“দামবৃদ্ধির পর মালগুলোর লেবেল তো পাল্টাতে হবে। সে কারণে দেরি হচ্ছে”, বলেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা।
Published : 10 Dec 2024, 11:47 PM
রাজধানীর বাজারে এক-দেড় মাস আগে ভোজ্যতেলের যে সংকট তৈরি হয়, তা সরকারিভাবে দাম বাড়ানোর পরদিনও পুরোপুরি কাটেনি।
ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা বলছেন, দুই-একদিনের মধ্যে নতুন দরের তেল বাজারে আসতে শুরু করলে সংকট কেটে যাবে।
টানা কয়েকদিন ধরে ছোট-বড় সব বাজার থেকে সয়াবিন তেল ‘উধাও হওয়ার’ মধ্যে সোমবার পণ্যটির দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। যুক্তি হিসেবে সামনে আনা হয় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে।
দাম বাড়ানোর পর মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালী ও নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেলের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, তবে আগের অবস্থায় ফেরেনি। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের সরবরাহ তুলনামূলক কম।
মহাখালী কাঁচাবাজারে তেল কিনতে আসা গৃহিণী আসমা বেগম বলেন, “এক লিটারের তেল খুঁজেই পেলাম না। আবার যেগুলো আছে, সেগুলোয় গায়ে পুরনো দাম থাকলেও বিক্রেতারা বেশি টাকা চাচ্ছেন।”
একই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা আল আমিন হোসেন খোলা সয়াবিন তেল কিনছিলেন। তিনি বলেন, “বোতলের তেল পেলাম না দুই দোকান ঘুরে। তাই খোলা সয়াবিন তেল কিনলাম। কিন্তু দাম প্রায় একই।”
সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন তেল বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর সমিতি বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার।
তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারে প্রতি টন তেলের দাম ১২০০ ডলারে উঠেছে। গত এপ্রিলে সরকার যখন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, তখন প্রতি টনের দাম ছিল ১০৩৫ ডলার। এখন আমরা ১১০০ ডলার ধরে লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ঘোষণা অনুযায়ী ৮ টাকা বেড়ে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ঠিক হয়েছে ১৭৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল ও খোলা পাম তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ১৫৭ টাকা; পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাবে ৮৫২ টাকায়।
তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গত এপ্রিলে দাম যখন ১৬৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, তারপর থেকে বিশ্ববাজারে দাম অনেকটাই বেড়েছে।
“কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে এখন একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর সমস্যা হবে না।”
কয়েকদিন ধরে চলা এই সংকটের কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, “সব রকম তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি দেশে যে মজুদ রয়েছে- সন্তোষজনক; মজুদে কোনো ঘাটতি নেই। অন্যদিকে ছোট ছোট জায়গা থেকে শুরু করে সব জায়গায় এক ধরনের মজুদদারি তৎপরতা আমরা দেখতে পেয়েছি।”
মহাখালী কাঁচা বাজারের দোকানি আবদুর রশিদ বলেন, “গতকালের তুলনায় কিছুটা সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু এখন যে তেল আছে, এগুলো পুরনো দামের। দুই একদিনের মধ্যে নতুন মূল্যের সয়াবিন তেল আসবে। তখন সংকট কমে যাবে আশা করি।”
নিকেতন কাঁচাবাজারের বিক্রেতা শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে নতুন দরের তেল আজ পর্যন্ত আসেনি। ফলে সংকট এখনও রয়ে গেছে। তবে এটা থাকবে না। পাইকাররা জানিয়েছে, দুই একদিনের মধ্যেই নতুন মাল ঢুকবে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১০৬ টনের কিছু বেশি, যা আগের বছরের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪ হাজার ১৭ মেট্রিক টন বেশি।
এই সময়ে পরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৭৬ টনের কিছু বেশি, অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৯ মেট্রিক টনের কিছু বেশি।
বড় কোম্পানিগুলোর জন্য বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ পাইকারী ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আমদানিকারক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিল, যেন সরকার দাম বাড়ায়।”
ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে আমদানিকারক ও বিপণনকারী কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাম বাড়ার সঙ্গে সংকটের যোগ আছে, আবার যোগ নেই। দাম বাড়ুক আর যাই বাড়ুক, আমাদের সরবরাহ কিন্তু বেশি ছিল।
“যেহেতু বাজারে একটা ধারণা ছিল যে দাম বাড়বে, মোটামুটি সবাই শিওর ছিল, ডিলার পয়েন্ট বলেন, দোকানদার বলেন, সবাই জানত। ফলে, সবাই ভেবেছে, ‘দুইদিন রেখে দেই, তাহলে লাভ হবে’, যে কারণে সংকট বেড়েছে। এর সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতি ছিল না।”
বাজারে সংকট দুই-একদিনের মধ্যে কেটে যাবে বলে মনে করেন গোলাম মাওলা।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, “যেহেতু দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেই দামবৃদ্ধির মালগুলোর লেবেল তো চেঞ্জ করতে হবে। সে কারণে দেরি হচ্ছে।
“আগের মাল উঠিয়ে নিয়ে যাবে। এরপর নতুন মাল দিবে। গতকাল (সোমবার) বিকালে যেহেতু দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই একদিন সময় লাগবে; সংকট কেটে যাবে।”