ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথাসহ নানান উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
Published : 24 Oct 2024, 02:33 PM
মানসিক অসুস্থতার একটি পর্যায় হল বিষণ্নতা। এর ফলে দুঃখ-হতাশা কাজ করে।
তবে অনেকেই জানেন না, এই অবস্থা শরীরের ওপরে নানান প্রভাব ফেলে।
এই বিষয়ে মার্কিন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ হেইন্স সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “অনেকেই খেয়াল করেন না ‘ডিপ্রেশন’ বা বিষণ্নতার কারণে দেহে নানান উপসর্গ দেখা দেয়। এর সবগুলো হয়ত প্রাথমিক অবস্থায় মনে হতে পারে, বিষণ্নতার সাথে সম্পর্কিত নয়।”
ক্লান্তি
বিষণ্নতায় ভোগা বেশিরভাগ মানুষ অভিযোগ করেন, তাদের শরীরে শক্তি কাজ করছে না। অর্থাৎ কোনো কাজ করার মানসিক ইচ্ছা কাজ করে না।
হেইন্স বলেন, “গবেষকরা এখনও বের করতে পারেননি কেনো বিষণ্নতা থেকে অবসাদ কাজ করে। তবে এটা বিষণ্নতায় ভোগার প্রধান লক্ষণ।”
বিষণ্নতা কাটাতে ভিটামিন ডি ভালো কাজ করে। তাই গায়ে রোদ মাখা কিংবা বাইরে থেকে হেঁটে আসলে চাঙা বোধ হয়।
ব্যাখ্যাতীত ব্যথা
দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা বা পিঠ-ব্যথার কারণ হতে পারে বিষণ্নতা। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় স্নায়ু তন্ত্র, ‘নিউরোট্রান্সমিটার’য়ের মাধ্যমে মস্তিষ্ক থেকে ব্যথাবোধ সারা শরীরে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে এরকম হতে পারে। একই বিষয় মনমেজাজের ওঠা-নামাতেও কাজ করে।
কিছু ‘অ্যান্টি-ডিপ্রেশন’ ওষুধ এই ব্যথা কমাতে ও মন-মেজাজের উন্নতি ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
হজমতন্ত্রের সমস্যা
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা'র করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতায় ভোগা রোগীদের শারীরিক সমস্যার মধ্যে বমিভাব ও ডায়রিয়া দেখা দেয়।
হেইন্স বলেন, “যদি বিষণ্নতায় ভোগার সাথে পেটের সমস্যা দেখা দেয়, তবে বুঝে নিতে হবে এটা মানসিক সমস্যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যদি ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে অবশ্যই আর্দ্র থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। পানি ও স্যালাইন পান করার পাশাপাশি সুষম খাবার, সবজি, ফল খেতে হবে।”
ঘুমের ব্যাঘাত
মানুষের জীবনে ঘুম একটি প্রাকৃতিক ক্রিয়া মনে হলেও, এটা আসলে জটিল একটি প্রক্রিয়া। আর ঘুমের সাথে মস্তিষ্কের নানান ধরনের হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে।
বিষণ্নতায় থাকলে এইসব হরমোন নিঃসরণ বাধা প্রাপ্ত হয়, ফলে ঘুমে সমস্যা দেখা দেয়।
এজন্য প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ওঠার চেষ্টা করতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে কম্পিউটার, টেলিভিশন ব্যবহার বাদ দিতে হবে।
পাশাপাশি ঘুমের পরিবেশ তৈরি করার জন্য ঘর করতে হবে অন্ধকার।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া
সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, বিষণ্নতার কারণে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যেতে পারে।
হেইন্স বলেন, “যারা বিষণ্নতায় ভোগেন তাদের মানসিক চাপ বা ‘স্ট্রেস’ হরমোন বেশি থাকে। এই হরমোন শরীর প্রদাহ বাড়ায়, যা রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে।”
যখন স্ট্রেস হরমোন’য়ের কারণে প্রতিনিয়ত রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া অতি মাত্রায় সক্রিয় হতে থাকে তখন অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালোভাবে কাজ করতে পারে না।
যদি বিষণ্নতায় ভোগার সমস্যা থাকে তবে অসুস্থতার হাত থেকে বাঁচতে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন- ভালোমতো হাত ধোয়া, ভিটামিন সি-ধরনের খাবার বেশি খাওয়া, এমনকি ফ্লু’য়ের ইঞ্জেকশন নেওয়া।
অনেকেই বুঝতে পারেন না, বিষণ্নতার কারণে এই সকল শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই দেহের চিকিৎসার পাশাপাশি মনের চিকিৎসা নেওয়ার প্রতিও গুরুত্ব দেন এই ডা. হেইন্স।
আরও পড়ুন
হালকা ব্যায়ামেও কাটবে বিষণ্নতা