আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশ নিয়ে তাদের কোনো ‘আপত্তি নেই’।
Published : 15 Oct 2023, 12:58 PM
বিএনপি যদি কোনো শর্ত ছাড়া সংলাপ করতে চায়, আওয়ামী লীগ তখন ‘ভেবে দেখবে’ বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সচিবালয়ে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, “সংলাপের চিন্তা আমরা করব তখন যখন তারা (বিএনপি) এই চারটি শর্ত যদি তারা প্রত্যাহার করে নেয়। শর্তযুক্ত কোনো সংলাপের ব্যাপারে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই।
“শর্ত তারা প্রত্যাহার করলে তখন দেখা যাবে। অন্য বিষয় (মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের) নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, ওগুলো নিয়ে আমরা সবাই একমত।”
বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল।
ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এর ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটি গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে। পাঁচ দিনের মিশনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন পক্ষ এবং অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে ভোটের আগের পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনদের কাছে পাঁচটি সুপারিশ রেখেছে ওই পর্যবেক্ষক দল।
এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট করেই বলেন, কোনো শর্ত দিলে বিএনপির সঙ্গে তারা সংলাপে বসবেন না।
আর বিএনপি নিঃশর্ত সংলাপ করতে চাইলে আওয়ামী লীগ রাজি হবে কিনা, এ প্রশ্নে কাদের বলেন, “তখন চিন্তা করে দেখব।”
মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের বিষয়ে এক প্রশ্নে সেতুমন্ত্রী বলেন, “তারাতো আমাদের সাথে কথা বলে গেছে। ডিটেইল আলোচনা হয়েছিল। মোটামুটি ইলেকশন রিলেটেড যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমাদের সাথে ইলেকশন ফ্রি, ফেয়ার করা, সে অবস্থানে তো আমরা আছি এবং আমরা সেটি বলেছি।”
তবে সংলাপ নিয়ে তখন সুনির্দিষ্ট করে আলোচনা হয়নি জানিয়ে কাদের বলেন, “সংলাপ নিয়ে স্পেসিফিক কোনো আলোচনা তারা করেনি। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছি। সাংবাদিকরা প্রশ্নও করেছে। সংলাপ সম্পর্কে কোনো বিষয় বলেনি। এখন যদি তারা মনে করেন, এটা তাদের ব্যাপার, তারা বলতে পারেন।
“মূলত সমস্যা হল, আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের যে বিষয়টা,… সেখানে কনফ্লিক্টের কারণ সরকার না। বিএনপি বলছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়, সংসদ ডিজলভ করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায়। আমরা তো এই শর্তযুক্ত সংলাপে রাজি হব না।
কাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে তারা কার সাথে আলোচনা করবে? রাষ্ট্রপতি আলোচনা করতে চেয়েছেন, তারা (বিএনপি) রিজেক্ট করেছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরপর দুইবার আলোচনার প্রস্তাব তারা খারিজ করে দিয়েছে।
“বিএনপির আজকে শর্তবিহীন সেই সংলাপের ব্যাপারে কোনো চিন্তাভাবনাই আমি দেখছি না। সংবিধানে সব আছে। সেখানে নির্বাচনের যে বিধিবিধান আছে, সেগুলো মেনেই আমরা নির্বাচন করব। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় আমরা সেভাবেই নির্বাচন করব।”
আপসহীন রাজনৈতিক মতাদর্শকে গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আপসহীনতা তো এখানে, তারা তো শর্ত দিচ্ছে, আমরা তো শর্ত দিচ্ছি না। আপসহীন তো তারাই (বিএনপি)।
“নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে এ ব্যাপারে আমাদের অঙ্গীকার জাতির কাছে আছে। সেটা আমরা বলেছি। তাদের কাছে আমরা অঙ্গীকার করব? হু আর দে (যুক্তরাষ্ট্র)? তারা আসছে, বন্ধু হিসেবে কথা বলেছে, আমরা তাদের সাথে মতবিনিময় করেছি। তাদের কথামত আমাদের ইলেকশন করতে হবে?
“আমাদের নিজেদের নিয়ম আছে, বিধিবিধান আছে, আমার ইলেকশন আমি করব। বন্ধু দেশ হিসেবে তাদের দেখার ব্যাপার আছে যে ইলেকশন, গণতন্ত্র সঠিকমত চলছে কিনা, পর্যবেক্ষণ তারা করতে চাইলে করুক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারো শর্তে আমরা ইলেকশন করব না। সুষ্ঠু নির্বাচন করছি কিনা তারা দেখবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘তলে তলে আপস’ হয়ে গেছে বলে যে মন্তব্য গত সপ্তাহে করেছিলেন, সে বিষয়েও তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
সেই আপস কীভাবে হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বন্ধুত্বে কূটনীতিক বিষয় সব কথা শেয়ার হতে হয় না। ডেপ্লোম্যাটিক বিষয় সব সময় সব কিছু সোচ্চার কণ্ঠে আলোচনা হয় না। অনেক সমঝোতা ভেতরেও হয়। তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান আছে। সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়াস অব্যাহত আছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের কোনো ‘আপস হয়নি’ বলে যে মন্তব্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম করেছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, “বিএপির মহাসচিব কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি? উনি বলেলেই কী?”