বঙ্গবন্ধুর পথ ধরেই আমাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত ও পরাজিত করে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেক্যুলার ধারায় কি আর ফেরা সম্ভব? আওয়ামী লীগই বা সে জন্য কতটুকু প্রস্তুত?
Published : 03 Aug 2023, 12:01 AM
কয়েক মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচিত হয়ে এক দল ক্ষমতায় আসবে আরেক দল বিরোধী দলের আসনে বসবে, শুধু এই সাধারণ হিসেবের মধ্যেই আগামী নির্বাচন সীমাবদ্ধ থাকবে না। দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজ আজ দ্বিধাবিভক্ত। বাংলাদেশের রাজনীতিও এখন মূলত দুই শিবিরে বিভক্ত। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে আরো বেশি দুর্নিবার হয়ে উঠেছে যে বিষয়টি, সেটা হলো, ১৯৭১—এর বিজয়ী শক্তি এবং পরাজিত শক্তির মুখোমুখি অবস্থান। এক পক্ষের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, অন্যপক্ষের বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা—বিরোধী শক্তিই এখন বিএনপিতে প্রবল এবং প্রধান। তারাই এই দলের নীতি-নির্ধারক।
একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা সক্রিয়ভাবে অপচেষ্টা করেছে, তারাই আজ বিএনপিতে নিয়ামক শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আগামী নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করছে রাজনীতির অনেক কিছু।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান ধারার রূপকার নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনিই বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শেখ মুজিব বাস্তব ঘটনাবলি অবলোকন করে বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গণহত্যা, যুদ্ধবিগ্রহ মানুষের সব রকম অকল্যাণ বয়ে আনে। সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র এবং মানবতাবাদই মানুষকে মুক্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। মুজিবের বাল্য ও কৈশোরকাল কেটেছে বাংলার গ্রামে, যেখানে তিনি গণতান্ত্রিক চেতনার অধিকারী সাধারণ মানুষের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তাঁর উচ্চশিক্ষা লাভ ঘটেছিল সেকালের আর দশজন শিক্ষিত মুসলমানের মতো কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। চল্লিশের দশকে কলকাতায় অবস্থান করে এবং মুসলিম ছাত্র-জনতার নেতা হিসেবে তিনি পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করেছিলেন। ১৯৩৯—৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যুদ্ধের ফলস্বরূপ তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ (তথা পঞ্চাশের মন্বন্তর), হিটলারের ইহুদিনিধন এবং অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ছেচল্লিশে কলকাতার দাঙ্গা এবং দেশবিভাগকালীন নানা স্থানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতি ঘটনা শেখ মুজিবকে বিচলিত করেছিল এবং মানবমুক্তির প্রকৃত পথের সন্ধান খোঁজার জন্য তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের স্বভাবজাত অসাম্প্রদায়িক মানবতাবোধও তাঁকে অসাম্প্রদায়িক সেক্যুলার চিন্তার দিকে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের জন্মলগ্নে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক নীতির প্রভাবে পূর্ববাংলার মুসলিম জনগণের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক চিন্তার সৃষ্টি হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুই বাংলার জনগণকে সে সাম্প্রদায়িক প্রভাব থেকে মুক্ত করেন এবং অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমকে রাষ্ট্রীয় নীতির একটি মূলস্তম্ভ রূপে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
সেক্যুলারিজমের অর্থ যদি ধর্মনিরপেক্ষতা বলে ধরে নেই, তবে শুধু সব ধর্মের সহাবস্থানেই তার অর্থ সম্পূর্ণরূপে পরিমাপ করা যায় না। রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা গ্রহণ করাই যথেষ্ট নয়। এ উক্তির সপক্ষে ভারতবর্ষের সংবিধানে উল্লিখিত ধর্মনিরপেক্ষতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যায়। সংবিধানে আছে বটে কিন্তু তাই বলে এটা বলা চলে না যে, সাম্প্রদায়িকতা সে দেশে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করা সত্ত্বেও সে দেশের সংবিধানের রক্ষক সংসদ সদস্যদের অনেকেই পার্লামেন্টে শপথ নেন ঈশ্বর ও আল্লাহর নামে। যুক্তরাজ্যের রাজা-রানি গির্জারও রক্ষাকর্তা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইবেল হাতে শপথ নিয়ে রাষ্ট্রীয় কার্যভার গ্রহণ করেন। এসব জেনে-শুনে আমাদের বিভ্রান্তি বেড়ে যায়।
সব ধর্মই ঘোষণা করেছে, সব মানুষ ভাই ভাই। অথচ আমরা দেখেছি, হিন্দুরা বৌদ্ধদের হত্যা করেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও হিন্দুদের প্রতি অসহিষ্ণু হয়েছে। ইহুদি ও খ্রিস্টান জন্মশত্রু, দীর্ঘকাল ধরে মধ্যপ্রাচ্য ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। আমরা দেখছি, একই সম্প্রদায়ের মধ্যে মারামারি হয়েছে ও হচ্ছে—যেমন শিয়া ও সুন্নি, রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে বিরোধ আজও লেগেই আছে। যুগে যুগে ধর্মবিদ্বেষ, গোষ্ঠীবিদ্বেষ মানুষকে অমানুষে পরিণত করছে। বর্তমানেও এই ধারা বজায় রয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশে।
