রেলে ‘অব্যবস্থাপনা’: শাহবাগ ছাড়লেন রনিরা, শুক্রবার ফের কমলাপুরে

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা বন্ধে ছয় দফা দাবিতে শুক্রবার ফের কমলাপুর রেলস্টেশন অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ ছেড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিসহ একদল শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2022, 05:50 PM
Updated : 21 July 2022, 06:02 PM

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে  'যানজট ও জনদুর্ভোগের কথা' বিবেচনার কথা জানিয়ে তারা শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন।

তার আগে রনি বলেন, শুক্রবার বিকেলে আবারও কমলাপুর রেলস্টেশনে তাদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে। পাশাপাশি আদালতের মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাবেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রনি বলেন, “শাহবাগে আসার পর অনেক মানুষ জটলা বেঁধে ফেলেছি, সেখানে যানজট ও জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় আপাতত আমরা সেখান থেকে সরে এসেছি। আগামীকাল বিকেলে কমলাপুরে আবারও আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।

“শত বাধা সত্ত্বেও কমলাপুর এবং শাহবাগে আমাদের আজকের অবস্থান কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি। বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের ছয় দফা দাবিতে আজকের কর্মসূচি স্থগিত করছি। আগামীকাল থেকে কমলাপুরেই ৬ দফাসহ আজকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি যথারীতি চলবে।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ‘হামলা’ করেছে অভিযোগ করে রনি বলেন, “মারের বদলে হাতে মার না দিয়ে ওদেরকে এবার কাগজে কলমে মার দেওয়া হবে। মহামান্য হাই কোর্টে ওদের সাথে কথা হবে।”

দাবি আদায়ে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের ‘আশ্বাস না পাওয়ায়’ বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন রনি। একইসঙ্গে সারাদেশে ‘ভুক্তভোগীদের’ রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালনেরও আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তার এ অবস্থানের কথা তুলে ধরার সময় বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর রনি ও তার সঙ্গীরা রেলস্টেশনের ভেতরে ঢুকতে গেলে রেল পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তাদের বাধা দেন। কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কির পর তারা বাধা পেরিয়ে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সামনে চলে যান।

প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের জায়গা থেকে কিছুটা সামনে মেঝেতে বসে তারা রেলওয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সন্ধ্যায় তারা শাহবাগ মোড়ে চলে আসেন, অবস্থান নেন সড়কের পাশে।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি মাজহারুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কোনো বাধা দেয়নি, ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটেনি।”

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

মঙ্গলবার দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে রেলভবন পর্যন্ত পদযাত্রা করে রেলওয়ের মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দেন রনিসহ একদল শিক্ষার্থী।

রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার সেদিন রনির দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু রনি মহাপরিচালকের কথায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

রনির আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে বৃহস্পতিবার শুনানিতে ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহন বন্ধ করতে বলেছে হাই কোর্ট। টিকেট কালোবাজারি বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রেলওয়েকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শুনানি করে এই মৌখিক আদেশ দেয়।

রনির ভাষ্য, ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেন তিনি। তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলেও ট্রেনের কোনো আসন তিনি পাননি।

পরে কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়৷

কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রনির।

তিনি বলছেন, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জবাব বা শুনানির জন্য ডাক না পেয়ে ৭ জুলাই থেকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন।

এরপর বুধবার রনির অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করে ট্রেনের টিকেট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দুই লাখ টাকা জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়।