পোশাক খাতের অস্থিরতার পেছনে স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী মালিকরা: রিজভী

“প্রত্যেকটি জায়গায় তারা সুতার টান দিচ্ছে এবং একটার পর একটা ঘটনা তারা এখানে ঘটাচ্ছে,” বলেন এই বিএনপি নেতা।

দেশের তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা চলছে, তাকে ‘পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী মালিকদের পরিকল্পিত চক্রান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, “এটা শুধু গার্মেন্টসে নয়, যেমন পাবর্ত্য চট্টগ্রামে একটা তুচ্ছ ঘটনাকে নিয়ে একটা বড় ঘটনা হল। প্রকৃত স্বৈরাচারের দুষ্ট চক্র প্রশাসক থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গায় তারা সুতার টান দিচ্ছে এবং একটার পর একটা ঘটনা তারা এখানে ঘটাচ্ছে।”

মঙ্গলবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানে পোশাক খাতের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কথা বলেন রিজভী।

এক মাসেরও বেশি সময় ধারে পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। তবে কিছু দাবি মানার ঘোষণা দেওয়ার পরও কাটেনি সংকট। প্রতিদিনই আশুলিয়া ও গাজীপুরে রাস্তায় নামছেন শ্রমিকরা, অনেক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে হচ্ছে, সংঘাতে প্রাণহাতিও ঘটেছে।

রিজভী বলেন, “আমরা তো আলমত দেখছি… গতকাল একটা গণ্ডগোল হয়েছে গার্মেন্টসে… ঘটনা হচ্ছে যে, যারা গার্মেন্টসের মালিক যারা, শেখ হাসিনার অত্যন্ত সুবিধাভোগী, তাদের গার্মেন্টসের লোকরা এসে অন্যান্য যেসব গার্মেন্টস আছে, যারা নিরপেক্ষ অথবা বিএনপির সমর্থিত লোকজনের গার্মেন্টসে এসে তারা হামলা করেছে। এটা তো আমরা তথ্য নিয়ে আপনাদের বলছি।

“কে নজরুল ইসলাম, কে সালাম মুর্শেদী– এরা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নয়? এরা আওয়ামী লীগের এমপি ছিল না? এদের গার্মেন্টস থেকে এসে একটা কৃত্রিমভাবে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করছে। য়াতে ছাত্র-জনতার এই বিপ্লব এটা যেন ব্যর্থ হয়ে যায়, এটা যেন টিকে থাকতে না পারে…এই ধরণের ষড়যন্ত্র ওরা করছে।”

‘ইউপি কেন বাতিল করছে না?’

রিজভী বলেন, “কী ভয়ংকর নিপীড়নের একেকটা কেন্দ্র বাংলাদেশে জনপদের পর জনপদ তারা (বিগত সরকার) তৈরি করেছে। এজন্য আমরা বার বার বলেছি এই জনপদ কারা তৈরি করেছিল। আওয়ামী লীগের এমপি, আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-পৌর সভার চেয়ারম্যান। এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সবাই সমর্থন করেছে। এটা জুলাই-অগাস্ট বিপ্লবের ফসল এই সরকার হয়েছে।

“তাহলে যারা এই ধরনের নিপীড়নের একেকটা কেন্দ্র তৈরি করেছিল, হিংস্র কুকুর দিয়ে যারা কামড় দেয়াতো, তাদের অংশ তো এখনো রয়ে গেছে। আপনি (অন্তবর্তীকালীন সরকার) ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি পরিষদ বাতিল করছেন না কেন? এরা তো সেই আওয়ামী লীগের গুণ্ডা-পাণ্ডা-সন্ত্রাসী। তারা কত হিংস্র-বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি উপদেষ্টা পরিষদকে বলতে চাই, আপনাদের ভয় কিসের? কে আপনার নিষেধ করছে? কারা আপনাদেরকে নিষেধ করছে যে, এটা করা যাবে না? এটা (ইউপি) রাখাকে তো হাসিনার দ্বারা যারা যারা নিপীড়িত, হাসিনার দ্বারা যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের প্রতি অবমাননা করা হচ্ছে।”

শেখ হাসিনার অনুচরেরা এখনও ‘প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে আছে’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “তারা এখন ঘাপটি মেরে থেকে নানাভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকার, তার প্রশাসনকে ও গণতান্ত্রিক শক্তির কাজ-কর্ম ব্যাহত করার জন্য তারা গোপনে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছে।”

‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম রবি বক্তব্য দেন।

পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শেখ রবিউল ইসলাম রবির আর্থিক সহযোগিতায় ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময়ে ঢাকা-১০ আসনের আহত রিকশা চালক সাইদুল ইসলামকে একটি ব্যাটারি চালিত নতুন অটোরিকশার চাবি ও কাগজপত্র তুলে দেন রিজভী।