একইসঙ্গে সারাদেশে ‘ভুক্তভোগীদের’ রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তার এ অবস্থানের কথা তুলে ধরার সময় বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, “আমি ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, উনারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো আশ্বাস আমাকে ভালোভাবে দিতে পারেননি। আমি শুধু একটা আশ্বাস চেয়েছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটাতে হস্তক্ষেপ করুক।
“তারা প্রধানমন্ত্রীকে জানাচ্ছে না, যদি জানে তাদের দুর্নীতির খবর, তাদের গোপন তথ্য বেরিয়ে আসলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যেহেতু তারা কিছুই করতে পারেনি, আগামীকালকের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা স্টেশনে সর্বসাধারণ দাঁড়িয়ে যাবেন। ছয় দফা আমার একার নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষের। যেখানে যেই ভুক্তভোগী আছেন, আপনার সেখানে অপ্রতিরোধ্য দুর্গ গড়ে তুলুন।”
রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।
মঙ্গলবার দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে রেলভবন পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে রেলওয়ের মহাপরিচালককে বরাবর স্মারকলিপি দেন রনিসহ একদল শিক্ষার্থী।
রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার রনির দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু রনি মহাপরিচালকের কথায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
পরদিন বুধবার মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ট্রেনের টিকেট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দুই লাখ টাকা জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলন করেন মহিউদ্দিন রনি বলেন, “ভোক্তা অধিকার প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে অন্যায় দমন করা পসিবল। ভোক্তা অধিকারের ২৫ শতাংশ তথা ৫০ হাজার টাকার জন্য মহিউদ্দিন রনি থেমে যাবে না। আমার দাবি ছয় দফা। ভোক্তা অধিকারে আমার একটা অভিযোগের রায় হয়েছে, কিন্তু আমি চাই এর স্থায়ী সমাধান।
“আমি রায় পেয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ যাতে সুবিচার পায়, এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে চাই। …মহামান্য হাইকোর্ট যেহেতু ডেকেছে আমি যাব। কোর্টের নির্দেশনা ছয় দফার একটা। আমাকে ডেকেছে, কিন্তু আমার কাছে ফরমালি কোনো কিছু আসেনি। আমি কার কাছে যাব? কোনো মাধ্যমে আমাকে তো জানাতে হবে। যার কারণে আমি যেতে পারছি না।”
রনির ছয় দফা: >> টিকেট ব্যবস্থাপনায় সহজ ডটকমের হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। >> যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে। >> অনলাইনে কোটায় টিকেট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে অনলাইন-অফলাইনে টিকেট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। >> যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। >> ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। >> ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। |
রনির আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে বৃহস্পতিবার শুনানিতে ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহন বন্ধ করতে বলেছে হাই কোর্ট। টিকেট কালোবাজারি বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রেলওয়েকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শুনানি করে এই মৌখিক আদেশ দেয়।
রনির ভাষ্য, ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেন তিনি। তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলেও ট্রেনের কোনো আসন তিনি পাননি।
পরে কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়৷
কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রনির।
তিনি বলছেন, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জবাব বা শুনানির জন্য ডাক আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে ৭ জুলাই থেকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন।
পরে পুলিশ বাধা দিলে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী তার সঙ্গে কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে রনি একাই এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এক পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে রনির দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, জামালপুর ও নোয়াখালীতেও রনির দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রেল স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা ও বিভিন্ন সংগঠন।
রাজশাহী যাওয়ার টিকেট না পেয়ে একদল শিক্ষার্থী বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে রেললাইন অবরোধ করলে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ঢাকা থেকে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।