বিষণ্নতার সাথে মাসিকের ব্যথা জোড়ালো হওয়ার জীনগত সম্পর্ক রয়েছে।
Published : 01 Dec 2024, 07:01 PM
প্রায় ৯০ শতাংশ নারী ঋতুস্রাবে সময় ব্যথাতে ভোগার ঝুঁকিতে থাকেন। এমনকি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরও এই সম্ভাবনা থেকে যায়।
আর এই ব্যথা তীব্র হওয়ার সাথে বিষণ্নতার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
‘ব্রিফিংস ইন বায়োইনফর্মেটিকস’য়ে প্রকাশিত চীনের জিয়াংসু’তে অবস্থিত ‘জিয়াওটং-লিভারপুল ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা জানান, নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক জিন বা বংশাণুসহ অন্যান্য প্রভাবকের সাথে বিষণ্নতার কারণে মাসিকের ব্যথা তীব্র হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ডা. জন মোরারোস সিএনএন ডটকম’কে ইমেইল মারফত বলেন, “বিশ্বে নারী স্বাস্থ্যের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলে বিষণ্নতা এবং ঋতুস্রাবের ব্যথা। আমাদের গবেষণাটি ছিল এই বিষয়ে বিষদভাবে জেনে নারীদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।”
মাসিক চলাকালী ব্যথার নাম ‘ডিসমেনোরিয়া’, যা শ্রোণী দেশে বা পেটে রক্তস্রাব শুরু হওয়ার পর থেকে তিনদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
গবেষণার জন্য ৬ লাখ ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী এবং পূর্ব এশিয়ার ৮ হাজার জনগোষ্ঠীর তথ্য নেওয়া হয়। যেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল ইউকে বায়োব্যাংক স্টাডি, ‘সাইকিয়াট্রিক জেনোমিকস কনসোর্টিয়াম এবং ফিনজেন থেকে।
“এরপর ‘বায়োইনফরমেটিক্স’ পদ্ধতি গ্রহণ করে পর্যালোচনা করা হয়। যা আমাদের জীনগত নিদর্শন ও জীবতাত্ত্বিক পথের সন্ধান দানের মাধ্যমে বিষণ্নতার সাথে মাসিকের ব্যথার সম্পর্ক খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে”- বলেন ডা. মোরারোস।
গবেষণায় দেখা গেছে বিষণ্নতার সাথে ‘ডিসমেনোরিয়া’র জোরালো সম্পর্কটা ১.৫১ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
গবেষকরা আর দেখতে পান, বিষণ্নতার কারণে নিদ্রাহীনতায়ে আক্রান্ত হন অনেকে। যা মাসিকের ব্যথার মাত্রা আরও বাজে পর্যায়ে নিয়ে যায়।
চিকিৎসা দেওয়ার সময় এই বিষয়গুলো প্রায় সময় এড়িয়ে যাওয়া হয়।
আমেরিকান কলেজ অফ অবস্ট্রেসিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্ট’য়েল ‘ক্লিনিকাল কনসেনসাস-গাইনোকলজি’ কমিটির প্রধান ডা. অ্যানি-মারি অ্যামিস ওয়েলশ্লাগার এই বিষয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “প্রাথমিকভাবে ‘ডিসমেনোরিয়া’ হওয়ার কারণ হল ‘প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস’ নাম রাসায়নিকের অতি সক্রিয়তা। যে জন্য জরায়ু সংকোচন প্রসারণ হয় মাসিক চক্রের সময়। ফলে ব্যথা্ হয়। যে কারণে ‘আইব্রুফেন’ ব্যথা কমাতে খুব ভালো কাজ করে, কারণ এটি ‘প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস’ দমাতে পারে।”
তবে ব্যথার তীব্রতা নির্ভর করবে জীনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর। অনেকেই কাজেই মাসিকের ব্যথা স্বাভাবিক বিষয়।
বিষণ্নতার ও ব্যথাযুক্ত মাসিকের সময় নিয়ন্ত্রণের পন্থা
যদি ‘ডিসমেনোরিয়া’তে আক্রান্ত হতে হয়, তবে কয়েকটি বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন ডা. অ্যামিস ওয়েলশ্লাগার।
প্রথমত- মনে রাখতে হবে শুধু বিষণ্নতার কারণেই ব্যথা তীব্র হয় না। দ্বিতীয়ত হল যদি ব্যথা কমানোর ওষুধ বা ‘হিট প্যাড’ বা গরম ভাপ দেওয়ার পরও ব্যথায় আরাম বোধ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কারণ ‘ডিসমেনোরিয়া’তে আক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে ‘ইউটারাইন ফাইব্রোইডস’- যা জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের এক ধরনের ‘সিস্ট’ অথবা ‘এন্ডোমেট্রিওসিস’।
এই ধরনের শরীরিক অবস্থার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞারা বিষণ্নতা কমাতে নানান ধরনের পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারেন। এছাড়া নিজের মতো মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়াম, ইয়োগা, চাপ কমানোর কৌশল, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে।
আরও পড়ুন