সম্পর্ক ভাঙতে গিয়ে বেশিরভাগ সময়ে ভুল পন্থা অবলম্বন করা হয়। ফলে পরিস্থিতি হয় আরও জটিল।
সম্পর্ক ভাঙা মোটেই সুখের বিষয় নয়। এতে অন্তত এক পক্ষ আঘাত পায়।
লস অ্যাঞ্জেলেসের নিবন্ধিত সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক আডেল ক্যালাহার বলেন, “বিভিন্ন কারণে সম্পর্ক ভাঙার প্রয়োজন পড়ে। তবে আমি দেখেছি সম্পর্কের ইতি টানতে গিয়ে বেশিরভাগই সাধারণ কয়েকটি ভুল করেন।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “ব্রেকআপ’য়ের ক্ষেত্রে সাধারণত এক পক্ষ আঘাত পায়। তবে বিষয়টা আরও জটিল হয়ে যায় সঠিক কারণ না বলে লুকোচুরি খেললে। তাই সম্পর্ক যদি ভাঙতেই হয় তাহলে সম্মানের সাথে করতে হবে।”
তাই কয়েকটি ভুল পন্থা এড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
যোগাযোগ বন্ধ করা
‘ঘোস্টিং দ্য পার্সন’, অর্থাৎ কোনো রকম ব্যাখ্যা আলোচনা ছাড়া সঙ্গীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা বা হারায় যাওয়া- নৃশংস কাজের মধ্যে পড়ে।
এই রকম আচরণ করা মোটেই সুখকর নয়, বিশেষ করে যাকে আপনি একসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। মানসিক, শারীরিক আঘাত এড়াতে সঙ্গীকে সম্পর্কের ইতি টানার সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
পর্দার আড়ালে চলে যাওয়া
রোমান্টিক সম্পর্ক মানে সম্মানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া। সম্পর্ক ভাঙতে গেলেও সেদিকটা খেয়াল রাখা দরকার। দুইটা কথা লিখে কিংবা টেক্সট বা ইমেইল পাঠিয়ে পালিয়ে যাওয়াটা কাপুরুষের লক্ষণ। আর সুখকরও নয়।
নিজের মনোভাব সঠিকভাবে বোঝাতে বিভিন্ন পয়েন্টগুলো লিখে নিয়ে, মুখোমুখি বসে সম্পর্ক ভাঙার কারণগুলো বলাই হবে সঠিক কাজ। এক্ষেত্রে অপরপক্ষকে শান্তভাবে শোনার জন্য অনুরোধ করতে হবে, যেন ‘ব্রেইকআপ’য়ের কারণগুলো ব্যাখ্যা করা সহজ হয়।
মানুষকে দেখানো
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন সবাই ব্যবহার করেন। সেখানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করাও বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যাপার।
তবে মনে রাখতে হবে ফেইসবুক বা এই ধরনের মাধ্যমে ‘ব্রেইকআপ’ নিয়ে ‘শোঅফ’ করে অপরপক্ষকে সবার সামনে অপমান করা মোটেও মানবিক কাজ নয়।
তাছাড়া অন্য মানুষের গল্পের খোরাক হওয়ার দরকার কী?
সম্পর্ক হয় দুটি মানুষের মধ্যে। সেখানে বিচ্ছেদের বিষয়গুলো সম্মানের সঙ্গে দেখতে হবে। যাতে কোনো পক্ষই অপমানের শিকার না হন।
অস্ত্র হিসেবে শব্দের ব্যবহার
‘ব্রেকআপ’য়ের সময় ঝগড়া বিবাদ তর্ক হতেই পারে। আর এই সময় রেগে যাওয়া, নিজে বিরক্ত হওয়া ও আত্মরক্ষামূলক আচরণ করা স্বাভাবিক। আর এই সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখাও যায় না। তবে মনে রাখতে হবে কোনো বাজে শব্দ বলে ফেলা মানে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলা।
শব্দের, ভাষার শক্তি অনেক- বিশেষ করে যদি সঙ্গীর দোষ সম্পর্কে ভালোমতো জানা থাকে। তারপরও বাজে শব্দ ব্যবহার করা এড়াতেই হবে। কারণ সম্পর্কের বিচ্ছেদ যেখানে দরকার সেখানে বাজে কথা খরচ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আর বলে ফেলা কথা পিস্তলের গুলির মতো, তখন দুঃখ প্রকাশ করলেও আঘাতের চিহ্ন থেকে যায় সারাজীবন।
প্রতারণা
একটি সম্পর্কে থেকে অন্যজনের সঙ্গে জড়ানো মোটেই ঠিক না। এটা অসম্মানের। আর অপরপক্ষ এতে চরমভাবে আঘাত পাবেই। যা তাকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, অন্যদের প্রতিও বিশ্বাস হারাবে।
অপরদিকে একটি সম্পর্ক শেষ না করে অন্যের সঙ্গে জড়ানো মানে সেই ‘অন্য’ মানুষটাকেও অপমান করা।
তাই যতই কষ্টের হোক, অন্য একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে পূর্বের সঙ্গীর সাথে সম্পূর্ণভাবে ইতি টানতে হবে।
বন্ধুদের পক্ষ বেছে নিতে জোর করা
বহুদিন ধরে সম্পর্কে জড়িয়ে থাকলে দুই পক্ষেরই একই বন্ধু থাকা স্বাভাবিক। তবে সম্পর্ক ভাঙার পর বন্ধুদের একটি পক্ষ বেছে নিতে জোর করা মোটেই ঠিক না।
বন্ধুরা যদি চায় তারা দুই পক্ষের সাথেই যোগাযোগ রাখবে সেটা তাদের ব্যাপার। যদি জোর করা হয় তবে বন্ধু হারানোর সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।
মিথ্যা বলা ও ছুতা খোঁজা
সম্পর্ক ভাঙার ক্ষেত্রে নিজে সৎ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। অপরপক্ষের কাছে এই ব্যাপারে স্বচ্ছ থাকা উচিত।
সবকিছু ঠিক আছে এরকম ভাব ধরে দীর্ঘদিন সম্পর্কটাকে টেনে নিয়ে যাওয়া যেমন ক্লান্তিকর তেমনি সময়ের অপচয়। এতে কোনো পক্ষরই কোনো উপকার হয় না।
তাই সম্পর্ক ভাঙা অবশ্যম্ভাবী হলে কষ্ট হলেও সময় নষ্ট না করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া হবে সঠিক কাজ।
আরও পড়ুন