Published : 04 May 2025, 05:20 PM
স্বাস্থ্যকর খাওয়া এখন অনেকের জীবনের অংশ। আর ফলের রস, সবজি, দুধ বা দই ও নানান সুষম খাবার মিশিয়ে তৈরি করা স্বাস্থ্যকর পানীয় ‘স্মুদি’ বেশি প্রচলিত।
আর অফিসে কাজের ফাঁকে কিংবা সকালে দ্রুত কিছু খাওয়ার জন্য অনেকেই স্মুদিকে বেছে নেন। তবে জানেন কি, প্রতিদিনের এই স্মুদি-ই হতে পারে ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ!
স্মুদি গ্রহণের অভ্যাস স্বাস্থ্যকর হতে পারে, যদি বুঝেশুনে উপাদান বাছাই করা হয়।
তবে সাধারণ কিছু ভুলের কারণে এই পানীয় হয়ে উঠতে পারে ক্যালোরিতে ঠাঁসা, আঁশ ও প্রোটিন কম এবং চিনিতে ভরা এক ‘ওজন-বাড়ানো’র বোমা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মেরি সাবাত এবং লিসা ইয়ং ইটদিসনটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “সাধারণ কিছু ভুলে স্মুদি হতে পারে ওজন কমানোর বড় শত্রু।”
পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাব
প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু পেশি গঠনে নয়, দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতেও সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যালেন্স ওয়ান সাপলিমেন্টস’য়ের পুষ্টি-বিশেষজ্ঞ ট্রিস্টা বেস্ট ইটদিসনটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন— “প্রোটিনের উপস্থিতি ছাড়া স্মুদি খুব তাড়াতাড়ি ক্ষুধা তৈরি করতে পারে। ফলে দিনের বাকি সময়ে আরও বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।”
মেরি সাবাত উল্লেখ করেছেন, “স্মুদিতে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও আঁশ না থাকলে সেটি পরিপূর্ণতা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবেই বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারেন।”
ওবিসিটি জার্নাল’য়ে প্রকাশিত একটি গবেষণা দেখিয়েছে, কম প্রোটিন-যুক্ত প্রাতঃরাশ খাওয়া ব্যক্তিরা দিনের বাকি সময়ে তুলনামূলকভাবে বেশি খাবার খান।
আঁশ বাদ পড়ছে স্মুদি থেকে
আঁশ পাচনতন্ত্রের জন্য যেমন জরুরি তেমনই এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। তবে অনেকেই ফল বা সবজি ছাঁকা রস দিয়ে স্মুদি তৈরি করেন।
যে কারণে ফলের খোসা বা আঁশ বাদ পড়ে যায়। এতে স্মুদিতে আঁশ কমে যায়।
ট্রিস্টা বেস্ট বলেন, “যদি স্মুদিতে গোটা ফল, সবজি বা ‘হোল গ্রেইন’ বা পূর্ণ শষ্য না থাকে, তবে সেটা যথেষ্ট আঁশ সরবরাহ করতে পারবে না।”
এর ফলাফল হতে পারে- বারবার ক্ষুধা লাগা এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া, যা ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক লিসা ইয়ং বলেন, “বেরি, কপি, অ্যাভোকাডো, কিউই, নাশপাতি, ‘ফ্ল্যাক্স মিল’ বা তিশির বীজ এবং চিয়া বীজ স্মুদির জন্য চমৎকার আঁশের উৎস।”
অতিরিক্ত মিষ্টি উপাদান
সবজি বা পাতাজাতীয় উপাদান দিয়ে স্মুদি বানালে অনেকেই স্বাদ বাড়াতে মধু, ম্যাপল সিরাপ ইত্যাদি মেশান।
এগুলো প্রাকৃতিক মিষ্টি উপাদান হলেও রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি। অতিরিক্ত ব্যবহার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
মেরি সাবাত বলেন “প্রাকৃতিক হোক বা প্রক্রিয়াজাত চিনি- ক্যালোরি যোগ করবেই। যা অতিরিক্ত হলে ওজন বাড়ায়।”
ট্রিস্টা বেস্ট মন্তব্য করেন, “চিনি খাওয়ার পর শরীর সেটা দ্রুত শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এতে উপকারী পুষ্টিগুণ কম, ফলে এটা ‘এম্পটি ক্যালোরি’ হিসেবে কাজ করে।”
বিকল্প হিসেবে লিসা ইয়ং পরামর্শ দেন, “চিনি যোগ করার পরিবর্তে দুয়েকটি খেজুর ব্যবহার করতে পারেন। এতে প্রাকৃতিক মিষ্টতা থাকবে এবং কিছু আঁশও পাবেন।”
উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত উপাদান বেশি ব্যবহার
দুধ, দই, বাদাম, বাদামের মাখন, অ্যাভোকাডো এসব উপাদান নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর। এগুলোতে রয়েছে প্রোটিন, আঁশ এবং ভালো চর্বি। তবে সমস্যা হচ্ছে পরিমাণে।
অনেকেই এসব উপাদান অতিরিক্ত মেশান। ফলে স্মুদি হয়ে ওঠে ক্যালোরিতে ঠাঁসা এক পানীয়।
লিসা ইয়ং বলেন “স্মুদি বানানোর সময় উপাদানের পরিমাণ নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। না হলে অজান্তেই অতিরিক্ত ক্যালোরি খেয়ে ফেলছেন।”
মেরি সাবাতের কথায়, “অ্যাভোকাডো বা বাদামজাত উপাদানগুলো স্বাস্থ্যকর হলেও এগুলো অনেক বেশি ক্যালোরি যোগ করতে পারে। অতিরিক্ত খাওয়া ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।”
দোকান থেকে কেনা প্রস্তুত স্মুদি
স্মুদি যদি দোকান থেকে কেনা হয় তাহলে জানা থাকে না ঠিক কতটুকু চিনি, আঁশ বা প্রোটিন রয়েছে তাতে। অনেক বোতলজাত স্মুদিতে প্রচুর পরিমাণে ‘অ্যাডেড সুগার’ বা বাড়তি চিনি ও প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষক থাকে, যা ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
মেরি সাবাত বলেন, “মোড়কজাত স্মুদিতে প্রায়শই অতিরিক্ত চিনি এবং সংরক্ষণকারী উপাদান থাকে, যা নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে এবং ওজন বাড়াতে পারে।”
আরও পড়ুন