বেড়াতে গেলে ঘরবাড়ি আর যন্ত্রপাতির নিরাপত্তার জন্য কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা জরুরি।
Published : 27 Apr 2025, 05:41 PM
ভ্রমণ মানেই স্বস্তি, মুক্তি আর একটু হালকা হওয়া। তবে যাত্রার আগের প্রস্তুতি যেন ঠিক ততটাই চাপের।
ব্যাগ গোছানো, টিকিট পরখ করা, দরজা-জানালা ঠিক আছে কিনা দেখা। এই তালিকায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করতে ভুল করা যাবে না। সেটা হল কিছু নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংযোগ খুলে রাখা।
কারণ দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতিতে যন্ত্রে আগুন লাগা, বিদ্যুৎচাপে পুড়ে যাওয়া বা অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ এবং ‘কোপাইলটস ফর কোপ্যারেন্টস’ নামের একক অভিভাবকদের নিয়ে গঠিত একটি ভ্রমণ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নিকোল কানিংহ্যাম বলেন, “অনেকেই জানেন না, ছুটিতে যাওয়ার আগে কিছু জিনিস খুলে রাখলেই কেবল নিরাপত্তা নয়, বিদ্যুৎ বিলও কমে।”
গেইমিং কনসোল
যেমন- প্লেস্টেশন, এক্সবক্স, নিনটেন্ডো’র সুইচ সারাক্ষণ সংযুক্ত থাকলে এগুলো প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করে।
নিকোল কানিংহ্যামের মতে, “শুধু বিদ্যুৎ অপচয়ই নয়, এই যন্ত্রগুলো খুবই স্পর্শকাতর। হঠাৎ বিদ্যুৎ ওঠানামা হলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
বাংলাদেশে অনেক বাড়িতেই বিদ্যুৎচাপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র না থাকায় এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
ডেস্কটপ কম্পিউটার
কম্পিউটার চালু থাকুক বা না থাকুক, প্লাগে লাগানো থাকলে বা বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকলে এটা বিদ্যুৎ টানে।
ডেস্কটপ কম্পিউটার বিদুৎ ওঠানামায় নষ্ট হয়ে গেলে শুধু যন্ত্র নয়, গুরুত্বপূর্ণ ডেটাও হারিয়ে যেতে পারে। ক্লাউড ব্যাকআপ থাকলেও ক্ষতি হবে।
লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিচালিত যন্ত্র
স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিচালিত যন্ত্র যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক, ই-স্কুটার ইত্যাদি অতিরিক্ত চার্জে থাকলে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে, যা আগুন লাগার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই এগুলো চার্জে রেখে বাইরে না যাওয়াই ভালো।
চার্জার
মার্কিন ভ্রমণ লেখক জনি সুইট বলেন, “আমি সবসময় ল্যাপটপ আর ফোন চার্জার খুলে ফেলি, কারণ এগুলো সঙ্গে নিতে হয়। ফলে এতে বাড়িতে বিদ্যুৎ অপচয়ও হয় না।”
চার্জারগুলো সারাক্ষণ বিদ্যুৎ টানে, যাকে বলে ‘ভ্যাম্পায়ার ড্রেন’। এটা প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ থেকে সাত শতাংশ বিদ্যুৎ বিলে প্রভাব ফেলতে পারে।
কেশ পরিচর্যার যন্ত্র
চুলে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যেমন- হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার বা কার্লার অনেকেই ভুলে চালু করে রেখে বাইরে চলে যায়। এগুলো অনেক সময় স্বনিয়ন্ত্রিত-ভাবে বন্ধ হলেও, সেই প্রযুক্তি যদি বিফল হয় তাহলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ছোট রান্নার যন্ত্রপাতি
কফি মেইকার, এয়ার ফ্রায়ার, ব্লেন্ডার, রাইস কুকার- এসব ছোটখাট যন্ত্র সারাক্ষণ প্লাগে লাগিয়ে রাখা হয়। তবে ছুটিতে গেলে এগুলো খুলে রাখা উচিত।
কারণ ‘স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার’ নেয় এসব যন্ত্র। ফলে অনেক সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যেতে পারে। ছোট যন্ত্রগুলোর কারণে প্রায়শই সার্কিট ওভারলোড হয়, যা বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মাইক্রোওয়েভ
খেয়াল না করলেও মাইক্রোওয়েভ কিন্তু সবসময় বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কেবল যন্ত্রটির ঘড়ি সচল রাখতে। যদি সেটা আলাদা করে খুলে ফেলা যায়, তবে ভালো।
তবে অনেক বাসায় মাইক্রোওয়েভ বিল্ট-ইন (স্থায়িভাবে সংযুক্ত) থাকে। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে প্রয়োজনে ফিউজ বোর্ড থেকে সেই সার্কিটটা বন্ধ করে রাখা যেতে পারে।
টেলিভিশন
স্মার্ট টিভি বা ফ্ল্যাট স্ক্রিন টেলিভিশনগুলো খুবই স্পর্শকাতর। বিদ্যুৎ ওঠানাম হলে এগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বিশেষ করে ব্যয়বহুল টিভিগুলো ‘সার্জ প্রটেক্টর’ বা ‘স্ট্যাবিলাইজার’ লাগিয়েও ছুটি চলাকালীন আন-প্লাগ করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আরও পড়ুন
চুলে উষ্ণ যন্ত্র ব্যবহারের সাধারণ ভুল