রেলে অব্যবস্থাপনা: ৬ দাবিতে রনির পদযাত্রা, স্মারকিলিপি

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা বন্ধে ছয় দফা দাবিতে পদযাত্রা করে মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দিলেন ১৩ দিন ধরে কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2022, 02:17 PM
Updated : 19 July 2022, 02:17 PM

দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে রেলভবন পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন রনি। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে রনির বন্ধু-বান্ধবসহ একদল শিক্ষার্থীকেও অংশ নিতে দেখা যায়। তাদের ব্যানারে এ কর্মসূচিকে ‘লং মার্চ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

দুপুর আড়াইটার দিকে তারা সচিবালয়ের পাশে ১৬ আব্দুল গণি রোডের রেলভবনে গেলে নিরাপত্তা কর্মীরা ভবনের প্রধান ফটক আটকে দেন। তাদের পক্ষ থেকে একজনকে ভেতরে যাওয়ার কথা বলা হয়।

আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ফটকের সামনে অবস্থান করার পর তাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। সেখানে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার এসে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

সংবাদমাধ্যমের সামনে স্মারকলিপি পড়ে ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, “মহিউদ্দিন রনির ছয় দফা পড়লাম। ভালোই লিখেছে সে। মহিউদ্দিনের সঙ্গে আমরা একমত।

“আমাদের যে দুর্বল দিকগুলো আছে, সেগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে সমাধানের চেষ্টা করছি। যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে এবং সুন্দরভাবে যাতায়াত করতে পারে।”

রেলওয়ের নিজস্ব আইটি সেন্টার না থাকা যে ‘দুর্বলতা’, তা মেনে নিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “প্রতিদিন ঢাকা থেকে ২৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার টিকেট বিক্রি হয়। দেখা গেল- কোনো সময় ৩ লাখ, চার লাখ এমনকি ১০ লাখও টিকেট চায়, এতগুলো কিন্তু দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। এগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে সমাধান করার চেষ্টা করছি।”

এ সময় ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার রনির দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু রনি মহাপরিচালকের কথায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময়ের দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা না এলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন এ শিক্ষার্থী।

রনি রেলভবনের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১৩ দিন ধরে ছয় দফা দাবিতে আমি কমলাপুর রেল স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছি। তারা বলেছেন, ফর্মাল প্রসেসে আসতে। ফর্মাল প্রসেসে আজকে আমি স্মারকলিপি দিয়েছি।

“যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমার দাবি বাস্তবায়ন করার আশ্বাস না দেওয়া হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো আশ্বাস না দেন, যদি তারা আমাদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ আমার সঙ্গে আছে। তাদের শক্তি নিয়ে বলছি, সারাদেশে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে।”

তার স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ই-সেবা চালু হওয়ার পর থেকে দেখা যায় ‘রেলওয়ের কর্মচারীদের সহযোগিতায়’ কিছু দালাল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট কিনে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে থাকে; যার ফলে জনগণকে টিকেট সংগ্রহ করতে ব্যাপক দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হতে হয়।

“বর্তমানে ট্রেনের টিকেটের বিপুল চাহিদা থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে অধিকাংশ মানুষই অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে দেখা যায় অনলাইনে টিকেট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকেট শেষ হয়ে যায়।

“ফলে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় নতুবা কালোবাজারিদের কাছ থেকে অধিক মূল্যে টিকেট ক্রয় করতে বাধ্য হয়। যে সকল যাত্রী উভয়ই করতে অক্ষম হয়, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিনা টিকেটে ট্রেনের ছাদে উঠে গমন করতে হয়। ক্রমান্বয়ে সমস্যাটি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।”

এসব সমস্যার সমাধানে রনির স্মারকলিপিতে ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়।

>> টিকেট ব্যবস্থাপনায় সহজ ডটকমের হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

>> যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।

>> অনলাইনে কোটায় টিকেট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে অনলাইন-অফলাইনে টিকেট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

>> যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

>> ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

>> ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

তার ভাষ্য, ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেন তিনি। তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলেও ট্রেনের কোনো আসন তিনি পাননি।

পরে কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়৷

কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রনির।

তিনি বলছেন, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জবাব বা শুনানির জন্য ডাক আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে ৭ জুলাই থেকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন।

পরে পুলিশ বাধা দিলে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী তার সঙ্গে কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে রনি একাই এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

একপর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে রনির দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, জামালপুর ও নোয়াখালীতে রনির দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রেল স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা ও বিভিন্ন সংগঠন।