অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের ৫৯টি মামলার মধ্যে ৫৮টির অভিযোগপত্রে সাবেক এ চেয়ারম্যানকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
Published : 13 Jun 2023, 12:18 AM
ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে ডুবতে বসা রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলায় শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার ঋণ ও আর্থিক অনিয়মের আলোচিত ঘটনাগুলোতে দায়ের হওয়া ৫৯টি মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুদক; যেগুলোর মধ্যে ৫৮টিতে বাচ্চুকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।
প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে এসব মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকসহ ১৪৭ জনকে আসামি করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৫ সালে ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করা হলেও একটিতেও আব্দুল হাই বাচচুর নাম উল্লেখ করেনি দুদক।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একসময় ভালো অবস্থানে থাকা বেসিক ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের খবর সামনে এলে ব্যাংক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। আব্দুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালে বেনামি ও ভুয়া ঋণ দিয়ে বিপুল এসব অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
সংবাদমাধ্যমে একের পর এক এসব খবর প্রকাশিত হলে দুদক তদন্তে নেমে ঋণ অনিয়মের ঘটনা খুঁজে পায়। পরে এসব ঘটনায় দুই হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৯টি মামলা দায়ের করে। এগুলোতে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঋণ গ্রহিতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়। তবে তখন সাবেক চেয়ারম্যানকে বাদ দেওয়া হয়। যদিও বিভিন্ন সময় তাকে দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এসব মামলায় দুদকের অনুসন্ধানপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়া, ভূয়া মর্টগেজ, সম্পদের অতি মূল্যায়ন ও মর্টগেজবিহীনভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেসিক ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেছেন ও সহায়তা করেছেন।
দুদকের পাঁচজন কর্মকর্তা এসব মামলা অনুসন্ধান করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের এসব ঘটনা ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আব্দুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ঘটেছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর।
জাতীয় পার্টির সাবকে সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে এক সময়ের লাভজনক ব্যাংক বেসিকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।
এরপর থেকে ব্যাংকটির ঢাকার গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখায় বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনার ঘটনা ঘটতে থাকে।
ঋণে অনিয়মের পাশাপাশি ব্যাংকটিতে নিয়োগেও ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগও সেসময় প্রকাশ পায়; ২০২২ সালে জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও তাদের পর্যবেক্ষণে তা তুলে ধরে।
সংবাদ মাধ্যমে এসব ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করলে ২০১৪ সালে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম ও উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোনায়েম খানকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পরির্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে। পরে আব্দুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন বেসিক ব্যাংক থেকে।
তবে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরে তদন্তে নামে দুদক। অনুসন্ধান কাজে তাকে একাধিকবার কমিশনের প্রধান কার্যালয় সেগুন বাগিচায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বেসিক ব্যাংক নিয়ে দুদকের নতুন মামলা, এবারও বাচ্চু বাদ
বেসিকের বাচ্চুকে ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ
নিজেকে দোষী মনে করি না: বেসিকের বাচ্চু
বেসিক ব্যাংক: ৩ মাসে তদন্ত শেষ না করলে ‘ব্যবস্থা নেবে’ হাই কোর্ট
বেসিক ব্যাংকের শনি কাটাতে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বেসিক ব্যাংকের শনি কাটাতে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বেসিক ব্যাংকে নিয়োগেও ছিল অনিয়ম, তদন্তে সংসদীয় কমিটি