ভাঙা হৃদয় সারতে

সম্পর্ক ভাঙার পর কত দিন লাগে হৃদয়ের ক্ষত শুকাতে? সঠিক দিনক্ষণ কি আছে!

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2019, 01:27 PM
Updated : 4 Dec 2019, 01:57 PM

যদিও রেনেসাঁ ব্যান্ডের গানের কথায় বলা যায় ‘হৃদয় কাদা মাটির কোনো মূর্তি নয়, আঘাত দিলে ভেঙে যাবে!’ - তারপরও মানুষের হৃদয় ভাঙে। পুরানো সম্পর্কের কথা চিন্তা করে দিন-সপ্তাহ-মাস চলে যায়। তারপরও শুকায় না হৃদয়ের ক্ষত।

সম্পর্ক-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে, ‘নর্দান ইলিনয় ইউনিভার্সিটি’র কাউন্সেলিং বিভাগের প্রধান ড. সুজানি ডেগস-হোয়াইট বলেন, “সম্পর্ক যত দীর্ঘ এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অর্থাৎ ‘কমিটেড’ থাকবে সেই সম্পর্ক ভুলতেও হয়ত বেশি সময় লাগবে।”

তবে এই অবস্থাকে সংখ্যায় প্রকাশ করতে হলে ‘ক্লিনিকাল সাইকোলজিকাল সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা’ এবং ‘ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ টেক্সাস’য়ের করা একটি গবেষণার আলোকে বলা যায়, হৃদয় ভাঙার পর সাধারণত তিন মাস পর ভালোলাগা বোধ ফিরে আসতে থাকে।

আর এই অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়ার কয়েকটা পন্থাও ‍দিয়েছেন ড. সুজানি।

বন্ধুদের সঙ্গে থাকা: বিশেষ করে বন্ধুদের মধ্যে কারও হৃদয় ভাঙার অভিজ্ঞতা আছে বা সম্প্রতি ‘ডিভোর্সড’ হয়েছে এরকম পরিচিত বন্ধু থাকলে তার সঙ্গে সময় কাটানো হবে ভালো পন্থা। তাদের কাছ থেকে জানা যাবে কীভাবে তারা এই অবস্থা থেকে উঠে এসেছে। তাছাড়া তাদের মধ্যে যে অন্তদৃষ্টি থাকবে সেই বোধ অন্য কারও মাঝে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

অনলাইন থেকে অফলাইন: বেশিরভাগ মানুষই প্রাক্তন কী করছে সেটার জানার জন্য ফেইসবুক বা ইন্সটাগ্রামে ঢুঁ দিতে থাকেন। ‘সেক্স রোল’ জার্নালে প্রকাশিত ২০১৭ সালে করা এক পর্যবেক্ষণের ফলাফলে বলা হয় শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ এই কাজ করেন।

যদি প্রাক্তনকে ‘ডিলিট’, ‘আন ফ্রেন্ড’, ‘ব্লক’ বা ‘আনফলো’ করতে নাই চান তবে অবশ্যই তার ফেইসবুকে ঝাঁপিয়ে পড়া চলবে না। ভুলতে হলে এড়াতে হবে তার সবরকম ‘পোস্ট’ দেখা। মনে রাখতে হবে ভালো কিছুর জন্যই আপনারদের মধ্যে ‘ব্রেইক আপ’ হয়েছে।

নিজেকে ব্যস্ত রাখা: ভেবে দেখুনতো ‘সম্পর্ক’ হওয়ার আগে কী করতেন? কোন বিষয়গুলো আপনাকে ভালো লাগাতো। বই পড়া, সিনেমা দেখা, বেড়াতে যাওয়া- এই বিষয়গুলো নতুন করে ফিরিয়ে আনুন নিজের জীবনে। প্রয়োজনে দ্বিগুন পরিমাণে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো সেচ্ছাসেবক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। গবেষণায় দেখা গেছে সেচ্ছা-কার্যক্রম শরীর সুস্থ আর মন প্রফুল্ল রাখে।

অলসতা নয়: হেডফোন কানে গুঁজে গান শুনতে শুনতে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে হাঁটুন। পাশাপাশি প্রিয় কোনো খাবার খেয়ে ফিরে আসুন বাসায়। কর্মক্ষম থাকলে শরীরে ভালো থাকার রাসায়নিক বিক্রিয়া চলতে থাকে। পাশাপাশি মন ভালো রাখার হরমন সেরোটনিন’য়ের নিঃসরণ বাড়ে।

‘ফ্রন্টিয়ার ইন সাইকোলজি’ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, সবচেয়ে ভালো পন্থা হল নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করা। হতে পারে সেটা নতুন কিছু শেখার জন্য কোনো ক্লাসে ভর্তি হওয়া কিংবা ব্যায়ামাগারে গিয়ে দলবদ্ধভাবে ইয়োগা বা শরীরচর্চা করা।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া: আমাদের দেশে অনেকেই ভাবেন - ‘পেটে ভাত নেই আবার যাব মনোবিজ্ঞানীর কাছ’। মনে রাখতে হবে ‘পেটে ভাত’ না থাকলেও অসুস্থ হলে যেমন ডাক্তারের কাছে যেতে হয় তেমনি মনের রোগ সারাতে মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে হয়। এক্ষেত্রে নিজেকে পাগল ভেবে ‘পাগলের ডাক্তার’য়ের কাছে যাব না বলে বসে থাকা যাবে না।

‘থেরাপিস্ট’য়ের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়াতে নতুন কিছু বের হয়ে আসবেই। কারণ পেশাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব মনোবিজ্ঞানীরা যা বলবে তা আরও কেউ বলতে পারবে না।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন