২০২৩ সালের ২৫ মে নরসিংদী শহরে গুলিতে দুই ছাত্রদল নেতা নিহত হন; সেই মামলার আসামি খায়রুল কবির খোকন।
Published : 30 Apr 2024, 12:27 PM
নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুই নেতা নিহতের মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৮ বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
এর ফলে খোকনের কারামুক্তিতে আর বাধা নেই বলে তার আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর থেকে ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২৫ মে বিকালে নরসিংদী শহরে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের কাছে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর হামলায় জেলা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক (৩২) ও আশরাফুল ইসলাম (২০) গুলিবিদ্ধ হন।
ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাদেকুর রহমান সাদেক (৩২) মারা যান। পরদিন (শুক্রবার) সকালে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আশরাফুল ইসলাম (২০)।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচর উত্তরপাড়ার প্রয়াত আলাল উদ্দিন মেম্বারের ছেলে। তার মাথায় গুলি লেগেছিল বলে সংগঠনের নেতাকর্মী ও স্বজনরা জানিয়েছেন।
নিহত আশরাফুল ইসলাম নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাজমুল ইসলামের ছেলে। তার পিঠে গুলি লেগেছিল বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছিলেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর থেকে সংগঠনটির দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন।
কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিতরা সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও আন্দোলন করে আসছিলেন।
এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ২৫ মে দুপুরে সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে পিকআপভ্যান ও অন্তত একশ মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। বিক্ষোভ মিছিলটি চিনিশপুর বিএনপির কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল; ভেলানগর পার হয়ে চিনিশপুর সড়কে প্রবেশ করার পর কয়েকজন যুবক বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ করে। পরে তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করে। সাদেকুর রহমানের মাথায় গুলি লাগে। আশরাফুলও গুলিবিদ্ধ হন।
তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদেকুর রহমান মারা যান। পরদিন সকালে আশরাফুলও মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত সাদেকের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে বিএনপি নেতা খায়রুল কবীর খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি রেখে নরসিংদী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
খোকন গত বছরের ৫ জুন হাই কোর্টে হাজির হয়ে এ মামলায় আগাম জামিন পান। পরে নরসিংদীর আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়। এরপর একই বছরের ২৫ অক্টোবর তাকে ঢাকায় তার ভাইয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, নরসিংদীর একটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরপর এ বছরের মার্চে খায়রুল কবির খোকনকে জামিন দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে তার জামিন স্থগিত করেন চেম্বার আদালত।
মঙ্গলবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি শেষে তার জামিন বহাল থাকল।
পুরনো খবর
ছাত্রদল নেতা হত্যা: বিএনপি নেতা খায়রুল কবীর খোকন কারাগারে
বিএনপির খোকনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে নরসিংদী ছাত্রদলের বিক্ষোভ
বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন গ্রেপ্তার
নরসিংদীতে ছাত্রদল নেতা খুন: অভিযোগের আঙুল খোকনের দিকে
নরসিংদীতে ছাত্রদলের সংঘর্ষে আহত আশরাফুলও মারা গেছেন
নরসিংদীতে দুপক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে ছাত্রদল নেতা নিহত
নরসিংদীতে বিএনপি কার্যালয়ে ফের হামলা
‘খায়রুল কবির খোকন আমাদের গুলি করেছেন‘, অভিযোগ ছাত্রদল কর্মীদের