Published : 23 Mar 2025, 06:22 PM
ঈদের আনন্দে নতুন পোশাক নয় বরং সাজসজ্জাতেও নতুনত্ব রাখতে চান নারীরা। তবে মেইকআপের ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়।
এই বছর ঈদে মেইকআপের স্টাইলগুলোতে রয়েছে ‘ওয়াই-টু-কে’ সময়ের প্রভাব, আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যময় সৌন্দর্যের সমন্বয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের ঈদে মেইকআপের ধার বিশেষভাবে দেখা যাবে ‘ওয়াই-টু-কে’র প্রভাব, যেখানে গ্লসি লিপস, ফ্রস্টেড আইশ্যাডো এবং স্নিগ্ধ আই-ব্রাউজের মতো স্টাইল ফিরে এসেছে।
পাশাপাশি আধুনিক সৌন্দর্য ধারণার সাথে তাল মিলিয়ে থাকছে ‘গ্লাস স্কিন’ এবং ‘নো মেইকআপ’ মেইকআপ-এর মতো প্রাকৃতিক ধারা।
এই বছর মেইকআপে প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উপাদানের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, যেখানে পরিবেশবান্ধব (সাসটেনেইবল) এবং ‘ক্লিন বিউটি’ প্রচলিত হচ্ছে।
উজ্জ্বল গোলাপি ব্লাশ
ঈদে ত্বকে সতেজ এবং তরতাজাভাব আনতে গোলাপি ব্লাশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে।
জারা’স বিউটি লাউঞ্জ’য়ের রূপবিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি বলেন, “ত্বককে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তোলাই গোলাপি ব্লাশের প্রধান কাজ।”
“বসন্তের পর এই সময়ে প্রকৃতিতে একটা সতেজ ভাব থাকে। ঈদও এমন সময়ে হচ্ছে। তাই প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে কোমল গোলাপি ব্লাশ খুবই উপযুক্ত। এটি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দেখায় পাশাপাশি ত্বকে বাড়তি ‘গ্লো’ আনে।”
তবে এই ধারা নতুন নয়।
২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে গোলাপি ব্লাশ ব্যবহারের প্রচলন ছিল। তবে এখন আবার ফিরে এসেছে। বিশেষ করে প্রাইমারি ব্লাশের চাইতে নরম গোলাপি ব্লাশের ব্যবহার বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রাইমারি ব্লাশ প্রধানত বেশ তীক্ষ্ণ এবং গাঢ় হয়। যেমন- লাল ও মেরুন রং। এতে মেইকআপ ভারী মনে হয়। অন্যদিকে, নরম গোলাপি ব্লাশ হচ্ছে আরও স্নিগ্ধ এবং প্রাকৃতিক রং।
লো-কি আই-ব্রাউজ
নব্বই দশকের খুব পাতলা এবং খুবই ‘ডিফাইনড ব্রাউজ’য়ের দিন শেষ। এখন মেইকআপ করতে ন্যাচারাল বা স্বাভাবিক, হালকা এবং ‘ফেদারি আই-ব্রাউজের দিকে ঝুঁকছেন মেইকআপ প্রেমীরা।
‘ফেদারি ব্রাউজ’য়ের ভ্রুতে হালকা পাউডার বা জেল ব্যবহার করে হয়। এতে ভ্রুর চুলগুলো আলাদা আলাদা এবং সোজা থাকে। এতে ভ্রু’র গাঢ়ভাব কম হয়।
ফারহানা রুমি বলেন, “এখন ত্বকের মেইকআপ এবং আই ব্রাউজের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক সংযোগ প্রয়োজন, যেখানে আই-ব্রাউজের আকার খুবই নরম এবং হালকা হয়।”
এছাড়া ঈদের সময়ে আবহাওয়া কিছুটা গরম থাকতে পারে। তাই এ ধরনের ‘লো-কি ব্রাউজ’ মেইকআপ বেশ উপযোগী হবে। কারণ এতে অল্প পরিমাণে পণ্য ব্যবহার করা হয় এবং বেশ স্বাভাবিক দেখায়।
ওয়াই-টু-কে গ্লসি লিপস
১৯৯০ এবং ২০০০ সালের শুরুতে গ্লসি লিপস ছিল এক ধরনের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট; যা বর্তমান মেইকআপ ধারায় ফিরে এসেছে।
এটি শুধু আধুনিক ভাব তৈরি করতেই নয় বরং ঠোঁটের ত্বককে আর্দ্র দেখানোর জন্য আদর্শ পদ্ধতি।
“যাদের ঠোঁট শুষ্ক এবং খুব ফাটে তারা ঈদে গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করতেই পারেন”- পরামর্শ দেন এই রূপবিশেষজ্ঞ।
গ্লসি লিপস ট্রেন্ডে মেইকআপ স্টাইলিং করতে এখন লিপ গ্লস এবং লিপ টিন্ট- খুব জনপ্রিয়। আবার চাইলে দুটোর মিশ্রণেও প্রাকৃতিক এবং স্নিগ্ধ ভাব আনা যায়।
