রাত ৮টার দিকে স্টেশন ছাড়লেও প্রতিদিন কমলাপুরে গিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান রনি।
Published : 22 Jul 2022, 10:38 PM
রেলের অব্যবস্থাপনা বন্ধের দাবিতে কমলাপুর স্টেশনে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিকে ‘প্রশ্ন করতে’ গিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করা এক ব্যক্তি।
এমএইচ উজ্জ্বল নামে ওই ব্যক্তি নিজেকে ঢাকা সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের ‘পদপ্রার্থী’ হিসেবে পরিচয় দেন।
শুক্রবার বিকালে আন্দোলনের ১৬তম দিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে যান মহিউদ্দিন রনিসহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এদিন তাদের স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি রেলওয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা।
পরে স্টেশনের ফটকে অবস্থান নিলে সেখানে উজ্জ্বল নামে ওই ব্যক্তি এসে রনিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া দিলে নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তায় তিনি সেখান থেকে সরে পড়েন।
এবিষয়ে মহিউদ্দিন রনির দাবি আন্দোলনকে বিতর্কিত করতেই ওই ব্যক্তি এসেছিলেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এটা নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র। তিনি এসে উদ্ভট প্রশ্ন করেছেন। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে পালিয়েছেন।
অপরদিকে এমএইচ উজ্জ্বলের অভিযোগ, “তারা অহেতুকভাবে আমার গায়ে হাত তুলেছে। আমি আসলে তাকে একটা কথাই জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম যে, আপনি টিকেট কেটেছেন ১৩ জুন, তাহলে কেন ৬ জুলাই থেকে আন্দোলন করছেন?
‘‘এই টিকেট ইস্যু নিয়ে ভোক্তা অধিকার পরিষদ তো তার সমাধান করেছে। তারপর কেন আন্দোলন? এটা তো আলটিমেটলি গর্ভমেন্টের বিপক্ষে যাচ্ছে। সরকারের বিপক্ষে কেন সে নাচে, এটা আমার কাছে ঝামেলা মনে হয়েছে।“
প্রশ্ন শিক্ষার্থীরা ‘রেলওয়ের দালাল বলে টর্চারিং’ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “আামি কোনো মতে বেঁচে আসছি।”
রেলে অব্যবস্থাপনা: ৬ দাবিতে রনির পদযাত্রা, স্মারকিলিপি
এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি না জানতে চাইলে উজ্জ্বল বলেন, “আমি এখন অস্বস্তি ফিল করছি। ভেবে চিন্তে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের কর্মী। সবুজবাগ থানার পদপ্রত্যাশী। কিন্তু আমি তার কাছে গিয়েছিলাম একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে।”
রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি।
শুক্রবার বিকালে আগের ঘোষণা অনুযায়ী কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের বাধা ও এমএইচ উজ্জ্বলের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখে পড়েন রনি ও অন্যান্যরা।
এরপর রাত ৮টার দিকে তারা স্টেশন স্থান ত্যাগ করেন। তবে প্রতিদিন কমলাপুর গিয়ে আন্দোলন চালিযে যাবেন বলে জানান রনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রনি বলেন, “ছয় দফা দাবি আদায়ে আমাদের আন্দোলন চলবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় আজকে আমরা চলে এসেছি। কাল বিকেলে আমরা আবার যাব। পাশাপাশি আদালতের মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাব।“
রেলে ‘অব্যবস্থাপনা’: শাহবাগ ছাড়লেন রনিরা, শুক্রবার ফের কমলাপুরে
কমলাপুর রেলস্টেশনের অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে গত মঙ্গলবার রনিসহ একদল শিক্ষার্থী রেলভবন পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে রেলওয়ের মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দেন।
মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু রনি তার কথায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ট্রেনের টিকেট: রনির অভিযোগে সহজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
পরদিন বুধবার রনির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ট্রেনের টিকেট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়।
এদিকে রনির আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে বৃহস্পতিবার শুনানিতে ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহন বন্ধ করতে বলেছে হাই কোর্ট। টিকেট কালোবাজারি বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রেলওয়েকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
রেলে ‘অব্যবস্থাপনা’: ছয় দফায় রনি অনড়
এরপরও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন রনি। একইসঙ্গে দেশে ‘ভুক্তভোগীদের’ রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালনেরও আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর রেলস্টেশনে ঢুকতে না পেরে সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন। শুক্রবার বিকালে ফের কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে রাত নয়টার দিকে তারা শাহবাগ ছাড়েন।