Published : 30 Mar 2025, 12:50 PM
রোজার পর ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করতে চাই সঠিক পরিচর্যা ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস। ফেইশল, স্ক্রাবিং কিংবা প্রাকৃতিক প্যাক—যা-ই হোক না কেন, সঠিক নিয়ম মানলেই মিলবে ঈদের দিন কাঙ্ক্ষিত উজ্জ্বলতা!
উৎসবে সুন্দর ও স্নিগ্ধ দেখাতে ত্বকের যত্ন নিতে হয় আগে থেকেই। সুন্দর ত্বক পাওয়া একদিনে সম্ভব নয়।
এর জন্য চাই ঠিকঠাক পরিচর্যা। টানা এক মাস রোজা রাখার কারণে ত্বক পানিশূন্য হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
মেইকওভার ফিনেস’য়ের স্বত্বাধিকারী ফারহানা চৈতি তার গ্রাহকদের একটি নিয়মিত স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, “ক্লিনজিং ও এক্সফোলিয়েশনের পাশাপাশি ত্বকের পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ধরে রাখা জরুরি।”
কাজের প্রয়োজনে যাদের দৈনিক মেইকআপ করতে হয়, তাদের জন্য দিনের শেষে মেইকআপ সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করাও গুরুত্বপূর্ণ, যেন লোমকূপের গোঁড়া বন্ধ হয়ে না যায়। পাশাপাশি, মাস্ক ও সেরাম ব্যবহার করলে ত্বকের স্বাস্থ্য অনেকটাই উন্নত হয়।
ফারহানা পরামর্শ দেন, “ত্বকের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার কথাও ভুলবেন না; কারণ, এসব অভ্যাস ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
রেড বিউটি স্যালনের কর্ণধার ও রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনও ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করার জন্য সঠিক পরিচর্যা প্রয়োজন। এর মধ্যে বেশি জরুরি হল খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা।”
“ভাজাপোড়ার পরিবর্তে যদি তরল খাবার; যেমন- পানি, শরবত, রসালো ফল, সুপ ইত্যাদি বেশি খাওয়া হয় তাহলে পানিশূন্যতা অনেকটাই হ্রাস পায়”- বলেন তিনি।
তরল খাবার শরীরের পাশাপাশি ত্বকও ভালো রাখে।
এছাড়া ত্বকের পুষ্টির জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার; যেমন- গাজর, বিট, তাজা কমলা অথবা এগুলোর রস বেশি গ্রহণের পরামর্শ দেন এই রূপবিশেষজ্ঞ। আর চিনিজাতীয় খাবার বাদ দেওয়া উচিত। এতে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
ত্বকের অভ্যন্তরীণ পুষ্টির পাশপাশি বাইরে থেকেও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
আফরোজা পারভীন বলেন, “নামাজের কারণে বারবার অজু করতে হয়, এতে ত্বক ভালো থাকে।” পাশাপাশি ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করার কথা মনে রাখতে হবে।”
ঈদের তিন-চার দিন আগে স্যালনে গিয়ে যদি পছন্দের ফেইশল করা যায়, তাহলে খুব ভালো হয়। তবে সময় বা সুযোগের অভাবে স্যালনে যাওয়া না হলে ঘরেই ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন এই রূপবিশেষজ্ঞ।
এক্ষেত্রে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এমন কোনো প্যাক ব্যবহার এবং ডিপ ক্লিনজিং করে ত্বকের ময়লা উঠিয়ে ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো যেতে পারে।
প্রাকৃতিক প্যাক হিসেবে টক দই, হলুদ, মধু এবং সঙ্গে চালের গুঁড়া বা বেসন মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন আফরোজা পারভীন।
ত্বক বেশি শুষ্ক হলে এর সাথে অ্যালোভেরা মেশালে উপকার মিলবে। ঘরে তৈরি এমন প্যাকগুলোর ব্যবহার উজ্জ্বল রাখার পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে।
হাত, পায়ের ত্বকের যত্ন
হাত, পায়ের পরিচ্ছন্নতা বলতে আমরা কেবল সাবান দিয়ে হাত-পা পরিষ্কার করাকে বুঝি, এটা ঠিক নয়।
উৎসবের আগে হাত, পায়েরও চাই বাড়তি যত্ন।
এই প্রসঙ্গে ফারহানা বলেন, “প্রথমে কুসুম গরম পানিতে শ্যাম্পু গুলিয়ে তাতে হাত ও পা কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর স্ক্রাবার ব্যবহার করে ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে হবে।”
নখ, নখের চারপাশ ভালোমতো পরিষ্কার করার পর উন্নত মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার কথা ভোলা যাবে না। এছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে হাত-পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা বিশেষ উপকারী।
হাইড্রা ফেইশল: ত্বকের যত্নে নতুন বিপ্লব
ত্বকের যত্নে আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে ‘হাইড্রা ফেইশল অন্যতম। এটি একটি ‘নন-ইনভেসিভ স্কিন কেয়ার থেরাপি’, যা ক্লিনজিং, এক্সফোলিয়েশন, এক্সট্রাকশন, হাইড্রেশন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সংযোজন নিশ্চিত করে। ফলে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর।