প্রাক-রেনেসাঁ যুগে যে অঞ্চলে সেক্যুলার জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রস্থল ছিল তা ইউরোপ নয়, আরব ভূখণ্ড। ইবনে রুশদ, ইবনে সিনা, ইবনে খালদুন প্রমুখ মনীষীর মুক্তচিন্তা সে যুগেও গোঁড়া মোল্লাদের মনঃপূত হয়নি। মুক্তচিন্তার একটি পরিবেশ মুসলিম—অমুসলিম মনীষীদের চিন্তার বিনিময় ও তার সমৃদ্ধি সহজ ও স্বাভাবিক করে তুলেছিল। কিন্তু ‘ক্রুসেড’ সব পণ্ড করে দিয়েছিল। মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধের উন্মাদনা ও জেহাদের তিক্ততা মুসলিমদের ক্রমেই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলতে থাকে। আরব জগৎ ধর্মান্ধতার পথে অগ্রসর হয়। ধর্মযুদ্ধের দহন যদি আরব ভূখণ্ডকে এভাবে না পোড়াত, তবে রেনেসাঁ ও আনুষঙ্গিক সেক্যুলার চিন্তার প্রথম বিকাশ ঘটত আরব ভূখণ্ডেই এবং তা ঘটত ইউরোপীয় রেনেসাঁর কয়েক শত বছর আগে।
ইউরোপে চতুর্দশ, পঞ্চদশ, ষষ্ঠদশ শতাব্দী থেকে তৎকালীন গির্জাকেন্দ্রিক ধর্মের অনুশাসনকে উপেক্ষা করে রেনেসাঁর মানবমুক্তির প্রয়াস শুরু হয়। রেনেসাঁর যুগ থেকেই ইউরোপে মানুষের ধারণায় ও কর্মকাণ্ডে সেক্যুলারিজম নিশ্চিতভাবে রূপ পেতে থাকে। কোনো পারলৌকিক প্রত্যাশা নয়, ইহজাগতিক সুখ-দুঃখ, স্বপ্ন, সম্ভাবনাই রেনেসাঁ পরবর্তী চিন্তানায়কদের বেশি আকর্ষণ করে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল উৎকর্ষের যুগেও ধর্মের বিকৃতি যে কী ভয়াবহ হতে পারে তার নৃশংস রূপ আমরা উপমহাদেশে বিগত শতাব্দীব্যাপী প্রত্যক্ষ করেছি। ১৯৪৬—৪৭-এ মুসলমান হিন্দুকে, হিন্দু মুসলমানকে এবং অতঃপর ১৯৭১-এ মুসলমান মুসলমানকে ধর্মের নামে কী নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জীবন্ত সাক্ষী আমরা, বহু দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা, ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।
কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৯৪৭ সালে বাংলার মানুষরাই স্বেচ্ছায় মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান নামক কৃত্রিম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। দক্ষিণ-এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তের একাধিক জাতিগোষ্ঠী, যাদের ভাষা-সংস্কৃতি, রুটি-রুজি, পোশাক-পরিচ্ছদ সবই ভিন্ন রকমের, মিল শুধু ধর্মের, সেদিন ধর্মকে জাতীয়তার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্মের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শ পূর্ববাংলার মানুষকে সুবিচার দিতে ব্যর্থ হলো। পশ্চিম পাকিস্তানি শোষক ও শাসকচক্রের হাতে শোষিত ও বঞ্চিত হতে লাগল পূর্ববাংলার মানুষ। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল ভাষা আন্দোলন, সে আন্দোলনের স্রোতে ভেসে গেল দ্বিজাতিতত্ত্ব, ক্রমে ক্রমে বিকাশ লাভ করলো ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা। স্বৈরাচারী মুসলিম লীগের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সূচিত হলো গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন সেক্যুলার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বীজ রোপণ করে। তারপর ’৫৪-এর নির্বাচন, ’৬২-এর ছাত্র আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলন দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গড়া পাকিস্তানের পতন ত্বরান্বিত করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, চূড়ান্তপর্বে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর রচিত হয়। আন্দোলনের প্রতিটি পর্বে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
শুধু শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম জনগোষ্ঠী হয়তো এত অল্প কালপর্বে অসাম্প্রদায়িক ভাষাভিত্তিক সেক্যুলার জাতীয়তায় বিশ্বাসী হতে পারত না, যদি না সাম্রাজ্যবাদী আর পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শোষণ পরিবর্তনটাকে দ্রুততর করত। পশ্চিমাদের শোষণের অনিবার্য ফলস্বরূপ আমরা জোট বেঁধেছি প্রবল এক জাতীয়তাবাদী ও সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারার ঐক্যবোধের মাধ্যমে, যেমন প্রচণ্ড তাপ আর শক্তির প্রভাবে অঙ্গার রূপান্তরিত হয় হীরকখণ্ডে। তেমনি শেখ মুজিব ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করেছেন এমনকি কারাগারে বন্দি থেকেও। পশ্চিম পাকিস্তানি শোষণ-নির্যাতন এবং উৎপীড়নের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড গণপ্রতিরোধের মধ্য দিয়ে মুজিবের বিকাশ ও উদয় ঘটেছে শেখ মুজিব, মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা হিসেবে।
