মূত্রথলি অতি সক্রিয় করার পাশাপাশি যৌনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে দীর্ঘমেয়াদি চাপ।
Published : 27 Apr 2025, 04:59 PM
চাকরি, সংসার, সন্তান, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা এইসব মিলিয়ে প্রতিনিয়ত ‘স্ট্রেস’ বা মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এমনকি অনেকেই এটা মানতেই নারাজ যে তারা চাপের ভেতর আছেন।
তবে জানেন কি, এই চাপ শুধু মাথার ভেতর নয়, এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পুরো শরীরের ওপর। বিশেষ করে মূত্রথলি, হরমোন, ঘুম, যৌনস্বাস্থ্য এবং হৃদ্যন্ত্রের কার্যক্ষমতায়।
‘ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা’স কলেজ অফ মেডিসিন’য়ের ইউরোলজিস্ট ডা. জামিন ব্রাক্ষ্মভাট সিএনএন ডটকমকে বলেন, “মানসিক চাপ এমন একটি বিষয়, যা প্রথমে বুঝতে না পারলেও এক সময় তা পুরো শরীরের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে।”
তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী চাপের পার্থক্য
মানসিক চাপ সাধারণত দুই ধরনের হয়: তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী।
তীব্র চাপ হল হঠাৎ করে ভয় বা উদ্বেগ তৈরি হওয়া, যেমন- পরীক্ষার আগে বুক ধড়ফড় করা বা হঠাৎ কোনো শব্দে চমকে ওঠা। এই চাপ সাধারণত কম সময় স্থায়ী হয় এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং এটা সতর্ক করে তোলে।
তবে দীর্ঘস্থায়ী চাপ অনেক বেশি ক্ষতিকর। আর্থিক সংকট, পারিবারিক সমস্যা, অফিসের চাপ বা স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তা করাই এই ধরনের চাপ তৈরি করে। এটি ধীরে ধীরে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া
চাপ অনুভব করলে মস্তিষ্কের ‘হাইপোথ্যালামাস’ অংশ সক্রিয় হয়ে দুইটি প্রক্রিয়া চালু করে— ‘সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’ এবং ‘হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-অ্যাডরিনাল (এইচপিএ) অ্যাক্সিস’।
এতে অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল নামক দুটি হরমোন নিঃসৃত হয়।
অ্যাড্রেনালিন শরীরকে তৎপর করে তোলে— হৃদস্পন্দন বাড়ায়, রক্তচাপ বাড়ায়, নিঃশ্বাস দ্রুত করে এবং পেশিতে রক্ত সরবরাহ বাড়ায়।
অপরদিকে, কর্টিসল দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। রক্তে চিনি বাড়ায়, হজম, প্রজনন ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
এই দুই হরমোন স্বল্পমেয়াদি চাপ সামাল দিতে সাহায্য করলেও, দীর্ঘমেয়াদি চাপে কর্টেসলের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সেটা ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
চাপ ও মূত্রথলি
“কখনও কি খেয়াল করেছেন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা বক্তৃতার আগে বারবার প্রস্রাব চাপছে? এটি হরমোনজনিত প্রতিক্রিয়া”- বলেন ডা. ব্রাক্ষ্মভাট।
তার কথায়, “চাপ সরাসরি ব্লাডার বা মূত্রথলিকে প্রভাবিত করে। এতে ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ, জরুরি অনুভূতি বা কখনও কখনও প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দেয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ’ জানায়- চাপ ও উদ্বেগ বেড়ে গেলে ‘ওভারঅ্যাকটিভ ব্লাডার’ বা অতিসক্রিয় মূত্রথলির সমস্যা বাড়ে।
যৌনজীবনে প্রভাব
চাপ শুধু মনের ওপর নয়, যৌনজীবনের ওপরেও প্রভাব ফেলে।
কর্টিসল বেড়ে গেলে পুরুষদের টেস্টোস্টেরন এবং নারীদের ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। ফলে ‘লিবিডো’ বা যৌন-আগ্রহ কমে।
পুরুষদের ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’ দেখা দেয় এবং নারীদের যৌনতায় উত্তেজনা বা অর্গাজমের সমস্যা হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)’য়ের তথ্যানুসারে- মানসিক চাপ দীর্ঘমেয়াদে দাম্পত্য সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব যৌনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ঘুমের ব্যাঘাত
চাপের ফলে তৈরি হওয়া কর্টেসল ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে হয়ত ঘুমোতে পারছেন না বা ঘুমালেও বারবার জেগে উঠছেন। আবার সকালে ঘুম ভাঙার পরও ক্লান্তি কাটছে না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘স্লিপ ফাউন্ডেশন’য়ের তথ্য মতে, দীর্ঘস্থায়ী চাপ ঘুমের গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। ফলে পরদিন কাজে মনোযোগ কমে, অবসাদ তৈরি হয় এবং শরীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
হৃদ্রোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি
চাপ দীর্ঘমেয়াদে হৃদ্যন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ জানায়, দীর্ঘমেয়াদি চাপ সরাসরি রক্তচাপ বাড়ায় এবং পরোক্ষভাবে ধূমপান, মদ্যপান, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া এবং অলস জীবনযাপনের দিকে ঠেলে দেয়।
এছাড়া কর্টিসল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ায়। ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং বিষণ্নতার ঝুঁকিও তৈরি করে।
যা করা যায়
কোনো জাদুমন্ত্রে মানসিক চাপ কমানো যায় না। বরং কিছু নিয়মিত অভ্যাসের পরিবর্তনই এখানে মূল ভূমিকা রাখে।
যেমন:-
ডা. ব্রাক্ষ্মভাট বলেন, “চাপ পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব নয়। তবে যদি বুঝতে পারেন চাপ কোথা থেকে আসছে এবং কীভাবে শরীরকে প্রভাবিত করছে, তাহলে আগেভাগেই ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
আরও পড়ুন