ভোটের আগে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন পক্ষ যাতে অবাধে ‘গণতান্ত্রিক চর্চায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়’, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
Published : 17 Oct 2023, 09:29 PM
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে নাগরিক সমাজসহ সব পক্ষের অবাধ সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার।
বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন।
আগের দিন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে আখতার বলেন, “আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কেবল ভোটের দিনের বিষয় নয়।
“বরং এর মানে হচ্ছে, ভোটের আগের এই মাসগুলোতে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন পক্ষ যাতে অবাধে গণতান্ত্রিক চর্চায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।”
দুদিনের সফরে সোমবার ঢাকায় এসে দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন আরফিন আখতার।
এরপর সন্ধ্যায় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দুদিনের সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বিস্তৃত ও বহুমুখী সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
“এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, আমাদের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদারত্ব, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং অন্যান্য অনেক বিষয়।
বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেই লক্ষ্য অর্জনে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশ সরব অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় ওয়াশিংটন। আর তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন ভিসানীতি চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাধাদানকারীদের’ বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
ভোট সামনে রেখে নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে গত ৮-১২ অক্টোবর ঢাকা সফর করে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নাগরিক সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি মিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গত রোববার পাঁচ দফা সুপারিশ সম্বলিত একটি বিবৃতি দেয় প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। বক্তৃতা-বিবৃতির ব্যাপারে ‘সহনশীল’ হয়ে প্রধান নির্বাচনী বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপের কথাও রয়েছে সেখানে।
বাকি সুপারিশগুলো হল- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করে ভিন্নমতকে সম্মান জানানোর মত নাগরিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। সংঘাতহীন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা। স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা এবং অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে সব দল অংশ নিতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করা। নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো।
পুরনো খবর
‘অর্থবহ সংলাপের’ সুপারিশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারও ‘একমত’
অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনায় ঢাকা-ওয়াশিংটন
‘অর্থবহ সংলাপের’ সুপারিশ মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের