স্বাস্থ্যকর খাবারও দেহের চর্বি বাড়িয়ে দিতে পারে।
Published : 10 Apr 2025, 05:18 PM
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার থাকে যেগুলো স্বাস্থ্যকর মনে হলেও নিঃশব্দে বাড়িয়ে দিচ্ছে ওজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাবারগুলো দীর্ঘমেয়াদে ওজন নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
ওজন কমানো যেন এক চিরন্তন যুদ্ধ। কেউ কেউ নিয়মিত ব্যায়াম করেন, কেউ ক্যালোরি গুনে খাওয়ার অভ্যাস করেন। তবুও অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন— সব চেষ্টার পরও ওজন কমছে না কেন?
কারণ হয়ত প্রতিদিনকার কিছু ‘স্বাস্থ্যকর’ খাবারই গোপনে ওজন বাড়িয়ে দেওয়ায় কাজ করে যাচ্ছে।
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’, ‘জার্নাল অব নিউট্রিশন’ এবং ‘মেটাবলিজম অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেস’ সাময়িকীতে উঠে এসেছে এমন কিছু খাবারের কথা, যা নিয়ে সচেতন না হলে ওজন কমানো প্রক্রিয়াকে ব্যাহত হতে পারে।
ফ্লেইভার্ড ইয়োগার্ট বা স্বাদযুক্ত দই
দই স্বাস্থ্যকর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও প্রোবায়োটিকসের ভালো উৎস হলেও ‘ফ্লেইভার্ড’ বা স্বাদযুক্ত দইতে থাকে বিপুল পরিমাণ চিনি।
‘মেটাবলিজম অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেস’ সাময়িকীর তথ্যানুসারে- প্রতিদিনের অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ ওজন বৃদ্ধি, পেটের চর্বি জমা এবং স্থূলতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
বিকল্প কী হতে পারে? চিনি ছাড়া ‘গ্রিক ইয়োগার্ট’ বা ঘরে পাতা সাদা টক দই হতে পারে স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল
অফিসের তাড়ায় অনেকেই সকাল শুরু করেন সিরিয়াল দিয়ে।
তবে ‘জার্নাল অব নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অনেক সিরিয়ালে প্রোটিন ও আঁশ থাকে কম। চিনি থাকে অনেক বেশি।
প্রোটিন না খেলে শরীর তাড়াতাড়ি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
সমাধান কী? কম চিনি আর উচ্চ প্রোটিন ও আঁশযুক্ত সিরিয়াল নির্বাচন করতে হবে।
বনরুটি
নাস্তায় অনেকেই খেতে পছন্দ করেন। এই ধরনের বেশিরভাগ রুটি তৈরি হয় পরিশোধিত সাদা ময়দা দিয়ে, যার মধ্যে আঁশ থাকে না বললেই চলে।
ফলে পেট ভরলেও খুব দ্রুত আবার ক্ষুধা লাগে। এছাড়াও প্রোটিনের অভাবে দীর্ঘস্থায়ী তৃপ্তি পাওয়া যায় না।
পেট ভরার পাশাপাশি আঁশ ভালো ‘গাট মাইক্রোবায়োম’ বা অন্ত্রের অণুজীবের ভালো পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত— এমনটাই বলছে বিভিন্ন গবেষণা।
স্মুদি
স্মুদি হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়। তবে সেটা নির্ভর করবে কী দিয়ে বানানো হচ্ছে!
বাড়িতে বানানো প্রোটিন ও আঁশ সমৃদ্ধ স্মুদি যদি হয় কম চিনি ও কম ক্যালোরিযুক্ত, তাহলে সেটা স্বাস্থ্যকর।
তবে অনেক সময় বাজারে কেনা স্মুদি বা অতিরিক্ত বাদাম, মাখন, চিনি দিয়ে বানানো স্মুদি হয়ে উঠতে পারে উচ্চ ক্যালোরি ও চিনির উৎস।
ট্রেইল মিক্সড
বাদাম, বীজ আর শুকনা ফলে সমৃদ্ধ ট্রেইল মিক্সড স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও যদি তাতে চকলেট, ক্যান্ডি বা অতিরিক্ত মিষ্টি উপাদান থাকে, তাহলে তা হতে পারে অতিরিক্ত ক্যালোরির গোপন উৎস।
বিশেষ পরামর্শ: কোনো ব্র্যান্ড কেনার আগে লেবেল দেখে নিশ্চিত হতে হবে এতে সংযোজিত চিনি বা অপ্রয়োজনীয় উপাদান কম আছে কিনা।
সোডা বা কোমল পানীয়
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ অনুসারে, এক বোতল কোমল পানীয়তে ৭৫ থেকে ৮৫ গ্রাম পর্যন্ত চিনি থাকতে পারে, যা দৈনিক সুপারিশকৃত সীমার তিনগুণ।
এত চিনি শুধু হৃদরোগের ঝুঁকিই বাড়ায় না, বরং ওজন বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখে।
বিকল্প: কম চিনিযুক্ত কোমল পানীয়।
অ্যালকোহল
হয়ত খাওয়া-দাওয়া ঠিকঠাক রাখছেন, তবে রাতে নিয়মিত মদ্যপান করছেন— তাহলে সেখান থেকেও ক্যালোরি জমছে শরীরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন এক-দু গ্লাস ওয়াইন বা বিয়ার দীর্ঘমেয়াদে ওজন বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে।
ফ্যাট-ফ্রি (চর্বিমুক্ত) বা ‘ডায়েট’ খাবার
কম চর্বিযুক্ত বা ‘ফ্যাট-ফ্রি’ খাবার মানেই যে, কম ক্যালোরিযুক্ত হবে তা নয়। অনেক সময় এসব খাবারে স্বাদ ঠিক রাখতে অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয়।
যেমন: ‘ফ্যাট-ফ্রি সালাদ ড্রেসিং’, ‘লো-ফ্যাট আইসক্রিম’, ‘লো-ফ্যাট গ্রানোলা বার’ ইত্যাদি।
পরামর্শ: যে কোনো ‘ডায়েট’ পণ্যের চিনি ও ক্যালোরির মাত্রা দেখে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ওজন কমানো মানে শুধু ডায়েট নয় বরং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খাবার নির্বাচন করাও জরুরি।
‘জার্নাল অব নিউট্রিশন’ এবং অন্যান্য গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে— লুকিয়ে থাকা চিনি ও ক্যালোরি অনেক সময় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণে।
তাই সচেতন হয়ে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা যাচাই এবং প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়াই অন্যতম উপায়।
আরও পড়ুন