যারা ছাপা বই পড়ে না তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
Published : 15 Apr 2025, 04:46 PM
প্রযুক্তিনির্ভর যুগে স্মার্টফোন, ট্যাব কিংবা কিন্ডলে’র মাধ্যমে বই পড়ার চল বাড়লেও, ছাপা বইয়ের আবেদন এখনও অম্লান।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ছাপা বই পাঠের রয়েছে নানান স্বাস্থ্যগত, মানসিক এবং সামাজিক উপকারিতা।
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাতে ধরা পৃষ্ঠায় চোখ বুলিয়ে পড়ার অভ্যাসের মাধ্যমে হওয়া যায় আরও বুদ্ধিমান, সংবেদনশীল ও সুস্থ।
বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধি
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ডা. স্যামুয়েল আর. সোমারস রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “শৈশবে বই পড়ার মাধ্যমে শিশুদের শব্দ-ভাণ্ডার যেমন বাড়ে তেমনি তাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট’-এর গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, শিশুরা নিয়মিত ছাপা বই পড়লে তাদের ‘আইকিউ’ ও পরীক্ষার ফলাফল দুই-ই উন্নত হয়।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
‘পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি’র ‘কগনিটিভ নিউরোসায়েন্স ল্যাব’-এর করা গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ছাপা বই পড়েন, তাদের মস্তিষ্কে নিউরোনের সংযোগ আরও সক্রিয় থাকে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত স্মৃতি ও মনোযোগ কমে যায়। তবে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বই পড়লে সেই প্রক্রিয়া অনেকটাই ধীর হয়।
সহানুভূতিশীল মানুষ তৈরি
২০১৩ সালে নিউ ইয়র্কের ‘দ্য নিউ স্কুল ফর সোশ্যাল রিসার্চ’-এর গবেষক ডেভিড কমার কিড এবং এমানুয়েল কাস্তানো প্রমাণ করেন, সাহিত্যমূলক ছাপা বই পাঠ করলে পাঠকের ‘থিওরি অব মাইন্ড’ বা অন্যের অনুভূতি অনুধাবনের ক্ষমতা বাড়ে।
অর্থাৎ, গল্পে চরিত্রগুলোর অভিজ্ঞতা বুঝতে গিয়ে পাঠকের মধ্যেও সহানুভূতি জন্ম নেয়। এই গবেষণা প্রকাশিত হয় ‘সায়েন্স-জার্নাল’য়ে।
বিষয়বস্তুর গভীরতা অনুধাবনে সহায়ক
নরওয়ের ‘ইউনিভার্সিটি অব স্টাভেঞ্জার’-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ছাপা বই পাঠককে বিষয়বস্তু অনুধাবনে ডিজিটাল বইয়ের চেয়ে বেশি সাহায্য করে।
কারণ পৃষ্ঠার স্পর্শ, পাতার গন্ধ এবং পড়ার গতি পাঠকে একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা দেয়। যা মনে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
আলৎঝাইমার’স প্রতিরোধে সহায়ক
চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিখ্যাত জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত বই, পাজল বা দাবা খেলে মস্তিষ্ককে চর্চায় রাখে, তাদের মধ্যে আলৎঝাইমার’স রোগের ঝুঁকি ২.৫ গুণ কম।
গবেষণার নেতৃত্ব দেন নিউ ইয়র্কের ‘আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিন’-এর জেরিয়াট্রিক গবেষক ডা. চার্লিস বি. হল।
মানসিক চাপ কমায়
যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স’-এর নিউরোসাইকোলজিস্ট ডেভিড লুইসের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়, মাত্র ছয় মিনিট বই পড়া মানসিক চাপ ৬৮ শতাং পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।
গবেষণায় দেখা যায়, বই পড়া সংগীত শোনা, হাঁটা কিংবা চা পানের চেয়েও বেশি কার্যকর চাপ কমানোর পদ্ধতি।
ঘুমের গুণগত মান বাড়ায়
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন’য়ের মতে, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ছাপা বই পড়লে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে।
অন্যদিকে স্ক্রিনভিত্তিক বই পাঠে নীল আলো ঘুমের হরমোন ‘মেলাটোনিন’ ক্ষরণে বাধা দেয়। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে স্ক্রিন ব্যবহারে ঘুমের সময় প্রায় ২০ মিনিট কমে যায়।
আয়ুষ্কাল বাড়ায়
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক দশক ধরে করা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতি সপ্তাহে ছাপা বই পড়েন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি ২০ শতাংশ কম।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়, ‘সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন’-এ।
গবেষক ড. আভনি ভাওয়ার মতে, বই পড়া মানসিক প্রশান্তি, জ্ঞান এবং সামাজিক সংযোগ বাড়িয়ে দীর্ঘজীবনের পথ প্রশস্ত করে।
আজীবন পাঠাভ্যাস গড়ে তোলে
যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্কলাস্টিক’-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর অভিভাবকরা ছাপা বই পড়েন, তাদের বই পড়ার আগ্রহ ও অভ্যাস অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
৯৫ শতাংশ শিশু বলেছে, তাদের জীবনে এমন কেউ আছে যে বই পড়া উপভোগ করে; তবে যারা নিয়মিত এই দৃশ্য দেখে, তারাই বেশি নিয়মিত পাঠক হয়ে ওঠে।
মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ায়
আজকের সময়ে স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন, সোশ্যাল মিডিয়ার আপডেট— সবকিছুই মনোযোগ নষ্ট করে। তবে একটি ছাপা বই পড়ার সময় পাঠক একটানা একটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে শেখে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান’য়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ই-বুক পড়ার সময় মাল্টিটাস্ক করে, যেখানে ছাপা বই পড়ার সময় এই হার মাত্র ৪১ শতাংশ।
আরও পড়ুন