নির্দিষ্ট কোনো ফল ওজন কমানো বা বাড়ানোতে প্রভাব ফেলে না।
Published : 16 Oct 2023, 08:12 PM
দৈনিক খাদ্যতালিকায় ফল রাখা মানে স্বাস্থ্যোপকারী উপাদান শরীরে চালান করা। আর কারও কারও ক্ষেত্রে ওজন কমানোতে সহায়ক।
অনেক সময় ফলে থাকা প্রাকৃতিক চিনিকে ওজন কমানোর অন্তরায় হিসেবে ধরা হয়। তবে মনে রাখতে হবে বাজারে পাওয়া যায় এরকম প্যাকেটজাত চিনি দেওয়া ফলের জুস আর প্রাকৃতিক ফলে থাকা শর্করা এক নয়।
এই বিষয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদ সিনথিয়া স্যাস হেল্থডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, “স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে ফল ওজন কমানোতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।”
কোন ফল ওজন কমানোতে সহায়ক?
“সত্যি বলতে নির্দিষ্ট কোনো ফল ওজন কমাতে পারেন না”- বলেন স্যাস।
কারণ নানান রকম ফলের ভীড়ে একটা কথাই মনে রাখতে হবে, ওজন কমানোর লক্ষ্যে খেতে হবে পরিমিত মাত্রায়।
স্যাস বলেন, “ফলে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান- ভিটামিনস, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ও প্রিবায়োটিকস শুধু দীর্ঘমেয়াদে অসুস্থতা দূরে রাখতেই পারে তা নয়, বরং স্বাস্থ্যকর ওজনও ধরে রাখতে সাহায্য করে।”
এমনকি ফল না খেয়ে শুধু সবজি খেলে দেহ কিছু অসামান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়ার হাত থেকে দূরে থাকে। এছাড়া গবেষকরা ফল খাওয়ার সাথে ওজন কমানোর সম্পর্কও প্রমাণ করেছেন।
কোরিয়ার ‘চনবাক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’, ‘সিয়োনাম ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল’ ও ‘জেআইএনআইএস বিডিআরডি ইন্সটিটিউট’য়ের করা গবেষণার ফলাফল বলে, স্থূল ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বেশি ফল খেয়েছে তাদের ওজন কমতে দেখা গেছে দ্রুত মাত্রায়।
এছাড়া বস্টনের ‘হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের করা গবেষণায় ১ লাখ ৩০ হাজার প্রাপ্ত বয়স্কের ওপর ২৪ বছর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সময়ের পরিক্রমায় ফল গ্রহণের সাথে ওজন কমার সম্পর্ক রয়েছে।
তাই ভিন্ন প্রকার ফল খেয়ে দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ স্যাস।
ফল খাওয়ার উপকারিতা
ফলে থাকা কার্বস শরীরে শক্তি দেয়। তাই কর্মব্যস্ত দিনে অবশ্যই ফল খাওয়া উপকারী।
ব্যায়াম করার আগে ছোট একটা কলা খাওয়া বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে বেরি ধরনের ফল দিয়ে নাস্তা করলে ক্লান্ত অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা কমে। এছাড়া বিকালে নাস্তা হিসেবে আপেলের সঙ্গে কাঠবাদাম দিতে পারে বাকি দিনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি।
ব্যায়াম বা দিন শুরুর আগে ফল খেলে যে কার্বোহাইড্রেইটস পাওয়া যায় তা সহজেই হজম হয় আর সারাদিনের শক্তি দিতে পারে।
যে পরিমাণ ফল খাওয়া উচিত
‘ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার’ সুপারিশ করে যে, বেশিরভাগ প্রাপ্ত বয়স্কের প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে আড়াই কাপ ফল খাওয়া উচিত। আর ফলের জুস খাওয়ার চাইতে আস্ত টাটকা ফল খাওয়া বেশি উপকারী।
যে কোনো উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত নাস্তার চাইতে ফল স্বাস্থ্যকর খাবার। সঠিক মাত্রায় ফল খেলে উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাবারের প্রতি ঝোঁক কমে।
যেভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে ফল
স্যাস বলেন, “এর কারণ হল ফল খেলে তৃপ্তির অনুভূতি হয় দ্রুত। আর অন্যান্য মিষ্টি খাবার খাওয়ার আকর্ষণও কমায়। কারণ ফল নিজেই একটা মিষ্টি খাবার। একারণে ভারী খাবারের পর মিষ্টি কিছু খাওয়ার চাইতে ফল খাওয়া উপকারী।”
প্রাকৃতিক আস্ত ফলে থাকা চিনি অবশ্যই অন্যান্য খাবারে আলাদাভাবে যুক্ত করার চিনি থেকে আলাদা। আর প্রক্রিয়াজত চিনি সেটা ‘আমন্ড মিল্ক’ বা সকালের চা বা কফির মাধ্যমে গ্রহণ করলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকেই।
কারণ ফলে থাকা প্রাকৃতিক চিনি তুলনামূলক-ভাবে কম ঘনিভূত অবস্থায় থাকে। পাশাপাশি পাওয়া যায় পানি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
যেমন একটি বড় কমলা থেকে মিলবে- ২১.৭ গ্রাম কার্বস, ১৭ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি, ৪ গ্রাম আঁশ, ৫৩ মিলিগ্রামস ভিটামিন সি, ১৮১ মিলিগ্রামস পটাসিয়াম ১৪ মিলিগ্রামস ফসফরাস।
অন্যদিকে এক চা-চামচ চিনি থেকে আসবে প্রায় ৪ গ্রাম কার্বস। আর থাকে না কোনো পুষ্টি উপাদান। তাই চিনিযুক্ত খাবার আর টাটকা ফল কখনও এক পাত্রে মাপা যাবে না।
মোদ্দা কথা হল
পুষ্টি উপাদানের আধার হল ফল। আর কখন, কী পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে সেটার ওপর ভিত্তি করে দেহের ওজনে প্রভাব ফেলবে। সম্পূর্ণভাবে ফল বাদ দিলে ওজন কমানোর যাত্রায় বিরূপ প্রভাবের পাশাপাশি সার্বিক স্বাস্থ্যেও বাজে প্রতাপ পড়তে পারে।
অন্যদিকে সঠিক পরিমাণে ফল খেলে ওজন কমানোর লক্ষ্য মাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন