“ছয় দশকের বেশি সময়ের পথচলায় ছায়ানট হাজার হাজার গানের সম্ভার গড়ে তুলেছে। সেসব গানের অডিও এবং সাম্প্রতিককালের ভিডিও থেকেই মূলত কন্টেন্টগুলো তৈরি হয়েছে।”
Published : 14 Dec 2024, 02:55 PM
আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর প্রত্যয় নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছে সংস্কৃতি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে প্রতি সকালে একযোগে ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স ও ইউটিউব চ্যানেলে একটি করে কন্টেন্ট প্রকাশ করছে তারা।
এই আয়োজনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাগরণী’। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ উপভোগ করছেন জাগরণীর সুর-বাণী-ছন্দ। বাঙালি হয়ে জেগে থাকার মানসকে উজ্জীবিত রাখতেই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন ছায়ানট সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৮ নভেম্বর ছায়ানট প্রকাশ করে আয়োজনটির একটি প্রমো ভিডিও। এতে বলা হয়, “১৯৭১ থেকেই প্রতিটি ডিসেম্বর বাঙালির অনন্য অহঙ্কার, বিজয়ের মাস। আমরা প্রত্যয়ী হয়ে উঠি সম্পূর্ণ বাঙালি হয়ে, মাথা উঁচু করে বাঁচব।”
“বাঙালির প্রাণ, গণমানুষের গান। বিজয়ের মাসজুড়ে আপন দেশকে পাওয়া আর ভালোবাসার গান দিয়ে প্রাণ জুড়াতে ইউটিউব চ্যানেল, ফেইসবুক পেইজ, ইন্সটাগ্রাম ও এক্স সোশাল মিডিয়ামে আসছে ছায়ানট। ১লা ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টায়। আসুন, দেশের টানে প্রাণের গানে; জেগে উঠি জেগে থাকি।”
প্রমো
ডিসেম্বরের প্রথম দিন জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সোশাল মিডিয়ায় যাত্রা করে সংগঠনটি। সেদিন সকাল ৯টায় প্রথম কন্টেন্ট হিসেবে প্রকাশ করা হয়ে ‘আমার সোনার বাংলা’। এর সঙ্গে গাওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গানটির শেষ তিন স্তবক।
সমমনা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন- নালন্দা, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কণ্ঠশীলন ও ব্রতচারীর সহযোগিতায় হাজারো মানুষ তার দৃশ্যধারণে অংশ নিয়েছেন এবং কণ্ঠ মিলিয়েছেন।
ছায়ানটের নির্বাহী সম্পাদক ডা. সারওয়ার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তিন হাজারের বেশি মানুষ আমরা একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছি।"
ছায়ানট বলেছে, গানটির ভিডিও ধারণ করা হয়েছে ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমির শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধে। অডিও তৈরি করেছে ছায়ানট। চিত্রাঙ্কন করেছে নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশুরা।
এর পরিকল্পনা করেছেন ছায়ানটের যুগ্ম সম্পাদক পার্থ তানভীর নভেদ। নির্মাণ করেছেন আমিনুল ইসলাম ও টুকু মজনিউল। সূচনার অ্যানিমেশন করেছেন সুজন চৌধুরী।
জাতীয় সংগীত
২ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’ শীর্ষক বাংলাদেশের জাতীয়গীতি। গানটির কথা ও সুর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। পরিবেশন করে ছায়ানট ও নৃত্যনন্দন। ২০১৭ সালের বিজয় দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের অনুষ্ঠান থেকে এটি ধারণ করা হয়।
ধনধান্য পুষ্প ভরা
৩ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘চল্ চল্ চল্’ শীর্ষক বাংলাদেশের রণসঙ্গীত। গানটির কথা ও সুর করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। এটি পরিবেশন করেছে ছায়ানট। গানটির ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের বিজয় দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে।
চল্ চল্ চল
৪ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘বাংলা মা'র দুর্নিবার’ শীর্ষক ব্রতচারী গীতনৃত্য। এর কথা ও সুর গুরু সদয় দত্ত। পরিবেশন করেছে ছায়ানট ও ব্রতচারী। এটি ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ধারণকৃত।
বাংলা মা'র দুর্নিবার
৫ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’। গানটির কথা ও সুর: কাজী নজরুল ইসলাম। পরিবেশন করেছে ছায়ানট ও ব্রতচারী। ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এটি ধারণকৃত।
দুর্গম গিরি কান্তার মরু