অরা বিউটি লাউঞ্জের পরিচালক নিশাত আদনান তারিক বলেন, “হাইড্রা ফেইশলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়, লোমকূপ পরিষ্কার হয় এবং ত্বকের গভীরে পুষ্টি সরবরাহ হয়। এটি ব্রণ, দাগ ও অসম ত্বকের সমস্যার সমাধানেও কার্যকর। পাশাপাশি আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে ত্বককে কোমল ও স্বাস্থ্যকর রাখে।”
রমজানে ত্বকের পানিশূন্যতা কমাতে হাইড্রা ফেইশলের ভূমিকা
রোজায় দীর্ঘ সময় পানি ও খাবার গ্রহণ না করার কারণে শরীরের মতো ত্বকেও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এসময় হাইড্রা ফেইশল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি ত্বকের গভীরে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রবেশ করিয়ে ত্বক সতেজ রাখে। ফলে রোজার মাসে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে, ত্বকের লাবণ্য বজায় থাকে এবং অতিরিক্ত রুক্ষতা দূর হয়।
এই তথ্য জানিয়ে বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভের প্রধান ও রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি হাইড্রা ফেইশল করার পাঁচটি ধাপের কথা উল্লেখ করেন
ক্লিনজিং ও এক্সফোলিয়েশন: প্রথম ধাপে, ত্বকের উপরিভাগের ময়লা ও মৃত কোষ সরিয়ে ফেলা হয়।
অ্যাসিড পিল: হালকা অ্যাসিড প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা আলগা করা হয়।
এক্সট্র্যাকশন: লোমকূপের গভীরে জমে থাকা তেল ও ময়লা ভ্যাকুয়াম প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিষ্কার করা
হয়।
হাইড্রেইশন: হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, পেপটাইডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ানো হয়।
সুরক্ষা ও পুষ্টি: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ সেরাম প্রয়োগ করা হয়।
হাইড্রা ফেইশলের যে দুই ধরনের অ্যাসিড পিল ব্যবহার করা হয় তা হল গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এবং স্যালিসাইলিক অ্যাসিড।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড: এটি একটি আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সহায়তা করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি ত্বকের টেক্সচার বা গঠন উন্নত করে ও লোমকূপ পরিষ্কার রাখতে কার্যকর।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড: এটি একটি বেটা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, যা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে অতিরিক্ত তেল ও ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে তৈলাক্ত ও ব্রণ-প্রবণ ত্বকের জন্য উপকারী।
এই অ্যাসিড পিল খুবই হালকা মাত্রায় ব্যবহার করা হয়, যাতে ত্বকে কোনো গুরুতর প্রতিক্রিয়া না হয়। তবে সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
ব্যবহৃত মেশিন ও সময়
হাইড্রা ফেইশলের একটি বিশেষ ধরনের ভ্যাকুয়াম-ভিত্তিক মেশিনের মাধ্যমে করা হয়, যা ত্বকের গভীর স্তর পর্যন্ত কার্যকরভাবে কাজ করে।
ফেইশলের আগে প্রস্তুতি
ফেইশলের আগে ও পরে করণীয়
যা করা যাবে
যা করা যাবে না
ত্বকের ধরন ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হাইড্রা ফেইশল সাধারণত সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী হলেও সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে এটি কিছুটা লালচেভাব সৃষ্টি করতে পারে। যাদের ত্বকে গুরুতর ব্রণ বা সংক্রমণ আছে, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত না-ও হতে পারে। তবে এটি একটি নিরাপদ ও ব্যথাহীন প্রক্রিয়া, যা কোনো ‘ডাউনটাইম’ ছাড়াই করা যায়।
বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন ‘স্কিন কেয়ার ক্লিনিকে হাইড্রাফেইশলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের এই ট্রিটমেন্টে ত্বকে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আসে, তাই এটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আগেও করানো যায়।
যারা ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত ত্বক পরিচর্যা করতে পারেন না, তাদের জন্য হাইড্রা ফেইশল দ্রুত, কার্যকর সমাধান।
ত্বকের প্রাকৃতিক জেল্লা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে এটি হতে পারে উপকারী পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন
ঈদ মেইকআপের ধারা: পুরানো স্টাইলে নতুনের সংমিশ্রণ