বাংলাদেশ সরকারও মার্কিন প্রতিনিধিদলের অবস্থানকে সমর্থন করে? মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “নির্বাচনের বিষয়টা যেহেতু অনেকখানি নির্বাচন কমিশনের, তারাই এটা দেখবে।”
Published : 16 Oct 2023, 10:32 PM
আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্তভাবে’ আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপের যে সুপারিশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশন করেছে, দেশটির সরকারও তাতে সহমত প্রকাশ করেছে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারের সঙ্গে বৈঠকে এমন বক্তব্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তার সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “উনারা শুধু বলেছেন, এনডিআই-আইআরআই যে সুপারিশগুলো করেছে, এটাতে উনাদের এনডোর্সমেন্ট আছে, অনেকটা অ্যালাইনমেন্ট আছে।”
তবে, ওই সুপারিশগুলোর ব্যাপারে সরকার কী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বা নিতে হবে, সে ব্যাপারে বৈঠকে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সফর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপসহ পাঁচ দফা সুপারিশ সম্বলিত একটি বিবৃতি দেয় ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল।
ওই বিবৃতি প্রকাশের পরদিন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আফরিন আক্তারের বৈঠকে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন আয়োজন এবং ওই প্রতিনিধিদলের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়।
এনডিআই-আইআরআইয়ের সুপারিশের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, “তারা যে সুপারিশগুলো দিয়েছেন, সে ব্যাপারে মার্কিন অবস্থানও অনেকটা একই রকম।
“এবং তারা যেটা চাচ্ছে, যে আগামী নির্বাচনটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হোক। এবং সেটা যাতে সংঘাতমুক্ত হয়। এ ব্যাপারে তাদের যে অবস্থান আছে, সেটাই পুনর্ব্যক্ত করেছে।”
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের যে প্রতিশ্রুতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন প্রতিনিধিদলকে দেওয়া হয়েছে, তা বৈঠকে পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু আমাদের বলার ছিল না। আমরা শুধু বলেছি যে, যদি এনডিআই- আইআরআই তাদের পর্যবেক্ষক পাঠায়, তাহলে ইলেকশন কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যতটুকু করার আছে ফেসিলিটেশনের, আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”
বাংলাদেশ সরকারও যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিনিধিদলের অবস্থানকে সমর্থন করছে কি-না, এমন প্রশ্নে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আমরা এখনও অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া দিইনি। আর তাছাড়া, নির্বাচনের বিষয়টা যেহেতু অনেকখানি নির্বাচন কমিশনের, তারাই এটা দেখবে। সুতরাং তারাও এটা দেখেছে, তাদের নজরেও আনা হয়েছে নিশ্চয়ই।
“প্লাস এটা বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টির নজরেও নিশ্চয়ই এসেছে। সুতরাং তারা তাদের কাজগুলো করবে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এটা দেখছি এখন, সেই রকম এই মুহূর্তে এটার ব্যাপারে মন্তব্য নেই।“
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশ সরব অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় ওয়াশিংটন। আর তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন ভিসানীতি চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাধাদানকারীদের’ বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
ভোট সামনে রেখে নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে গত ৮-১২ অক্টোবর ঢাকা সফর করে আইআরআই-এনডিআই প্রাক-নির্বাচনী মিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নাগরিক সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি মিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
বক্তৃতা-বিবৃতির ব্যাপারে ‘সহনশীল’ হয়ে প্রধান নির্বাচনী বিষয়গুলো নিয়ে সংলাপ ছাড়াও আরও চারটি সুপারিশ রয়েছে সেখানে।
সেগুলো হল- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করে ভিন্নমতকে সম্মান জানানোর মত নাগরিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। সংঘাতহীন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা। স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা এবং অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে সব দল অংশ নিতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করা। নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ
র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের যে প্রচেষ্টা, সেটা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট আছে, সেখানে প্রতিবেদন ইতোমধ্যে জমা দিয়েছি আমাদের ল’ ফার্মের মাধ্যমে।
“এবং আশা করছি যে, যত দ্রুত সম্ভব, নিষেধাজ্ঞাগুলো, বিশেষ করে যে ব্যক্তিদের বিষয়ে যেগুলো আছে… এমনি রিফর্মের যে ইস্যু সেগুলোতো সময় লাগবে। কিন্তু যদি কেইস বাই কেইস বেসিসে তুলে নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি, এবং এটা, সংঘাতমুক্ত নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে হয়ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।
এর আগে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথা বলত ঢাকা, এবার ব্যক্তি বিশেষের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন করা হয় মাসুদ বিন মোমেনকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “র্যাবের ব্যাপারে ওদের যে লিগ্যাল প্রসেস, সেটা অনুসরণ করেই আমরা আগাচ্ছি। তো, সেখানে যদি তাদের কোনো সুযোগ থাকে, যদি বলে সংস্থার জন্য আমাদের এই সংস্কারগুলো দরকার, সেটার জন্য সময় লাগবে, সেজন্য দেরি হবে।
“সেজন্য আমরা বলেছি যেটা আগে হয়। যদি মনে করা হয় যে, ব্যক্তির উপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে সেটা হয়ত সহজতর হবে, হয়ত সংস্থা পরে লাগবে, অথবা সংস্থার উপর থেকে তুলে নিয়ে ব্যক্তিরটা আমরা পরে ডিল করব। যেটা আগে আসে, আমরা দুইটাই সেভাবে বলেছি আর কি।”