৬ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘ওরে বিষম দইরার ঢেউ’। এর কথা ও সুর সাধন গুহ। পরিবেশন করে ছায়ানট। ‘বর্ষবরণ ১৪২৪’ এর অনুষ্ঠানে রমনা বটমূল থেকে এটি ধারণকৃত।
ওরে বিষম দইরার ঢেউ
৭ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’। সুভাষ মুখোপাধ্যায় লেখা থেকে সুর করেছেন শেখ লুতফর রহমান। পরিবেশন করেছে ছায়ানট। ‘বর্ষবরণ ১৪২০’ অনুষ্ঠান থেকে এটি ধারণকৃত।
ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
৮ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’। এটি ১৯৭৭ সালের ৩ ডিসেম্বর রচনা করেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে এটি ধারণকৃত।
বাতাসে লাশের গন্ধ
৯ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান’। এর কথা ও সুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরিবেশন করে ছায়ানট। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এটি ধারণকৃত।
সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান
১০ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি’। কথা ও সুর কাজী নজরুল ইসলাম। রায়েরবাজার বধ্যভূমির শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধে ধারণকৃত ভিডিওতে অংশগ্রহণ করেছে নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ্, কণ্ঠশীলন, ব্রতচারী এবং ছায়ানটের শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষক-শিল্পী-সংগঠক। ছায়ানট প্রকাশিত সিডি 'নব যুগ ঐ এল ঐ' ব্যবহার করা হয়েছে অডিওতে।
ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি
১১ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘এই না বাংলাদেশের গান’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রচিত গানটির কথা ও সুর করেছেন মোশাদ আলী। পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার। ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে গানটির ধারণকৃত।
এই না বাংলাদেশের গান
১২ ডিসেম্বর ছায়ানটের সম্ভার থেকে সুরবাণীছন্দের নিয়মিত প্রকাশনায় প্রচার করা হয় ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রচিত গানটির কথা ও সুর আপেল মাহমুদ। পরিবেশন করে ছায়ানট। রমনার বটমূলে ‘বর্ষবরণ ১৪২০’ এর অনুষ্ঠানে এটি ধারণকৃত।
তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর
১৩ ডিসেম্বর প্রচার করা হয় ‘বল বল রে, বল সবে, বল রে বাঙালির জয়’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রচিত গানটির কথা ও সুর: মোশাদ আলী। পরিবেশন করে ছায়ানট। রমনার বটমূলে আয়োজিত ‘বর্ষবরণ ১৪১৯’ এর অনুষ্ঠানে ধারণকৃত।
বল বল রে, বল সবে, বল রে বাঙালির জয়
সবাইকে জেগে ওঠার আহবান জানিয়ে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, "ছায়ানট বিশ্বাস করে, মানবজীবনের সকল আঁধার থেকেই জাগরণের প্রয়োজন। আমরা সৎ- সুন্দর আলোর অভিযাত্রী। সকলকে আহ্বান জানাই-জেগে উঠি জেগে থাকি, দেশে টানে জীবনের টানে, প্রাণের গানে। এই ভাবনা থেকে আয়োজনটির নাম 'জাগরণী'।"
মুক্তির মন্দির সোপান তলে
বাঙালিকে আপন সংস্কৃতি ও দেশীয় বৈশিষ্ট্যে স্বাধীনসত্তায় বিকশিত হতে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে ছায়ানটের জন্ম।
সঙ্গীত-সংস্কৃতি ও সংস্কৃতি-সমন্বিত সাধারণ শিক্ষা নিয়ে কাজ করে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান। সাধনা ও চর্চার যথোচিত প্রসার ও বিকাশের মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে
ছায়ানটের সব কার্যক্রম।
লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ছয় দশকের বেশি সময়ের পথচলায় ছায়ানট হাজার হাজার গানের সম্ভার গড়ে তুলেছে। সেসব গানের অডিও এবং সাম্প্রতিককালের ভিডিও থেকেই মূলত কন্টেন্টগুলো তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে করতেই সব অনুষ্ঠান-আয়োজন ফেইসবুকে লাইভ করতে শুরু করেছে ছায়ানট। লাইভ আয়োজনগুলোও একযোগে প্রচার করা হচ্ছে পরিকল্পিত সকল নতুন মাধ্যমে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের বক্তব্য তাদের উৎসাহিত করেছে বলে তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক লিসা।
আগের খবর...
হাজারো কণ্ঠে জাতীয় সংগীতে সোশাল মিডিয়ায় ছায়ানটের যাত্রা
বিজয়ের মাসে 'জাগরণী' নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছে ছায়ানট