Published : 03 May 2025, 02:50 PM
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই লক্ষ্যেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি।
অনেকেই ভাবেন, রান্নায় শুধুমাত্র সয়াবিন, ক্যানোলার মতো উদ্ভিজ্জ তেল বা কর্ন অয়েল ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ বলছে, এর চেয়েও ভালো বিকল্প হতে পারে জলপাইয়ের তেল, বিশেষ করে ‘এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল’ বা উচ্চমানের বিশুদ্ধ জলপাই তেল।
জলপাইয়ের তেল: সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা
জলপাইয়ের তেল মূলত জলপাইয়ের রস। এটি জলপাইয়ের বীজ থেকে নয়, বরং ফলের নরম অংশ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া হল ‘মেকানিক্যাল প্রেসিং’, যা তেল নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক উপায়।
জলপাইয়ের তেল দুই ধরনের হয়ে থাকে রিফাইনড বা পরিশোধিত এবং আনরিফাইনড বা অপরিশোধিত।
এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল হচ্ছে আনরিফাইনড, অর্থাৎ প্রাকৃতিক অবস্থাতেই থাকে এবং এটি রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয় না।
এতে পলিফেনলস (প্রাকৃতিক রাসায়নিক যৌগ), অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য সক্রিয় উপাদান বেশি থাকে।
বিশ্বব্যাপী পুষ্টিবিদরা এই তেলকে রান্নার সবচেয়ে ভালো তেল হিসেবে বিবেচনা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ জুলি আপটন ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “জলপাই তেল শুধু স্বাদের জন্য নয়, হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।”
গবেষণায় পাওয়া জলপাই তেলের কার্যকারিতা
স্পেনের বহুকেন্দ্রিক গবেষণা প্রকল্প ‘প্রেডিমেড স্টাডি’-তে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত জলপাই তেল রান্নায় ব্যবহার করেন, তাদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি প্রায় ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
বিশেষ করে ‘এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল’ ব্যবহারের ফলে উচ্চ ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে।
এই গবেষণা স্পেনের বিভিন্ন মেডিকেল প্রতিষ্ঠান এবং ‘ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অফ সেন্ট জন দে রেউস’-এর ‘হিউম্যান নিউট্রিশন ইউনিট’-এর সহায়তায় পরিচালিত হয়।
এর বাইরে হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর পক্ষ থেকেও জলপাই তেলের উপকারিতা নিয়ে একাধিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
জলপাই তেল বনাম অন্যান্য তেল
আমাদের দেশে সাধারণত সয়াবিন, পাম, সরিষা বা সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করা হয়। তবে এই তেলগুলোতে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (এলডিএল) বা খারাপ কোলেস্টেরল বেশি থাকায় অতি তাপে ক্ষতিকর হতে পারে।
অন্যদিকে জলপাইয়ের তেলে রয়েছে ‘মনোআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ বা ভালো চর্বি, যা শরীরের জন্য তুলনামূলকভাবে উপকারী।
জুলি আপটনের মতে, “যে কোনো রান্নায়, এমনকি বেইকিং ও ভাজাপোড়াতেও জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করা যায়। তবে পক্রিয়াজাত (রিফাইনড অলিভ অয়েল বা লাইট টেস্টিং) জলপাই তেল বেছে নিলে স্বাদে পরিবর্তন হয় না। তবে মান কিছুটা কমে।”
তাপমাত্রা ও রান্নার ধরন
অনেকেই মনে করেন জলপাইয়ের তেল শুধুমাত্র সালাদ বা ঠাণ্ডা খাবারে ভালো। তবে বাস্তবে প্রক্রিয়াজাত জলপাই তেলের ‘স্মোক পয়েন্ট’ ৪৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যা যে কোনো ধরনের রান্নার জন্য উপযুক্ত।
‘এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল’ও ৩৫০-৪১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ব্যবহার করা নিরাপদ।
আর ‘স্মোক পয়েন্ট’ হল কোনো তেলের বা চর্বির তাপমাত্রার সেই নির্দিষ্ট সীমা, যখন তা উত্তপ্ত হয়ে ধোঁয়া তৈরি করতে শুরু করে।
বেছে নেওয়ার ৩টি উপায়
সর্বশেষ ব্যবহারের তারিখ দেখা: জলপাই তেল দুই বছর পর্যন্ত ভালো থাকে, তবে যতটা সম্ভব নতুন বোতল কেনাই ভালো।
কম করে কেনা: অতিরিক্ত আলো, গরম ও বাতাসে দ্রুত নষ্ট হয় জলপাইয়ের তেল। তাই কয়েক মাসে শেষ হবে এমন পরিমাণে কেনা উচিত। বাসায় অনেক বোতল সংরক্ষণ ভালো বুদ্ধি নয়।
মান নিয়ন্ত্রণ সিল খোঁজা
বোতলে যদি নর্থ আমেরিকান অলিভ অয়েল অ্যাসোসিয়েশন (এনএওওএ) -এর গুণমান সিল থাকে, তা হলে বুঝতে হবে এটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেছে।
বাংলাদেশে এখন অনেক সুপারশপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জলপাই তেল পাওয়া যায়। গ্রিস, স্পেন, ইতালি, তুরস্ক এই দেশগুলোর জলপাই তেল বিশ্ববাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
সাধারণ রান্নার ক্ষেত্রে যদি স্বাদ পরিবর্তনের ভয় থাকে, তবে ‘লাইট টেস্টিং অলিভ অয়েল’ দিয়ে শুরু করা যায়।
যারা ডায়াবেটিস বা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য স্বাস্থ্যবান্ধব বিকল্প এই তেল। এমনকি যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্যও উপকারী।
আরও পড়ুন