দূরে থাক মানসিক চাপ

প্রাণ খুলে হাসা, গান শোনা এমনকি ফলের রস পান করলেও মনে প্রশান্তি আসতে পারে।

তানভীর মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2015, 10:52 AM
Updated : 14 Dec 2015, 10:55 AM

প্রতিদিনের একঘেঁয়েমি জীবনে মানসিক চাপ খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। মানিসসেক চাপ মনের পাশাপাশি শরীরের উপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে দৈনন্দিন জীবনে ব্যঘাত ঘটে বিভিন্ন ভাবে। তাই যতটা সম্ভব মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়।

প্রাণ খুলে হাসুন: অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে বাঁচতে প্রাণ খুলে হাসা খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি। অতিরিক্ত কাজের কারণে মানসিক এবং শারীরিক চাপ বেড়ে যাওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। এক্ষেত্রে হাসি চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রাণ খুলে হাসতে প্রিয় কোনো কমেডি শো দেখা যেতে পারে। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, হাসিতামাশাও চাপ মুক্তির চমৎকার উপায়।

এছাড়াও মজার কোনো স্মৃতিও মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবার জোরে হাসার সঙ্গে দেহের প্রতিটি অন্ত্রে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন প্রবেশ করে, সেই সঙ্গে বাড়ে রক্তসঞ্চালন, ফলে চাপ কমে আসে।

পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানো: পোষা প্রাণীরা যে শুধু শর্তবিহীন ভালোবাসা দেয় তা নয়, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো স্বাস্থ্যকরও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিজের পোষা প্রাণীর সঙ্গে মাত্র কয়েক মিনিট সময় কাটালেও দেহে সেরোটোনিন, প্রোল্যাকটিন, অক্সিটসিন ইত্যাদি ভালো লাগার হরমোনের নিঃসৃত হয়। অন্যদিকে চাপ সৃষ্টিকারী হরমোনগুলোর নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। ফলে রক্তচাপ ও দুশ্চিন্তা কমার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

হাঁটুন:
সেরা শরীরচর্চাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হাঁটা। হাঁটার ফলে দেহে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা শরীরে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে। দৈনিক আধা ঘণ্টা হাঁটা চাপ কমাতে দারুণ উপকারী।

ফলের রস পান করুন: গবেষকরা জানান কমলা লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি, যা কর্টিসলের মতো মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোনের মাত্রা কমিয়ে আনে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন- কমলালেবু, আঙুর, স্ট্রবেরি ইত্যাদির রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

গান শুনুন: বিক্ষিপ্ত মন শান্ত ও চাপমুক্ত করতে গান শোনার জুড়ি নেই। মৃদু লয়ের এবং পছন্দের গান শুনে মানসিক চাপ ভুলে থাকা সম্ভব।

গলা ছেড়ে গান গাওয়াও চাপ মুক্তির জন্য বেশ উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, গান গাওয়ার ফলে মানসিক চাপ দ্রুত কমে আসে। শুধু চাপ মুক্তিই নয়, গান গাওয়ার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের নেওয়ার পরিমাণও বাড়ে, ফলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

তবে এক্ষেত্রে ‘হেভি মেটাল’ বা অতিরিক্ত দ্রুত লয়ের গান এড়িয়ে চলা উচিত। বরং হালকা ও শান্ত সংগীত বেছে নিতে হবে।

কাজের স্থান গুছিয়ে রাখুন: কাজের পরিবেশে অগোছালো থাকলে তা মানসিক চাপ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। অফিসের ডেস্ক বা বাসা, যেটাই হোক না কেনো, কাজের পরিবেশটি গুছিয়ে রাখা উচিত।

যৌনমিলন: মানসিক চাপ কমানোর একটি উপায় যৌনমিলন। এতে রক্তচাপ কমে, তাছাড়া সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে সম্পর্কও মধুর করে। যৌনমিলন ভালো ঘুমেরও সহায়ক।

ইয়োগা:
চাপ থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম এবং পুরানো একটি পদ্ধতি ইয়োগা। ইয়োগা হচ্ছে ধ্যান ও শরীরচর্চার সমন্বয়। এটি দেহ ও মন দৃঢ় করে পেশি শিথিল করে। তবে ইয়োগা সঠিক পদ্ধতিতে করা অত্যন্ত জরুরি।

গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস: সঠিক উপায়ে শ্বাস প্রশ্বাস শুধু দেহমন শিথিলই করে না, সেই সঙ্গে কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ইয়োগা করার সঠিক পদ্ধতি অনেকেরই জানা নেই, তারা নিয়মিত শ্বাসচর্চা করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতেও মানসিক চাপ কমানো সম্ভব।

শ্বাসচর্চার জন্য পিঠ সোজা করে বসুন বা দাঁড়ান। হাতের দুটো তালু পেটের উপর স্থাপন করুন। খুব ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করুন ও দম ছাড়ুন। এবার শ্বাস গ্রহণ করে পাঁচ সেকেন্ড ধরে রেখে আবার পাঁচ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে চর্চা করে দম ধরে রাখার সময় দশ সেকেন্ড পর্যন্ত বাড়িয়ে নিন।

গরম পানীয়: এক কাপ গরম চা বা কফি আপনাকে চাপ থেকে মুক্তি দেবে। চা বা কফির ক্যাফেইন চাপ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ক্লান্তি দূর করতেও চা ও কফি সহায়ক।

ঘুমানো: গবেষণায় দেখা গেছে ১৫ মিনিটের ঘুম চাপ কমিয়ে আনে এবং দেহকে চাঙ্গা করে।

প্রচ্ছদের প্রতীকী মডেল: মাহা। ছবি: দিপ্ত।