"মুক্তিযুদ্ধের যে আত্মত্যাগ এবং বীরত্বগাথা, তা থেকে মানুষকে কী করে আরো জাগ্রত করা যায়, তার জন্যই এ অনুষ্ঠান।”
Published : 16 Dec 2024, 10:23 PM
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি হানাদারদের আত্মসমর্পণ; সেদিনের বিজয় মুহূর্তটি স্মরণ করে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও 'বিজয় উৎসব' আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।
তিন পর্বের এই আয়োজনে ছায়ানটের সঙ্গী হয়ে বাচিকশিল্প চর্চার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলন পরিবেশন করেছে কাব্যালেখ্য 'আমাদের রক্ত মিছিল'। সংস্কৃতি-সমন্বিত সাধারণ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশুরা পরিবেশন করেছে গীতরঙ্গ 'স্বাধীনতার অভিযাত্রা'। আর ছায়ানটের পরিবেশনায় ছিল গীতনৃত্যালেখ্য 'অপারাজেয় বাঙালি'।
সোমবার বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের সামনে জাতীয়সংগীতের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলীসহ সংগঠকরা।
আয়োজনজুড়ে ফিরে ফিরে উচ্চারিত হয়েছে বিজয়ের পথে বাঙালির নির্ভীক অভিযাত্রার কাহন, প্রাণহারী শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালির আপন সংস্কৃতিতে থিতু হবার, মাথা উঁচু করে বাঁচবার কথামালা।
মিলনায়তনের দর্শক সারি তখন কানায় কানায় পূর্ণ। দরজায় দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করতেও দেখা যায় অনেককে। কেউ কেউ জায়গা না পেয়ে মিলনায়তনের বাইরে বড় পর্দায় উপভোগ করেন অনুষ্ঠান।
সারওয়ার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের যে আত্মত্যাগ এবং বীরত্বগাথা, তা থেকে মানুষকে কী করে আরো জাগ্রত করা যায়, তার জন্যই এ অনুষ্ঠান। আমরা এখানে অনুষ্ঠান করছি, আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিচ্ছি। এতে করে বিশ্বজুড়ে সবাই এ অনুষ্ঠান দেখছেন।"
অনুষ্ঠানের পরিবেশনায় বাঙালির বিজয়গাথা তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা। তাদের স্মরণ করেই আমরা এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করি।"
সাংস্কৃতিক জাগরণের সঙ্গে মানবিক বোধ সঞ্চারের লক্ষ্যে এই মিলনানুষ্ঠান ২০১৫ সাল থেকে আয়োজন করছে ছায়ানট।
বিজয়ের দিনে ভেদাভেদ দূরে ঠেলে জাতীয় পতাকার সবুজে দেহ ও মন রাঙিয়ে সর্বান্তকরণে ষোল আনা বাঙালি হয়ে ওঠার আহ্বান জানানো হয় সবাইকে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ সালে এ আয়োজনে ছেদ পড়ে। আর ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানের কারণে এ আয়োজন করতে পারেনি ছায়ানট। এবার আয়োজনটি করা হয়েছে ছায়ানট মিলনায়তনে।
ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেইসবুক পেইজে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে।
খোলা জায়গা ছেড়ে কেন মিলনায়তনে?
ছায়ানট আয়োজিত বিজয় উৎসবে এসে মিলনায়তনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে বাইরে বসে বড় পর্দায় অনুষ্ঠান দেখছিলেন মাহজাবীন সুরভী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "এরকম একটি আয়োজন, এত ছোট জায়গায় করা যায় না। এটি খোলা জায়গায় হলেই ভালো হত।"
একই রকম ভাষ্য, চিকিৎসক ও সংস্কৃতিকর্মী অরুণাভ পোদ্দারের। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গত বছরও ছায়ানটের এই বিজয় উৎসব হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। এবার ছায়ানট ভবনে করার কারণে জায়গাটি খুবই সঙ্কুচিত লাগছে। এত মানুষের মিলনমেলা, এত ছোট জায়গায় হলে প্রাণটাই থাকে না।"
মিলনায়তনের ভিতরে মা শিখা বিশ্বাসের কোলে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করছিল ওয়াইডব্লিউসি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী কোয়েল বিশ্বাস।
গত বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের খোলা চত্বরে এই অনুষ্ঠানে দেখেছিল বলে জানাল কোয়েল। এবারের আয়োজনে এসে ভিড়ের কারণে ঠিকমত বসার জায়গা না পেয়ে সে কিছুটা বিরক্ত।
শিখা বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে আমার মেয়ে খুব আনন্দ পেয়েছিল। এখানে তো বসার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।"
ছায়ানট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে রবীন্দ্র সরোবর বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিল ছায়ানট।
পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানের আগের দিন রাতে অনুমতি দিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ভেন্যু বরাদ্দের কোনো পত্র আসেনি ছায়ানটের কাছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিজয় উৎসবের জন্য আমরা রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চটি বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছিলাম। যথাসময়ে বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।"
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, "অনুষ্ঠান করার জন্য তো অন্তত এক সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হয়। যথাসময়ে বরাদ্দ না পাওয়ায় আমরা ছায়ানট ভবনেই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছি।"
আগের খবর...
'মানব কীভাবে দানব হয়ে ওঠে, নতুন প্রজন্মের জানতে হবে'
বিজয়ের মাসে সামাজিক মাধ্যমে ছায়ানটের আয়োজন 'জাগরণী'
হাজারো কণ্ঠে জাতীয় সংগীতে সোশাল মিডিয়ায় ছায়ানটের যাত্রা
বিজয়ের মাসে 'জাগরণী' নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছে ছায়ানট