Published : 04 May 2025, 12:59 AM
হিসাব বছর শেষে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও অনুমোদনের পাশাপাশি লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পর্ষদের বৈঠক করলেও লভ্যাংশের সুপারিশ করতে পারেনি ১৯টি ব্যাংক।
বার্ষিক প্রতিবেদনে ও লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বা অনাপত্তি না পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর পর্ষদের সভা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসব ব্যাংক ২০২৪ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনও তৈরি করতে পারছে না।
এতে করে বছর শেষে লভ্যাংশ এবং ব্যাংকের আয়-ব্যয় কেমন হল তা জানতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাত মাস পেরিয়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর সবশেষ আর্থিক তথ্যও জানতে পারছেন না তারা।
গত ৩০ এপ্রিল ছিল ২০২৪ হিসাব বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও তার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ ঘোষণার শেষ দিন।
এজন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের ১৭টি শেষ দিনে পর্ষদ সভা ডেকেছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) বা অনাপত্তি না পাওয়ায় ব্যাংকগুলো অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এর আগে আরও দুই ব্যাংক পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করলেও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি না পাওয়ায়। এ কারণে সেগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি।
অপরদিকে নানা ঋণ অনিয়মে ভুগতে থাকা তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংক এখন পর্যন্ত পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেনি।
এ হিসাবে এখন পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে; যেগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবারও কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে (৩০ এপ্রিল) লভ্যাংশ ঘোষণা করতে না পারা ব্যাংকের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন কারণে এসব ব্যাংকের নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে না পারা, প্রকৃত খেলাপির কিছু চিত্র না দেখানোর কারণে শেষ মুহূর্তে এই ১৭ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুমোদন পায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশে ছিলেন। এ কারণে ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সভা শেষে গত বৃহস্পতিবার গভর্নর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন।
গভর্নর অফিস শুরু করলে এ বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে বলে আশা করছেন ব্যাংকাররা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বর্ধিত সময়ের জন্য আইনি জটিলতা এড়াতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য দু’একদিন সময় আরও বেশি লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’’
এ তালিকায় থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ’২৫) এর প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও অনুমোদন করতে প্রথমে ২৮ এপ্রিল পর্ষদ সভা ডেকেছিল। সেদিন এনওসি না পেয়ে আবার ৩০ এপ্রিল সভা ডাকে ব্যাংকটি। তবে সেদিন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাংলাদেশে ব্যাংকের এনওসি না পাওয়ায় পর্ষদ সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।
ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি পেয়ে যাব। এনওসি না পাওয়ায় হিসাব চূড়ান্ত করতে পারছি না। অ্যাকাউন্স যদি ফাইনাল করতে না পারি তাহলে কিছুই বলতে পারবে না।”
বিষয়টি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) অবহিত করার কথা বলেছেন তিনি।
একই কারণে এবি ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা না করতে পারা প্রসঙ্গে ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো রকম সিদ্ধান্ত পাইনি। হিসাব অনুমোদন না হওয়ায় বোর্ডে ওঠানো যায়নি। এখন সিদ্ধান্ত পেলেই সভা হবে।’’
বিষয়টি বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে অবহিত করার কথা বলেন তিনি।
ঢাকা ব্যাংকের কোম্পানি সচিব শাহজাহান মিয়াও সভায় সিদ্ধান্ত নিতে না পারার বিষয়ে একই রকম তথ্য দেন।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) এক্সিম ব্যাংকেরও পর্ষদ সভাও শেষ হয় সিদ্ধান্ত ছাড়াই। ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানালে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’’
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এ বিষয়ক সভা করে গত ২৯ এপ্রিল। কোম্পানি সচিব মঞ্জুর হোসাইন বলেন, অনুমোদন না পাওয়ায় লভ্যাংশ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন তারা।
কী বলছে আইন
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে আগের হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার বাধ্যবাধকতা আছে নতুন হিসাব বছরের প্রথম দুই মাসের মধ্যে। এ সময়ে নিরীক্ষা শেষে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে আবেদন করে আরও দুই মাস সময় বাড়ানো যায়।
বছরের প্রথম চার মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারলে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সেটি না করলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) এর নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো জরিমানার মুখে পড়ে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো সিদ্ধান্তে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারলে বিএসইসিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবহিত করতে হয়। এরকম পরিস্থিতি হলে কত সময়ের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে হবে, তার কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেয়নি বিএসইসি।
এ নীতির অনুসরণে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো বিএসইসিকে গত বুধবার রাতে ফ্যাক্স ও সরাসরি চিঠি দিয়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে না পারার বিষয়টি জানিয়েছে।