ওয়াই-টু-কে প্রভাব কী
ওয়াই-টু-কে মেইকআপ স্টাইলগুলো ছিল বেশ উজ্জ্বল, এবং সাহসী। তখনকার মেইকআপের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল যা অনেক কিছু এ সময়ের মেইকআপ ট্রেন্ডের সাথে মিলে যায়।
গ্লসি লিপস ছাড়াও ফ্রস্টেড আইশ্যাডো স্টাইলে শিমার এবং ফ্রস্টেড আইশ্যাডো দিয়ে চোখে উজ্জ্বল এবং ঝলমলে ‘লুক’ আনা হত।
সোনালি, রুপালি এবং ধূসর রংয়ের আইশ্যাডো ব্যবহার করা হত। চোখে শাইনিং বা উজ্জ্বল রংয়ের ব্যবহার ছিল।
চোখের মেইকআপে লাল, নীল, হলুদ এবং সবুজ রং ব্যবহার করতে কেউই দ্বিতীয়বার ভাবত না। পাশাপাশি লম্বা এবং ঘন চোখের আইলাইনারও ছিল সে সময়ের ধারা। এতে চোখের আকৃতি অনেক বেশি দৃশ্যমান এবং তীক্ষ্ণ দেখাত।
গ্লাস স্কিন
নব্বই সালের দিকে ‘গ্লাস স্কিন ট্রেন্ডে’ বিশেষভাবে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বাড়াতেই বেশ নজর দেওয়া হয়। তবে গ্লাস স্কিন মানে শুধু আর্দ্রতা নয় বরং এটি এমন এক ধরনের ‘উজ্জ্বলতা’ আনে যা সজীব এবং চকচকে আভা তৈরি করে।
“গ্লাস স্কিনের জন্য হালকা কভারেজ এবং অতিরিক্ত হাইলাইটার ব্যবহারের পাশাপাশি ত্বকের ন্যাচারাল রেডিয়েন্স বা ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা যা ত্বক নিজেই তৈরি করে- সেটা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এই ট্রেন্ড বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, কারণ দেশের আর্দ্র আবহাওয়া এবং গরমে এটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনার জন্য দারুণ উপায়” বলছিলেন এই রূপ বিশেষজ্ঞ।
শিমারি প্যাস্টেল আইশেডো
এবারের ঈদে আইশ্যাডোতে শিমারি প্যাস্টেল বা ফ্রস্টেড শেডস বেশ জনপ্রিয় হবে। এটি চোখে উজ্জ্বল ও স্নিগ্ধ লুক আনে। প্যাস্টেল শেডস যেমন- সোনালি, হালকা গোলাপি বা ল্যাভেন্ডার রং ঈদে চোখের সাজকে বিশেষ করে তুলতে পারে।
শিমারি আইশেডো ব্যবহার করে মেইকআপ স্টাইলিং করা হবে বেশ সুবিধাজনক। কারণ এতে সহজেই কোমল এবং উজ্জ্বল ভাব আসে।
ন্যুড লিপস
এই ট্রেন্ড ঈদে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ন্যুড লিপস মানে এমন একটি ধারা যা ঠোঁটকে প্রাকৃতিকভাবে আরও সুন্দর করবে। এই ভাব তৈরি খুবই সহজ, যার জন্য প্রাকৃতিক ঠোঁটের রংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে একটি স্নিগ্ধ ন্যুড শেইড ব্যবহার করতে হবে এবং আঙুল দিয়ে সেটি মিশিয়ে নিতে হবে।
এই ধারাটি ঈদে খুবই জনপ্রিয় বিশেষত যাদের মেইকআপে অতিরিক্ত ভারী ভাব পছন্দ নয়।
‘নো মেইকআপ’ মেইকআপ
এটি এমন এক ধরনের মেইকআপ স্টাইল যা সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতেই ব্যবহার হয়। স্টাইলটি খুবই সতেজ ও পরিষ্কার ভাবের মাধ্যমে ত্বকের নিজস্ব উজ্জ্বলতা প্রকাশ করে।
রোদ এবং গরমে ‘নো মেইকআপ’ মেইকআপ একটি আদর্শ স্টাইল। এতে কম পণ্য ব্যবহার হয় ফলে ত্বক নিশ্বাসও নিতে পারে ভালো ভাবে। আবার ত্বকের প্রকৃত সৌন্দর্যও ফুটে ওঠে।
পরিবেশবান্ধব এবং ক্লিন বিউটি
পরিবেশবান্ধব (সাসটেইনেবল) এবং ‘ক্লিন বিউটি’ এখন সারা বিশ্বেই আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ঈদেও এটি বেশ প্রাধান্য পাবে বলে জানান, ফারহানা রুমি।
বিভিন্ন মেইকআপ তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পরিবেশবান্ধব মোড়ক এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে শুরু করছে। এ ধরনের মেইকআপ ত্বক এবং পরিবেশের জন্য নিরাপদ। ঈদে ত্বকের জন্য নিরাপদ, টক্সিক উপাদানবিহীন মেইকআপ ব্যবহার জনপ্রিয় হবে, আশা প্রকাশ করেন এই রূপবিশেষজ্ঞ।
ছবি সৌজান্যে: জারা’স বিউটি লাউঞ্জ।