনা, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দিল্লি
পরিকল্পনা ঠিক করতে হাসিনাকে 'সময় দিতে চায়' ভারত
শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে