ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন।
Published : 05 Aug 2024, 11:05 PM
গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর দেশটির নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পতন ঘিরে উদ্ভূত ‘বাংলাদেশ সংকট’ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দেশটির শীর্ষ রাজনীতিকরা। তারা বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
এর আগে জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সংকট নিয়ে ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
বাজেট অধিবেশন চলছে ভারতের পার্লামেন্টে। সেখানে রাহুলের সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করেন জয়শঙ্কর।
ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আসার পর অজিত দোভাল এবং জয়শঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সংকট বিষয়ে বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
নিউজ এইটিন বলছে, নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক চলছে। এতে মোদীর সঙ্গে জয়শঙ্কর, দোভাল ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন অংশ নিয়েছেন।
তবে বৈঠকের পর শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী কথা বলবেন কি না, তা জানতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি।
ইন্ডিয়া টুডে জানাচ্ছে, সোমবার ভারতের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৩৬ মিনিটে দিল্লির ৩১ কিলোমিটার দূরে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান।
বিমানঘাঁটিতে শেখ হাসিনা গ্রহণ করেন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা এয়ার অফিসার কমান্ডিং (এওসি) সঞ্জয় চোপরা। সেখানে ভারতের বিমান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় এয়ার কমান্ড চিফ এয়ার মার্শাল পিএম সিনহা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।
রয়টার্স জানায়, সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার গণভবন থেকে ত্রিপুরার আগরতলা হয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির কাছে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা রয়েছেন বলে জানায় রয়টার্স।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি হিন্দু বলছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সি-১৩০জে সামরিক পরিবহন বিমানে ঢাকা ছাড়েন। সেখান থেকে আগরতলা হয়ে একই বিমানে গাজিয়াবাদ বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান।
বার্তা সংস্থা এএনআই লিখেছে, শেখ হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি সুপার হারকিউলিস সি-১৩০জে হ্যাঙ্কারে পার্ক করে রাখা হয়েছে।
“বাংলাদেশ বিষয়ে কেন্দ্র যা করবে, রাজ্য তা-ই শুনবে’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তার রাজ্যের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে তথ্য দিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। তবে মমতা বলেছেন, বাংলাদেশ বিষয়ে কেন্দ্র যা করবে, রাজ্য তা-ই শুনবে।
সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, সোমবার বিধানসভায় থাকার সময়েই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগরতলায় নেমে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পান মমতা। এর পরেই মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী।
আলোচনা শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, বলেন, ‘‘দেশে সরকার আছে, বিষয়টি তাদের ওপর ছেড়ে দিন। আপনারা নিজেরা এমন কোনো মন্তব্য করবেন না, যাতে কোনো হিংসা বা প্রতিরোধ শুরু হতে পারে।
“বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন, কিন্তু সেটা নিয়ে এমন কিছু লিখবেন না বা বলবেন না যাতে বাংলা বা ভারতের শান্তি নষ্ট হয়। এটা আমার সবার কাছে অনুরোধ। ”
বিজেপি নেতাদের সতর্ক করে মমতা বলেন, “বিশেষ করে বিজেপি নেতাদের বলছি, কারণ আপনারা এরই মধ্যে নানা কিছু পোস্ট করছেন। যে পোস্টগুলো করা উচিত নয় বলেই আমি মনে করি। আমি আমাদের নেতাদেরও বলছি, কেউ কোনো পোস্ট করবেন না।’’
দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছেন শেখ হাসিনা। তবে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
এনডিটিভি লিখেছে, শেখ হাসিনা রাতেই লন্ডন যাবেন নাকি দিল্লিতে কিছু দিন থাকবেন, তা এখনও পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা জারি করে বাংলাদেশের সঙ্গে চলাচলকারী সব বাস, ট্রেন ও বিমান বন্ধ করে ভারত।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের একদফায়। অসহযোগের পর ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিন সোমবার দুপুরে পতন হয় শেখ হাসিনার ।
এরপর সেনা সদরে রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সেনাপ্রধান জেনারেরল ওয়াকার-উজ-জামান। বৈঠক শেষে জনগণের উদ্দেশে কথা বলার সময় তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা ঘোষণা দিয়ে বলেন, শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।
এ দিন দুপুর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে উচ্ছসিত জনতা রাস্তায় নেমে মিছিল করে। শেখ হাসিনাবিরোধী স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় ঢাকা। ‘গুলি খাইছি কী হইছে, শেখ হাসিনা পালাইছে’- এমনসব স্লোগান দেয় উত্তাল ছাত্র-জনতা। পুরো ঢাকা জনতার দখলে চলে যায়।
শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে ছাত্র-জনতা। ভাঙ্গা হয় বিজয় স্মরণিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ আরও অনেক স্থাপনা।
অন্তবর্তী সরকারের রূপরেখা কী হবে, তা নিয়ে বঙ্গভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। সোমবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি।