Published : 04 May 2025, 04:15 PM
মেইকআপ, এক সময় যেটি ছিল শুধুই সৌন্দর্য বর্ধনের উপকরণ, আজ সেটি হয়ে উঠেছে আত্ম-উপলব্ধি, আত্মবিশ্বাস এবং আত্ম-ভালবাসার প্রতীক।
দিনে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় নিয়ে নিজের মুখে আলতো করে ফাউন্ডেশন, ব্লাশ কিংবা লিপস্টিকের ছোঁয়া দেওয়া শুধু বাহ্যিক রূপ পরিবর্তন করে না, অনেকের জন্য এটি একটি ধ্যানের অভ্যাস বা ‘মাইন্ডফুলনেস রিচ্যুয়াল’-এ পরিণত হয়েছে।
মেইকআপ: আত্ম-প্রকাশ ও আত্মবিশ্বাসের নতুন সংজ্ঞা
একজন ব্যক্তি প্রতিদিন মেইকআপ করছেন মানেই তিনি কেবল রূপচর্চা করছেন না, বরং তিনি নিজের সত্তাকে প্রকাশ করছেন, নিজের মনের অবস্থা ফুটিয়ে তুলছেন।
মার্কিন গায়িকা এবং ‘হাউস ল্যাবস মেইকআপ ব্র্যান্ড’য়ের প্রতিষ্ঠাতা লেডি গাগা নিজেও এই অনুভূতির কথা বলেন।
“মেইকআপ আমাকে শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, অন্তর থেকে আত্মবিশ্বাস দেয়” বলেন তিনি।
আরও বলেন “আমি যেন নিজের জন্য সময় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করি, এই আত্মবিশ্বাসের পরিবর্তন খুব বাস্তব।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রূপসজ্জাকর এবং ‘ওয়েলনেস কোচ’ হিদার ও’বয়েল এরমান ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “অনেক সময় মেইকআপ শেষে একজন নারী আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে যেভাবে দেখেন, তার অভিব্যক্তিই বদলে যায়। মানুষটা বদলান না, কিন্তু তার ভেতরের শক্তি যেন জেগে ওঠে।”
ব্যক্তিত্ব ও পরিচয়ের নতুন ভাষা মেইকআপ
বর্তমান সময়ে মেইকআপের মাধ্যমে মানুষ নিজের পরিচয়, সংস্কৃতি, কিংবা স্বকীয়তা প্রকাশ করছে। কেউ হয়ত ফ্রেকল পেন দিয়ে নিজের মুখের গায়ের দাগগুলো তুলে ধরছেন, আবার কেউ বার্থমার্কের ওপরে নান্দনিক নকশা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মডেল ‘পেইজ বিলিয়ট’ তার ‘পোর্ট ওয়াইন’ জন্মদাগ ঢেকে রাখার পরিবর্তে রঙিনভাবে তুলে ধরেন, যেটি একটি সাহসী ও সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
এটি দাগ জন্মের সময় থেকেই ত্বকে দেখা যায়। আর সাধারণত গাঢ় লাল বা বেগুনি রংয়ের হয়।
অস্ট্রেলিয়ার ক্যান্টাস এয়ারলাইনসের উদাহরণও এখানে প্রাসঙ্গিক। তারা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে, যে কোনো লিঙ্গের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট বা বিমানবালা মেইকআপ পরতে পারবেন— যেটি সমাজের ক্রমবর্ধমান লিঙ্গ-তরলতা ও বৈচিত্র্যের প্রতি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘অ্যাস্ট্রাল হেল্থ অ্যান্ড বিউটি’র প্রধান জোয়ানে শেই বলেন, “বর্তমানে মানুষ মেইকআপকে শুধু রূপচর্চা নয়, বরং একটি ‘ওয়েলনেস রিচ্যুয়াল’ হিসেবে দেখছে। পুরুষ-নারী উভয়ের জন্যই এখন সমানভাবে প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে।”
ধ্যান ও মেইকআপ: দুটো পথ, এক গন্তব্য
প্রায়ই সকালের তাড়াহুড়োয় মুখে একটু মেইকআপ দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। তবে একটু সময় নিয়ে সেই মেইকআপ প্রক্রিয়াটিকে উপভোগ করা যায় তাহলে সেটি হয়ে উঠতে পারে একটি ছোট ধ্যানচর্চার মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাইন্ডফুলনেস’ বিশেষজ্ঞ এবং লেখিকা ইয়ায়েল শাই বলেন, “প্রতিদিনকার রূপচর্চার অভ্যাসকেও মাইন্ডফুলনেস রিচ্যুয়ালে বা ধ্যানের অভ্যাসে পরিণত করতে পারেন।”
তিনি কিছু সহজ ধাপ দিয়েছেন—
প্রসাধনীর গন্ধ, গঠন এবং স্পর্শ উপভোগ করতে হবে।
মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকা কাজের তালিকা ও চিন্তাগুলো ছেড়ে দিতে হবে একেবারেই।
মন যখন আগের সমস্যা বা ভবিষ্যতের ভাবনায় হারিয়ে যাবে, তখন নিজেকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে মেইকআপের সেই স্পর্শ এবং সেই মুহূর্তে।
এই ধ্যানের অভ্যাসের মাধ্যমে, মেইকআপ আর কেবল একটি সৌন্দর্যচর্চা থাকে না। এটি হয়ে ওঠে নিজের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম।
ইয়ায়েল বলেন, “আয়নায় তাকিয়ে ত্রুটি খোঁজার বদলে যদি আমরা ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাই তখন মেইকআপ করার অভিজ্ঞতাটাই বদলে যায়।”
মেইকআপ এখন আর নিজের মুখ ঢাকার চেষ্টা নয়; বরং নিজের মুখ, মন এবং সত্তাকে উদযাপন করার একটি মাধ্যম।
তাই ভাবতে হবে আপনিও প্রতিদিন এই ধ্যানময় অভ্যাসে অংশ নিচ্ছেন!
আরও পড়ুন