প্রতিদিন একটা করে আপেল খাওয়ার অভ্যাস নাকি ডাক্তারকে দূরে রাখে। অর্থাৎ রোগবালাই হয় না, তাই ডাক্তারের কাছেও যেতে হয় না।
তবে ওই আপেলটা যদি কেউ খোসা ছিলে খান তাহলেও কি রোগবালাই থেকে সুরক্ষার মাত্রা একই পরিমাণ থাকবে?
আবার আপেলের মতো করে অন্যান্য ফল ও সবজিও যদি খোসাসহ খাওয়া হয় তাহলে উপকারিতা বেশি পাওয়া যাবে?
কীটনাশকের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য থেকে ফল, সবজির খোসা বাদ দেওয়া কতটুকু কার্যকর?
ফল ও সবজির খোসা খাওয়া নিয়ে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে জানিয়েছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড ইনফর্মেইশন কাউন্সিল (আইএফআইসি)’য়ের ‘ফুড টেকনোলজি’ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ড. তামিকা সিম্স।
ধারণা: কীটনাশক ব্যবহারের কারণে খোসা খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ
ফসল নষ্টকারী পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে কীটনাশকের ব্যবহার নতুন কোনো ঘটনা নয়। আর এই কীটনাশক যেহেতু ফসলের গায়ে ছিটানো হয় তাই ফল ও সবজির খোসায় এই অস্তিত্ব থাকবেই। তাই অনেকেই মনে করেন খোসা ছাড়িয়ে খেলে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ড. সিম্স বলছেন, “একটি ফল কিংবা সবজির গায়ে যতটুকু কীটনাশক থাকে তা আসলে একজন মানুষের শরীরের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার’য়ের ‘এগ্রিকালচার মার্কেটিং সার্ভিস’ একাধিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে ফল সবজির গায়ে লেগে থাকা রাসায়নিক কীটনাশকের পরিমাণ মানুষের স্বাভাবিক সহ্য ক্ষমতার অনেক নিচে। তাই এতে কোনো ঝুঁকি নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএসডিএ’ প্রতিবছর প্রকাশ করে ‘পেস্টিসাইড ডেটা প্রোগ্রাম (পিডিপি) অ্যানুয়াল সামারি’। এই প্রতিবেদনের জন্য শতাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য তারা পরীক্ষা করেন, যার মাঝে ফল, সবজি তো আছেই। আরও থাকে মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, শষ্য, মাছ, চাল, পানি ইত্যাদি।
২০১৯ সালের ‘পিডিপি অ্যানুয়াল সামারি’ থেকে জানা যায়, প্রায় ১০ হাজার তাজা, হিমায়ীত কিংবা প্রক্রিয়াজাত খাবারে রাসায়নিক কীটনাশকের মাত্রা মানুষের সহ্য ক্ষমতার নিচে। ২০২০ সালের প্রতিবেদনেও একই ফলাফল উঠে আসে।
তাই ফল কিংবা সবজির খোসা যদি খেতে চান তবে ভালো ধুয়ে নিলেই তা নিরাপদে খেতে পারেন।
ধারণা: অর্গানিক মানে কীটনাশক নেই
প্রচলিত চাষে কৃষক রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। আর পুরোপুরি কম্পোস্ট সার নির্ভর চাষকে বলা হয় ‘অর্গানিক’। আর এখানেই আছে আরেকটি বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা যা ভাঙতে চান ড. সিম্স।
ফল, সবজি যে পদ্ধতিতেই ফলানো হোক না কেনো তাতে কীটনাশক ব্যবহার হয়। কোনোটাতেই পুষ্টিগুণের ঘাটতি নেই। তাই ফসল ফলাতে রাসায়নিক সার কিংবা কম্পোস্ট সার যেটাই ব্যবহার হোক না কেনো নিরাপদে নিশ্চিন্তে তা খাওয়া যাবে।
সব ফসলের ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি খাওয়া।
কোন সার ব্যবহার করে তা ফলানো হলো, কীটনাশক ব্যবহার হল কি-না, খোসা খাবেন না ফেলে দেবেন এসব বিষয় নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করে ভালো করে ধুয়ে খেয়ে ফেলতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য থাকতে হবে।
ধারণা: খোসা আবর্জনা
ড. সিম্স বলেন, “এটা মোটেই সঠিক নয়। হয়ত আপনার খোসা ফেলে ফল ও সবজি খেতে বেশি স্বাদ লাগে। কিছু রেসিপি আছে যার জন্য খোসা ছাড়িয়ে নিতেই হয়। তাছাড়া খাওয়ার যোগ্য যেকোনো ফল, সবজির খোসা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। খোসাসহ খাওয়াই বরং বেশি উপকারী।”
আবার ছাড়িয়ে নেওয়া খোসাও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। চপ, বড়া বানিয়ে খাওয়া যায়। ভর্তা খাওয়া যায়। সুপ ও ব্রথ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। খাবার ও পানীয় পরিবেশনের সৌন্দর্য বাড়াতে খোসা কাজে লাগে।
রূপচর্চাতেও ফল ও সবজির খোসা অনেক কাজে আসে। এগুলোর কোথাও যদি কাজে না আসে তবে তা টবে লাগানো গাছের সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কম্পোস্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে।
তাই খোসা ময়লার পাত্রে ফেলে খাদ্য বর্জ্য না বাড়িয়ে তা ব্যবহার করার চেষ্টা করা উচিত।
আরও পড়ুন