“সংক্ষিপ্ত নোটিসে শেখ হাসিনা ভারতে প্রবেশের অনুমোদন চেয়ে অনুরোধ করেন,” বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
Published : 07 Aug 2024, 01:01 AM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে কীভাবে ভারতে গেছেন, সে বিষয়ে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষকে অবহিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
বার্তা সংস্থা এএনআই লিখেছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মঙ্গলবার শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার নাটকীয় সময়ের বর্ণনা দেন জয়শঙ্কর।
লোকসভাকে তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত নোটিসে শেখ হাসিনা ভারতে প্রবেশের অনুমোদন চেয়ে অনুরোধ করেন। সোমবার বিকালে চলে আসেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান শেখ হাসিনা।
গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে বিমানবন্দরে, সেখান থেকে বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন উড়োজাহাজে আগরতলা হয়ে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে নামেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পৌঁছানোর পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন দেশটির শীর্ষ নেতারা।
হিন্ডন ঘাঁটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার লোকসভায় বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন জয়শঙ্কর।
পরে জয়শঙ্কর ও অজিত দোভালের উপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
বৈঠকের পর জয়শঙ্কর গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দিল্লি।
এএনআই বলছে, ঢাকার ঘটনাপ্রবাহ, বাংলাদেশ থাকা ভারতীয় ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়েও মঙ্গলবার লোকসভাকে অবহিত করে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব দলের সমর্থন চান জয়শঙ্কর।
লোকসভাকে তিনি বলেন, “কারফিউ সত্ত্বেও সোমবার আন্দোলনকারীরা ঢাকা দখলে নেয়। আমরা যতটুকু বুঝতে পারছি, ওই পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর শেখ হাসিনা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
“ওই মুহূর্তে তিনি সংক্ষিপ্ত নোটিশে ভারতে আসার অনুমোদন পাওয়ার অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের জন্য বারবার অনুরোধ আসছিল। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি দিল্লিতে এসে পৌঁছান।”
শেখ হাসিনার পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বসবাস করা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে লোকসভাকে তথ্য দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ব্যক্তিক্রমীভাবে ঘনিষ্ট।
বাংলাদেশ পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “জানুয়ারি ২০২৪ এর জাতীয় নির্বাচনের সময় থেকে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছিল, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর বিভক্তি ও মেরুকরণ দেখা যাচ্ছিল। এসব কারণ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন ফুসে ওঠার নেপথ্যে ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।”
পার্লামেন্টের উচ্চক্ষক রাজ্যসভার উদ্দেশে জয়শঙ্কর বলেন, “বাংলাদেশে জুলাই থেকে সরকারি স্থাপনায় নাশকতাসহ সহিংসতা চলছে। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করে নিতে আহ্বান জানিয়েছিলাম আমরা।
“তবে সহিংসতা বাড়তে থাকে, সরকারি স্থাপনা, রেলওয়ে, ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন অবকাঠামোতে হামলা চালানো হয়। এই সময়ে আমরা বারবার তাদের এগুলো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলাম এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম।”
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট ছাত্রদের দাবির পক্ষে রায় দিলেও বিক্ষোভ থামেনি। পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠলে একাধিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ অবস্থায় এসে আন্দোলনকারীদের দাবি একদফায় এসে দাঁড়ায় এবং এতেই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়েছে।
ঘটনাবহুল ৫ অগাস্টের বিবরণ তুলে ধরে জয়শঙ্কর বলেন, আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় অবকাঠামো ও স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
গত ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার কথা তুলে ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব দলের সহায়তা চান জয়শঙ্কর।