ট্রেনের টিকেট: রনির অভিযোগে সহজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা

রেলের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ট্রেনের টিকেট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2022, 10:08 AM
Updated : 20 July 2022, 10:50 AM

বুধবার অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দুই পক্ষের শুনানি শেষে মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে এসে এ সিদ্ধান্ত দেন।

তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হওয়ায় সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

তবে সহজ ডটকম যে সিস্টেমে অপারেট করে, তা কতটা স্বচ্ছ, সেখানে টিকিট কালোবাজারি হচ্ছে কিনা, তা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করার কথা বলেছেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিক আশ্বস্ত হতে পারবেন যে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের অধিকার রক্ষা করবেই।”

অন্যদিকে সহজ ডটমকের আইনজীবী মির্জা রাগীব হাসনাত বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন, এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

তার ভাষ্য, ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করেন তিনি। তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলেও ট্রেনের কোনো আসন তিনি পাননি।

পরে কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়৷

কিন্তু তখনই তার বুকিং করা ৬৮০ টাকার আসনটি স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর আরেক যাত্রীর কাছে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রনির।

তিনি বলছেন, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ৭ জুলাই কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন।

মঙ্গলবার তিনি পদযাত্রা করে রেলের মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দেন এবং দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষকে বেঁধে দেন ৪৮ ঘণ্টা সময়।

রনির অভিযোগের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর বুধবার শুনানির আয়োজন করে। রায়ে সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

রনির আন্দোলন ‘জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে’ মন্তব্য করে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “তার এই অভিযোগ এবং দৃঢ় আন্দোলন ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে সকলের চোখ খুলে দিয়েছে। ভোক্তার হয়রানি দ্রুত নিরসন করতে হবে।”

কীসের ভিত্তিতে অভিযোগের প্রমাণ হল- এমন প্রশ্নের জবাবে ভোক্তা অধিকারের এই কর্মকর্তা বলেন, “রনি টিকিটের জন্য পেমেন্ট করেও টিকিট পায়নি। এবং সে এর মধ্যে বসে না থেকে তাদের অফিসে গিয়েছে এবং সেখানে যাওয়ার পর সহজের কর্মকর্তা তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তার বুক করা সিটই অন্য কারো কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। একজন ভোক্তা হিসেবে তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।”

তবে রনির ছয় দফা দাবির বিষয়টি বাংলাদেশ রেলওয়েকে আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে মন্তব্য করে সফিকুজ্জামান বলেন, “তার ছয় দফা দাবির ব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সেগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে “

এই রায় পাওয়ার পরও রনি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি আমার আন্দোলন এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেতে চাই। আমার আর কারো ওপর কোনো ভরসা নেই।”

রেলওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে শুধু সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ- এমন প্রশ্নের জবাবে রনি বলেন, “আমি আমার অভিযোগ নিয়ে যখন রেলওয়ের কাছে গিয়েছি, তারা আমাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে অনলাইন টিকিট কোন সিস্টেমে বিক্রি হয়, কাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে। অনলাইন টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে সহজের হাতেই নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাই আমার অভিযোগ সহজের বিরুদ্ধেই ছিল।”

তবে সহজের আইনজীবী মির্জা রাগীব হাসনাত শুনানি শেষে বলেন, “এখানে তিনটা এনটিটি আছে। সহজ, ভিনসেন্ট এবং সিনেসিস। তিনজন মিলেই ওয়েবসাইট অপারেট করে। ১৫ মিনিটের মধ্যে পেমেন্ট না করতে পারলে সেক্ষেত্রে ট্রেনের সিট ক্যানসেল হয়ে যাবে। অভিযোগকারী সেটি পারেননি। তাকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।”

আর সেই টিকেট বিক্রির ব্যাখ্যায় এই আইনজীবী বলেন, “তার চারটা টিকেটের মধ্যে একটা বিক্রি করা হয়েছে রেলওয়ের কাউন্টার থেকে। কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হয়ে গেলে সহজের কিছু করার থাকে না।”