আধুনিক সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা আধুনিক যুগেরই সৃষ্টি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতাকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশে যে সেক্যুলার জাতীয়তার সূচনা হয়েছিল তার প্রথম মূর্ত রূপ ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ইউরোপীয় রেনেসাঁর অনুসরণে উপমহাদেশে প্রথম সামাজিক-সাংস্কৃতিক নবজাগরণকে বাংলার নবজাগরণ বা বাংলার রেনেসাঁস নামে অভিহিত করা হয়। নবজাগরণের যুগে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মনীষীর বিস্তারিত কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। উনিশ শতকের নবজাগরণ পূর্ববাংলার মুসলিম সমাজ ও নিম্নবর্ণের হিন্দু সমাজকে প্রভাবিত করতে পারেনি। ওই নবজাগরণের নানা প্রকার অসম্পূর্ণতা ছিল, যা বাঙালি জাতির পরিপূর্ণ বিকাশকে দীর্ঘকাল ধরে বাধাগ্রস্ত করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই অসম্পূর্ণ নবজাগরণকে সম্পূর্ণতা দান করেছেন। বস্তুত বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণায় এক নতুন যাত্রা সংযোজন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারায় পরিপূর্ণ রূপ দান করেছেন। নতুন মাত্রা সংযোজনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তার সুসম্পূর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্পর্শে বাংলাদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারায় ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ভাষাভিত্তিক, চেতনাভিত্তিক এবং সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, কিন্তু কোনোক্রমেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ নয়; এ হচ্ছে সেক্যুলারিজম ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশে সেক্যুলার চেতনা তথা ধর্মনিরপেক্ষতার উন্মেষ ও বিকাশের এই হচ্ছে গোড়ার কথা। এই পথে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের জন্ম।
স্বাধীন বাংলাদেশে ঐতিহাসিক অনিবার্যতার কারণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থাৎ সেক্যুলারিজমকে মৌলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। সংবিধানে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ ছিল নিম্নরূপ :
ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা :
ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য
ক. সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
খ. রাষ্ট্র কতৃর্ক কোনো ধর্মকে মর্যাদা দান,
গ. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার,
ঘ. কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার ওপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।
১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্রের আদেশ বলে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করেছেন এবং সে বিলুপ্তি আজও বহাল রয়েছে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বহু বছর অতিবাহিত হয়েছে। রাজনীতিতে ঘটেছে অনেক উত্থান-পতন। আজও বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত বঙ্গবন্ধুর সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে—বিপক্ষে আবর্তিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর পথ ধরেই আমাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত ও পরাজিত করে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেক্যুলার ধারায় কি আর ফেরা সম্ভব? আওয়ামী লীগই বা সে জন্য কতটুকু প্রস্তুত?
স্বাধীন বাংলাদেশে ঐতিহাসিক অনিবার্যতার কারণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থাৎ সেক্যুলারিজমকে মৌলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। সংবিধানে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ ছিল নিম্নরূপ :
ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা :
ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য
ক. সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
খ. রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে মর্যাদা দান,
গ. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার,
ঘ. কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার ওপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।
১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্রের আদেশ বলে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করেছে এবং সে বিলুপ্তি আজও বহাল রয়েছে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বহু বছর অতিবাহিত হয়েছে। রাজনীতিতে ঘটেছে অনেক উত্থান-পতন। আজও বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত বঙ্গবন্ধুর সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে—বিপক্ষে আবর্তিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর পথ ধরেই আমাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত ও পরাজিত করে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেক্যুলার ধারায় কি আর ফেরা সম্ভব? আওয়ামী লীগই বা সে জন্য কতটুকু প্রস্তুত?