যে কারণে টেস্টোস্টেরোন মাত্রা জানা উচিত

বয়স ত্রিশের কোঠায় গেলে পুরুষদের টেস্টোস্টেরোন পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2022, 06:57 AM
Updated : 12 Oct 2022, 06:57 AM

শুধু যৌনক্ষমতা নয়, টেস্টোস্টেরোন হরমোনের অভাবে পুরুষের কর্মশক্তি কমে আর পেশিক্ষয় হয়।

টেস্টোস্টেরোনের নাম শুনলে প্রথমেই মনে হতে পারে যৌনক্ষমতার কথা। তবে পুরুষদের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ হরমোন আরও অনেক কাজের কাজী।

সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’য়ে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান রিসার্চ সার্ভিস’য়ের ফ্যামিলি মেডিসিন’ বিভাগের করা গবেষণার ফলাফল অনুসারে, টেস্টোস্টেরোনের স্বল্পতার কারণে পেশি ক্ষয় হয়, কর্ম ও যৌন ক্ষমতা কমে। এছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী রোগের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতায় ভুগতে হতে পারে।

তবে এই হরমোন কার ক্ষেত্রে কতটা কম সেটার নির্দিষ্ট কোনো মাত্রা নেই। কারণ প্রাকৃতিকভাবে একেকজনের টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা স্বাভাবিকতা একেক রকম।

তাই নিজের টেস্টোস্টেরোনের স্বাভাবিক মাত্রা জানা না থাকলে আর ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে টেস্টোস্টেরোন পরীক্ষায় মাত্রা স্বাভাবিক দেখালেও সেটা বিশ্বাস না করার পরামর্শ দেন যুক্তরাষ্ট্রের রয়াল ওক’য়ের ‘বিউমন্ট হসপিটাল’য়ের প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ মেডিকেল অফিসার ও ইউরোলজি’র প্রধান ডা. অ্যানানিয়াস সি. ডিয়োকনো।

ইনসাইডার ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “যদি কোনো পুরুষকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা কী? সে হয়ত মাথা চুলকাবে, কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারবে না। কারণ ডাক্তার কখনও তাকে এই পরীক্ষার কথা বলেনি। তবে বয়স ৩০ থেকে ৩৫ মধ্যে সব পুরুষের এই হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত।”

স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বলতে যা বোঝায়

বিষয় হল, এই হরমোনের স্বাভাবিক কোনো মাত্রা ঠিক করা নেই। মানুষভেদে মাত্রার তারতম্য ঘটে। আর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তা জানা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, সাধারণভাবে সুস্থ একজন পুরুষের টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বয়স ভেদে প্রতি ডিসিলিটারে ২৬০ থেকে ৯০০ ন্যানোগ্রাম পর্যন্ত থাকে।

২৫০ থেকে ৩০০ ন্যানোগ্রাম হলে ধরে নেওয়া হয় মাত্রা কম।

তবে ডা. ডিয়োকনো এই বিষয়ে সাবধান করে বলেন, “এই মাত্রা সব ক্ষেত্রে ঠিক নাও হতে পারে। ধরা যাক, কারও পরীক্ষার ফলাফলে টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা এসেছে ৪০০ ন্যানোগ্রাম। স্বাভাবিকভাবে এটা উচ্চ মাত্রা। তবে এই মানুষটার টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা প্রাকৃতিকভাবে যদি ৭০০ ন্যানোগ্রাম হয়ে থাকে, সেই হিসেবে হবে কম মাত্রা।”

তাই নিয়মিত হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমেই আসলে জানা সম্ভব টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা ঠিক আছে কিনা। আর সেটা শুরু করা উচিত বয়স ত্রিশ থেকেই।

টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা কম হলে

বয়সের কারণে এই হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে তরুণদের মাঝেও টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা কম থাকতে দেখা যায়। আর সেটার প্রভাব মানসিক ও শারীরিক দুই ক্ষেত্রেই পড়ে।

যেমন- যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। মাথা শূন্য লাগতে পারে। বিষণ্নতা, মনমেজাজের ওঠানামা ও অবসাদে ভোগা। পেশি গঠনে সমস্যা হয়।

ডা. ডিয়োকনো বলেন, “যত কম টেস্টোস্টেরোন ততই বাড়বে এই ধরনের সমস্যা।”

টেস্টোস্টেরোনের থেরাপিতে ঝুঁকি নেই

ডা. ডিয়োকনো বলছেন, “টেস্টোস্টেরোন থেরাপির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। আগে মনে করা হত, উচ্চমাত্রায় টেস্টোস্টেরোন থাকলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।”

তবে বর্তমানে উল্টো ভাবা হচ্ছে। কারণ বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর টেস্টোস্টেরোনের মাত্রার কারণে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ‍ঝুঁকি কমেছে।

স্বল্প টেস্টোস্টেরোনের কারণে যে পেশির ক্ষয় হয়, সেখান থেকে দেখা দেয় স্থূলতা। পাশাপাশি কমে বিপাক প্রক্রিয়া।

ডা. ডিয়োকনো ‘সেজ জার্নালস’য়ে প্রকাশিত ‘বস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড ইউরোলজি’ বিভাগের করা গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, চিকিৎসকের নির্দেশনায় সঠিক মাত্রায় টেস্টোস্টেরোন থেরাপির মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা নিরাপদ মাত্রায় বাড়ানো যায়।

তিনি বলেন, “আর এই বিষয়ে যত গবেষণা হবে ততই মঙ্গল বয়ে আনবে।”

আরও পড়ুন

Also Read: যেসব খাবার মূত্রত্যাগের মাত্রা বাড়ায়

Also Read: রক্তে বেশি হরমনের মাত্রা, প্রোস্টেইট ক্যান্সারের আশঙ্কা

Also Read: রজোবন্ধের নানান উপসর্গ

Also Read: হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে করণীয়

Also Read: হরমোনের উপর ব্যায়ামের প্রভাব