রক্তে বেশি হরমনের মাত্রা, প্রোস্টেইট ক্যান্সারের আশঙ্কা

রক্তে মাত্রাতিরিক্ত ‘টেস্টোস্টেরন’ এবং বৃদ্ধিবর্ধক হরমোন আছে যেসব পুরুষের তাদের ‘প্রোস্টেইট ক্যান্সার’য়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে সতর্ক করছেন গবেষকরা।

লাইফস্টাইল ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2019, 08:49 AM
Updated : 2 Nov 2019, 08:49 AM

প্রায় ২ লাখ পুরুষ নিয়ে করা এই গবেষণা প্রথমবারের মতো এই দুটি হরমোনের প্রভাব তুলে ধরেছে। যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে ‘প্রোস্টেইট ক্যান্সার’য়ের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে বলে দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড’য়ের গবেষকরা।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং গবেষণার প্রধান লেখক রুথ ট্রাভিস বলেন, “‘প্রোস্টেইট্ ক্যান্সার’ বিশ্বব্যাপী পুরুষদের সাধারণত আক্রান্ত হওয়া রোগগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। ফুসফুস ক্যান্সারের পরেই এর অবস্থান। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রোগী একারণে মারা যান। তবে পুরুষদেরকে দেওয়া মতো কোনো প্রমাণীত পরামর্শ নেই বললেই চলে।”

তিনি আরও বলেন, “রক্তে প্রবাহিত এই দুটি হরমোন নিয়ে আমাদের গবেষণার কারণ হল- আগের গবেষণা ইঙ্গিত করে যে ‘প্রোস্টেট ক্যান্সার’য়ের সঙ্গে এদের সম্পর্ক আছে। পাশাপাশি এখানেই কিছু ব্যাপার থাকতে পারে যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।”

‘ইউকে বায়োব্যাংক প্রজেক্ট’য়ের অন্তর্ভুক্ত ২ লাখ ৪শ’ ৫২ জন পুরুষ এই গবেষণায় অংশ নেন। গবেষণার শুরুতে এদের কেউই ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন না এবং কোনো হরমোনজনীত চিকিৎসার আওতাভুক্তও ছিলেন না।

অংশগ্রহণকারী পুরুষরা প্রাথমিক পর্যায়ে রক্তের নমুনা দেন। যা থেকে তাদের রক্তে ‘টেস্টোস্টেরন’ ও ‘ইন্সুলিন’ ধরনের বৃদ্ধিবর্ধক উপাদান ‘আইজিএফ-ওয়ান’য়ের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

যে ‘টেস্টোস্টেরন’ পরিমাপ করা তা অন্য কোনোকিছুর সঙ্গে যুক্ত নয় এবং যা শরীরের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এরমধ্য থেকে ৯ হাজার পুরুষের দ্বিতীয়বার রক্তের নমুনা নেওয়া হয়, যা থেকে হরমোনের মাত্রার স্বাভাবিক তারতম্য নির্ণয় করা হয়।

অংশগ্রহণকারীদের ছয় থেকে সাত বছর পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়। এদের মধ্য থেকে ৫,৪২১ জন ‘প্রোস্টেইট ক্যান্সার’য়ে আক্রান্ত হন এবং মারা যান ২৯৬ জন। গবেষকরা দেখেন দুবার নেওয়া রক্তের নমুনায় যাদের হরমোনের মাত্রা বেশি ছিল তারাই এই রোগের আক্রান্ত হয়েছেন।

প্রতি লিটার রক্তে আইজিএফ-ওয়ান’য়ের মাত্রা প্রতি পাঁচ ন্যানোমোলস বৃদ্ধিতে রোগের ঝুঁকি বাড়ে ৯ শতাংশ, বলেন গবেষকরা।

আবার প্রতি লিটার রক্তে ‘টেস্টোস্টেরন’য়ের পরিমাণ প্রতি ৫০ পিকোমোলস বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকি বাড়ে ১০ শতাংশ। ফলে যাদের আইজিএফ-ওয়ান’য়ের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় সবচাইতে বেশি ছিল তাদের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। আর সবচাইতে বেশি টেস্টোস্টেরন যাদের রক্তে, তাদের ‘প্রোস্টেট ক্যান্সার’য়ের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ বেশি।

ট্রাভিস বলেন, “এদুটি হরমোন কেনো এই রোগের সঙ্গে জড়িত তা এ ধরনের গবেষণা বলতে পারেনা। তবে আমরা জানি, ‘টেস্টোস্টেরন’ শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। সেই সঙ্গে ‘প্রোস্টেইট’য়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখাতেও এই হরমোনের ভূমিকা আছে। আর ‘আইজিএফ-ওয়ান’ শরীরের কোষের বৃদ্ধির বিকাশ ঘটায়।

লন্ডনে অনুষ্ঠিত ‘২০১৯ এনসিআরআই ক্যান্সার কনফারেন্স’য়ে গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন